৮ বছর পর ‘কমিশনগেট’-এর কালি ছিটল অভিষেকের গায়ে, পিছনে কারসাজি কার
গুরুকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়ে তিনিই রাজ করছেন দলে। এতদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে তৃণমূলের চানক্যই বা চুপ করে বসে থাকেন কী করে?
একজনের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে দলে, অন্যজন গুরুত্ব হারাতে হারাতে একেবারে কোণঠাসা। ঠিক সেইসময়ই দল আবার ডুবতে বসেছে নয়া দুর্নীতির চক্রে। ঢাকঢোল পিটিয়ে ক'দিন আগেই যাঁকে দলের 'মুখ' করা হয়েছিল, তাঁর নামেই কেলেঙ্কারি! এই অবস্থায় 'স্পিকটি নট' দলীয় সুপ্রিমো। দল যখন নতুন করে পাঁকে পড়েছে, তখন দলেরই একাংশ অর্থাৎ গুরুত্ব হারাতে বসা শিবিরের নেতারা মহোল্লাস করছেন। অবশ্যই তাঁদের সেই মহোল্লাস অন্য শিবিরের চোখ এড়িয়ে।
কোন দু'জনের কথা বলা হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। প্রথম জন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসে যাঁর গুরুত্ব অসীম। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। অন্যজন অবশ্যই মুকুল রায়। একদা দলের 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড'। তৃণমূলের চানক্য বলেও যাঁর খ্যাতি রয়েছে, যাঁর পরামর্শ ছাড়া এক পা চলতেন না স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এখন প্রশ্ন আট বছর পরে হঠাৎ করে 'কমিশনগেট' কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে গেল কী করে অভিষেকের? এর পিছনে কার হাত রয়েছে? বিজেপি? নাকি দলেরই কেউ? তা নিয়ে বিস্তর চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। কোনও কোনও শিবির মনে করছে, অভিষেকের নাম কমিশনগেট দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে মুকুল রায়েরই কারসাজি। রাজনীতির ময়দানে এখনও 'শিশু' অভিষেকের বিজয়রথ কোন পথে আটাকানো যায়, তাঁর থেকে ভালো আর কেউ জানেন না!
আসলে মুকুল রায়কে স্থানচ্যুত করেই তাঁর উত্তরণ। এখন গুরুকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়ে তিনিই রাজ করছেন দলে। এতদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে তৃণমূলের চানক্যই বা চুপ করে বসে থাকেন কী করে? তাই মোক্ষম চালটা দিয়েছেন একেবারে সঠিক সময়ে। এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির প্রাজ্ঞ মানুষেরা।
মুকুল ঘনিষ্ঠ অনেক নেতা বা বিধায়কের কথাতেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমশ। অভিষেকের নাম নতুন করে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ার পিছনে মুকুলের কারসাজি রয়েছে কি না তা ভবিষ্যৎ বলবে। আপাতত অভিষেকের উত্তরণ থমকে যেতে পারে এই একটা চালে। তা সে মুকুল রায়ই পিছনে থাকুন বা বিজেপি। অভিষেকের 'অভিষেক ক্রিয়া'র পরই খারাপ খবর তৃণমূলে।
আরও যে কারণে এই অন্তর্ঘাতের বিষয়টি সামনে চলে আসছে, তা হল মুকুলের অপমান প্রকাশ্যে চলে আসা। একুশে জুলাই-এর মঞ্চে দাঁড় করিয়ে 'অপমান' করা হয়েছে, তা সকলেরই চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। মঞ্চে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাঁকে মাইক্রোফোন দেওয়া হয়নি। প্রথম সারির সকলেই বক্তব্য রেখেছেন, কিন্তু মুকুল রায়কে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি। এমনকী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একিটবারের জন্যও নিজের রাজনৈতিক গুরুর নাম নেননি।
দাঁড়িয়ে থেকে এভাবে অপমান তিনি মুখ বুজিয়ে সহ্য করবেন, তা হয় নাকি! তাই কেলেঙ্কারিতে অভিষেকের নাম জড়ানোর পিছনে যে তিনিই- মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে তৃণমূলের সবাই-ই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কেউ প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন।