এক মৃত্যু, তিনজনের নবজীবন লাভ, আবার মানবতার নজির গড়ল কলকাতা
একটা মৃত্যু। তিনজনের নবজীবন। আবারও মানবতার অনন্য নজির শহর কলকাতায়। শোভনা সরকার, সমর চক্রবর্তীর পর স্বর্ণেন্দু রায়।মাত্র ১৮ বছরেই মর্মান্তিক ব্রেন ডেথ হয় বসিরহাটের স্বর্ণেন্দুর।
কলকাতা, ৪ নভেম্বর : একটা মৃত্যু। তিনজনের নবজীবন। আবারও মানবতার অনন্য নজির শহর কলকাতায়। শোভনা সরকার, সমর চক্রবর্তীর পর স্বর্ণেন্দু রায়।মাত্র ১৮ বছরেই মর্মান্তিক ব্রেন ডেথ হয় বসিরহাটের স্বর্ণেন্দুর। কিন্তু স্বর্ণেন্দুর দেহ বিলুপ্ত হলেও, তাঁর পরিবারের মানবিক সিদ্ধান্তে তিনি বেঁচে থাকবেন তিনজনের শরীরে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তিন-তিনটি সফল অস্ত্রোপচার হল কলকাতার দুই হাসপাতালে। স্বর্ণেন্দুর অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নবজীবন পেলেন সংযুক্তা মণ্ডল, রুবী সর্দার ও নিলোফার আড়া।
Read Also: কাঁটা বিছিয়েছে ঘূর্ণাবর্ত, অক্টোবরেও দেখা নেই শীতের
গ্রিন করিডরে দিয়ে অ্যাপোলো থেকে এসএসসকেএমে লিভার এল ১০ মিনিটে, আর কিডনি আসতে সময় লাগল ১৪ মিনিট। বৃহস্পতিবার ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয় স্বর্ণেন্দুর। তারপরই স্বর্ণেন্দুর পরিবার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করে। সেই ইচ্ছামতো রাতেই শুরু হয় অঙ্গ প্রতিস্থাপন। অ্যাপোলো-তে নিলোফার আড়ার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। ভোর চারটে পর্যন্ত চলে অস্ত্রোপচার। ডা. গোপাল কৃষ্ণ ঢালি ও ডা. রাজেন পাণ্ডের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড এই অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অঙ্গ প্রতিস্থাপন সফল। তবে রোগীর শরীর কতখানি মানিয়ে নিতে পারে ওই নতুন অঙ্গের সঙ্গে তার উপর নির্ভর করবে সবকিছুই। এদিকে ভোর পৌনে তিনটে নাগাদ মাত্র ১০ মিনটের যাত্রায় গ্রিন করিডর দিয়ে এসএসকেএমে পৌঁছয় লিভার। সাড়ে তিনটে নাগাদ ডা. অভিজিৎ চৌধুরীর নেতৃত্বে শুরু হয় সংযুক্তা মণ্ডলের শরীরে লিভার প্রতিস্থাপন। সাড়ে ছ'ঘণ্টা এই অস্ত্রোপচার চলে।
নিরুপদ্রবেই এই অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মত। এবার ভবিষ্যৎই বলবে কতখানি সফল হলেন তাঁরা। সংযুক্তা দেবী এসএসকেএম হাসপাতালের অধীনে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর লিভারের কর্মক্ষমতা ছিল না। লিভার প্রতিস্থাপন করা ছাড়া বিকল্প কোনও পথ ছিল না চিকিৎসকদের কাছে। হঠাৎই স্বর্ণেন্দু রায়ের পরিবারের মানবিক ইচ্ছায় জোগাড় হয়ে যায় লিভার। সংযুক্তদেবীর স্বামী জানিয়েছেন, 'আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।
যে পরিবার অঙ্গদান করেছে, তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। ওঁদের ছেলে আমার স্ত্রী-র মধ্যে বেঁচে থাকবেন। আজ আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।' রুবী সর্দার নামে অন্য এক রোগীর শরীরে অন্য কিডনিটি প্রতিস্থাপন হয়েছে এসএসকেএমে। স্বর্ণেন্দুর চোখ দু'টি দান করা হয়েছে দিশা আই হসপিটালে। এদিকে এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত অতীতে চারটি ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছে এই হাসপাতালে। ফলাফল ২-২। অর্থাৎ দু'টি ক্ষেত্রে তারা সফল, অন্য দুইবার চিকিৎসকদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এবার সাফল্যের দুই অস্ত্রোপচারকে অনুসরণ করে এগনো হয়েছে। চিকিৎসকদের বিশ্বাস এবারও তারা সফল হবেন। স্বর্ণেন্দুর বাবা বলেন, 'আমাদের ছেলে তো চলেই গেল, তাঁর অঙ্গ দিয়ে যদি অন্য কেউ জীবন পায়, তার থেকে আর ভালো কিছু হতে পারে না। আমাদের ছেলে তাঁদের মধ্যেই বেঁচে থাকবে।'