সনিকা মৃত্যু তদন্ত : রাতভর জেরা বিক্রমকে, পুলিশকে কী জানালেন তিনি?
থানায় হাজির বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। রাত পৌনে দশটা থেকে সওয়া একটা পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরা বিক্রমকে। মডেল সনিকার মৃত্যু জটিল ধাঁধা কাটাতে পুলিশের প্রশ্নবাণ উড়ে এল বিক্রমের দিকে।
সনিকা মৃত্যু তদন্ত এখনও জটিল। গোটা টলিউড দু'ভাগ। পার্টির রাতে কী ঘটেছিল, কী কারণে দুর্ঘটনা তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছেই। এর মধ্যেই টানটান এই নাটকের উত্তেজনা বাড়িয়ে থানায় হাজির বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার রাত পৌনে দশটা থেকে সওয়া একটা পর্যন্ত দীর্ঘ জেরা বিক্রমকে। মডেল সনিকার মৃত্যু নিয়ে জটিল ধাঁধা কাটাতে পুলিশের প্রশ্নবাণ উড়ে এল বিক্রমের দিকে। কোনও প্রশ্নের উত্তর দিলেন। কোনও প্রশ্ন এড়ালেন বিক্রম।
রাসবিহারীতে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সনিকা সিং চৌহানের। গুরুতর আহত হন বিক্রমও। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগেই পুলিশ তাঁকে সমন ধরিয়ে জানায়, সাতদিনের মধ্যে হাজিরা দিতে হবে। সেইমতো বুধবার ছিল সাতদিনের সময়সীমার শেষ। তার আগে মঙ্গড়বার রাতেই তিনি হাজির টালিগঞ্জ থানায়। সঙ্গে বাবা। পুলিশের মুখোমুখি অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।
২৯ এপ্রিল দুর্ঘটনার রাত। সেদিন কী ঘটেছিল? কী করে এই দুর্ঘটনা? প্রথম প্রশ্ন ছিল পুলিশের। বিক্রম বিস্তারিত জানান ওই রাতের কথা। জানান, ট্রাম লাইনে চাকা পিছলে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে। স্কিড করেই নিয়ন্ত্রণ হারায় গাড়ি। তারপর ডিভাইডারে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। গাড়ির ব্রেক কী ফেল করেছিল? বিক্রম বলেন, গাড়ির ব্রেক ফেল করেনি।
গাড়ির গতি কি অত্যন্ত বেশি ছিল? কত ছিল গাড়ির গতি? বিক্রম জানান, একশোর কম ছিল গাড়ির গতি। এরপরই উড়ে আসে সেই প্রশ্নটাই। রাতের পার্টিতে কি মদ্যপান করেছিলেন বিক্রম? মদ্যপ থাকার কারণেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা? বিক্রম প্রশ্নটির উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। এরপর ঘুরে ফিরে আসে এই প্রশ্নটাই। যথাযথ উত্তর মেলেনি বিক্রমের কাছ থেকে।
এরপরের প্রশ্ন ছিল- দুর্ঘটনার পর কাদের ফোন করেন বিক্রম? বিক্রম জানান, তিনি পার্টিতে থাকা বন্ধুদের ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। তাড়াতাড়ি চলে আয়। সনিকার পরিবারের কাউকে কি ফোন করেছিলেন বিক্রম? উত্তরে বিক্রম জানান, বন্ধুদের ফোন করেই তিনি সনিকাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
কেন তিনি পাঁচ কিমি দূরের একটি হাসপাতালে গেলেন? কেন কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে গেলেন না তিনি? উত্তর দেননি বিক্রম। সেইসঙ্গে পুলিশ জানতে চায় কেন এক গাড়িতে তারা ফিরছিলেন? পুলিশ জানতে পেরেছে, ওইদিন বিক্রম-সনিকার সঙ্গে গাড়িতে তাঁদের এক বন্ধুও ছিলেন। তাঁকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সনিকাকে বাড়ি পৌঁছতে যাচ্ছিলেন বিক্রম। কিন্তু তাঁদের আর সনিকার বাড়িতে পৌঁছনো হয়নি। তার আগেই দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে সনিকার প্রাণ।
এখন পুলিশ জানার চেষ্টা চালাচ্ছে- কে সত্যি বলছে? ঘটনার রাতে বিক্রম সত্যিই মদ্যপ ছিলেন কি না? এখনও কেন ব্লাড স্যাম্পেল রিপোর্টের বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে নাষ ফরেনসিক রিপোর্টই বা কেন এল না এখনও? দুর্ঘটনা রাতে চিকিৎসকরা বিক্রমকে ছেড়ে দেওয়ার পর কেন তিনি ফের হাসপাতালে ভর্তি হন, তাও বড় প্রশ্ন পুলিশের কাছে। বারের সিসিটিভি ফুটেজও স্পষ্ট করছে না পুলিশ। বারে বিক্রমকে মদ্যপান করতে দেখেছিলেন সনিকার অনেক বান্ধবীই। তাঁরা 'জাস্টিস অফ সনিকা' নামে ফেসবুক পেজ খুলে প্রতিবাদে সামিল। উল্টোদিকে টলিউডের একাংশ বিক্রমের হয়েও আওয়াজ তুলেছেন- কোনও দোষ ছিল না বিক্রমের।