নোটকাণ্ডে ডাহা ফেল প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ময়দানে এক করে দিলেন মমতা-রাহুলকে
মোদী সাবধান। ক্রিজে নেমে পড়েছেন মমতা। আপনার ‘আচ্ছে দিন’-এর সময়সীমা ঘোষিত ৫০ দিন পার হতে বাকি মাত্র একদিন। এখনও নোটকাণ্ডে সুরাহার কোনও গন্ধও মিলছে না। দেশবাসী কিন্তু আর আপনাকে সময় দেবে না।
কলকাতা,২৯ ডিসেম্বর : জাতীয় ময়দানে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকে বৈঠকে যোগ দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বিরোধীদের প্রধান মুখ তিনি। এমনকী রাহুল গান্ধীর উপস্থিতি সত্ত্বেও নিজের বিরোধী সত্তাকে উচ্চে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুল পাশে থাকলেও তাই মনে হয়েছে মোদী বিরোধিতায় যোগ্যতর মমতা বন্দোপাধ্যায়ই।
মোদী সাবধান। ক্রিজে নেমে পড়েছেন মমতা। আপনার 'আচ্ছে দিন'-এর সময়সীমা ঘোষিত ৫০ দিন পার হতে বাকি মাত্র একদিন। এখনও নোটকাণ্ডে সুরাহার কোনও গন্ধও মিলছে না। দেশবাসী কিন্তু আর আপনাকে সময় দেবে না। তার ওপর ছোট ও মাঝারি শিল্প ধ্বংসের মুখে। শ্রমিক-জনমজুররা কর্মহীন। ব্যবসায়ীরা মুণ্ডপাত করছেন। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে পিঠ বাঁচালেও মান বাঁচানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর মোদীজি একটার পর একটা ভাঙা ডাল ধরছেন, আর তা ভেঙে পড়ছেন। তার শেষ আছাড় শিবসেনার হাত থেকে শিবাজি ইস্যু হাইজ্যাক করা। তাতে বিস্তর খেপেছে শিবসেনা। তার থেকে বড় কথা, এই আর্থিক অনটনের সময়ে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ব্যয় করে শিবাজির মূর্তি স্থাপন করেছেন। যাতে মৎস্যজীবীদের পেশাগত দুর্দিন বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। যাতে আরব সাগরের প্রাকৃতিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হবে। এই নিয়ে হইচই কম হচ্ছে না। পরিবেশবিদরা যেমন সোচ্চার, মৎস্যজীবীরাও সোচ্চার। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু'জনেই।
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দু'জনে মোদী বিরোধিতায় ময়দানে নেমে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অবিবেচনা প্রসূত নোটকাণ্ড এবং আচ্ছে দিন আনতে না পারার প্রতিবাদে জাতীয় স্তরে বিরোধী জোট গড়ার উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী ঘন ঘন দিল্লি যাচ্ছেন। রাহুল গান্ধীকে পাশে পেয়েছেন। আরও অনেক দল সঙ্গে আসতে প্রস্তুত। লক্ষ্য মোদি সরকারকে হঠানো।
বামেরাও এই সুযোগে সাম্প্রদায়িক মোদি সরকারকে হঠাতে ময়দানে ঝাঁপাবে, এমনটাই মনে করেছিল আম জনতা। কিন্তু তাদের দেখা নেই। সেই ফাঁকে মমতা নেমে পড়েছেন ময়দানে। চুটিয়ে ব্যাটিং করছেন জাতীয় রাজনীতিতে। দিল্লির রাজনীতিতে তা এখন বহুচর্চিতও। এর মধ্যে কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী বোমা ফাটিয়ে বলেছেন, নোটবন্দির সঙ্গে দুর্নীতি রোধের কোনও সম্পর্ক নেই। দুর্নীতি রুখতে কিছুই করেননি প্রধানমন্ত্রী।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি প্রধানমন্ত্রী লড়েন, তবে নিজের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন? সাহারা ডাইরি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে না কেন? নিজে এই কেলেঙ্কেরিতে যুক্ত থেকেও তো তিনি এই নিয়ে কোনও কথা বলছেন না। রাহুলের এই জবাব নোটকাণ্ডের ৫০ দিনের ভাষণ প্রসঙ্গে। প্রথানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে ৫০ দিন সময় চেয়েছিলেন। নোটকাণ্ড নাকি এর মধ্যে মিটে যাবে। সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ঝামেলা মেটার নামগন্ধ নেই। অর্থনীতিতে জাতীয় বিপর্যয় নেমে এসেছে।
গত পঞ্চাশ দিনে পঞ্চাশ বারের বেশি সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়েছে মোদি সাহেবকে। তারপরও দুর্ভোগ কাটেনি। কবে কাটবে কেউ বলতে পারছে না। এই অবস্থায় মোদি সাহেব ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। তিনি সাফাই গেয়েছেন, ৮ নভেম্বরের একটি সিদ্ধান্তে সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, শিশু পাচার এবং জাল নোটের কারবারের বিশ্ব ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি আপনাদের রক্ষকও। কিন্তু আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি সেটা কিছু লোকের অস্বস্তির কারণ।
মানুষের দুর্দশার বিরুদ্ধে যারা সরব, তাহলে কি তারাই সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, জাল নোট কারবারের সঙ্গে যুক্ত! মোদি সাহেবের বক্তব্য সেটাই বলছে। পিঠ বাঁচাতে মোদি সাহেব রাহুল-মমতাকে সেই দলে ফেলে দিলেন!
শিবাজি মূর্তি প্রসঙ্গেও সমালোচিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে আচ্ছে দিন আসেনি। তারপরও নোটকাণ্ডে ব্যবসা বাণিজ্যে ধাক্কা। মধ্যবিত্তের মাথায় হাত। কাজ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ অসংগঠিত শ্রমিক। এমতাবস্থায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে শিবাজি মূর্তি বসানো যৌক্তিকতা কোথায়? অর্থনীতিবিদরা হিসাব কষে বলছেন, ওই টাকায় একটা মাঝারি শিল্প গড়া যেত। আর সেই কারখানার তিনশো শ্রমিক তথা কর্মীদের তিন বছরের বেতন বা মজুরি দেওয়া যেত। কোনটা জরুরি? ভুখা পেটে অন্ন জোগানো আগে? না কি পাথরের মূর্তি গড়ে মহারাষ্ট্রকে শিবসেনার প্রভাবমুক্ত করার ভোট রাজনীতি আগে?
এসব ঘটনা থেকে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতির ৫০ দিন পরও মানুষের হেনস্থা কমাতে না পেরে মোদি সাহেব একটার পর একটা ডাল ধরে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বাঁচার। কিন্তু নির্মম পরিহাস এটাই যে ডালগুলো ধরছেন সবই ভাঙা ডাল। এমতাবস্থায় প্রাদেশিক রাজনীতির আঙিনা থেকে উঠে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। ডাক দিয়েছেন- মোদি সরকারকে ছুঁড়ে ফেলার। পাশে পেয়েছেন রাহুলকে। আবারও কংগ্রেস-তৃণমূলের ভাঙা ঐক্য জোড়া লেগেছে মোদীর সৌজন্যে।