৫০টিরও বেশি শিশু পাচার, বিদেশি যোগ আরও স্পষ্ট সিআইডি তদন্তে
শিশু বিক্রির শিকড় বাদুড়িয়ায়, তা বিস্তৃত গোটা বাংলাজুড়ে। এমনকী শিশু পাচার কাণ্ডে বিদেশি যোগ আরও স্পষ্ট হয়েছে শুক্রবার। সিআইডি জানতে পেরেছে, ৫০টিরও বেশি শিশু পাচার হয়েছে এই চক্রের মাধ্যমে।
কলকাতা, ২৫ নভেম্বর : শিশু বিক্রির শিকড় বাদুড়িয়ায়, তা বিস্তৃত গোটা বাংলাজুড়ে। এমনকী শিশু পাচার কাণ্ডে বিদেশি যোগ আরও স্পষ্ট হয়েছে শুক্রবার। এনজিও-র সাপ্লাই লাইনেই সদ্যোজাতদের পাচার করে দেওয়া হত ভিনরাজ্যে, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছিল নার্সিংহোম ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আড়ালে রমরমিয়ে চলা এই ব্যবসা। তদন্ত নেমে সিআইডি জানতে পেরেছে, ৫০টিরও বেশি শিশু পাচার হয়েছে এই চক্রের মাধ্যমে। উদ্ধার হয়েছে নগদ টাকা, ডলার, ইউরো, বিদেশি কয়েন, হংকং-এর মুদ্রা ও সোনার গয়নাও।
ডিআইডি সিআইডি রাজীব কুমার শুক্রবার জানান, শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমের মালিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে উদ্ধার করা হয়েছে ডলার, ইউরো, হংকং ডলার ও বিদেশি কয়েন। তা থেকেই অনুমান বিদেশেও এই র্যাকেট কাজ করত। অনেক বিদেশির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শিশুদের। এখন পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি শিশুকে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে সিআইডি। সেই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে।
শিশু পাচার চক্রের এই জাল ছড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন নার্সিংহোমে। শহর ও শহরতলির বহু নার্সিংহোম ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এখন সিআইডি-র সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। বাদুড়িয়া-কাণ্ডের তদন্তে নেমে কলেজ স্ট্রিট ও বেহালার নার্সিংহোম থেকে গতকালই তিনজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি আধিকারিকরা জানতে পারেন, ঠাকুরপুকুরের পূর্বাশা হোমে ১০ শিশু রয়েছে। একইসঙ্গে তাঁরা জানতে পারেন মছলন্দপুরে ট্রাস্ট অফিস চত্বরে মৃত শিশুদের পুতে দেওয়া হত।
সেইমতো রাতেই ঠাকুরপুকুরের হোমে অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার হয় ১০ শিশু, যাদের বয়স ১ থেকে ১০ মাস। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় হোমের মালিক রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রিনা আবার বেহালার নার্সিংহোম থেকে ধৃত 'বড়দি' পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে। ওই হোমের কয়েকজন কর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর বয়ান দেন 'পূর্বাশা'র কো-অর্ডিনেটর জাহানারা বিবি। তিনি জানান, শিশুদের ওই হোমে আনা হয়েছিল ১০ নভেম্বর। সেই থেকে ওই ১০ শিশু হোমের তিনতলায় থাকত।
শুনেছিলাম গ্রিন পার্ক এলাকার একটি হোমে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। এ ব্যাপারে সমস্ত বিষয়টি জানেন হোমের মালিক রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাসন্তীদি ও অধিকারীবাবু বলে দু'জন ওই শিশুগুলিকে রেখে যান বলেও জানিয়েছেন জাহানারা। এই ঘটনার সঙ্গে বাদুড়িয়ার কোনও যোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত যে ১৩ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের বাবা-মায়ের খোঁজ চালানো হচ্ছে। যদি তা জানা যায় এবং নিশ্চত হওয়া যায়, তাদের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে শিশুদের।
অন্যদিকে এদিন মছলন্দপুরের ট্রাস্টে হানা দিয়ে দুই শিশুর কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। ৫০ মিটার দূরত্বে দুই শিশুকে পুতে দেওয়া হয়েছিল মাস ছয়েক আগে। এই এলাকার দশটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে আরও মৃত শিশুদের পুতে দেওয়া হয়েছিল।
মছলন্দপুরের ওই ট্রাস্টে রাখা অন্তঃসত্ত্বা মা ও সদ্যোজাত শিশুদের রাখা হত। সমাজসেবার আড়ালে এখানে শিশু পাচারের ব্যবসা চালানো হত। তাদের মধ্যে যে শিশু মারা যেত, তাদের কে পুতে দেওয়া হত ওই অফিসের পিছনে। সিআইডি-র সন্দেহ আরও অনেক দেহ বের হতে পারে মছলন্দপুর থেকে। ধৃত উৎপলা ব্যাপারীকে নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি-সিআইডি রাজীব কুমার।