সিট গঠন মিতা রহস্যমৃত্যু-কাণ্ডে, এক ভাইকে চাকরির প্রতিশ্রুতি ও বাবার চিকিৎসার ভার নিলেন মুখ্যমন্ত্রী
হাওড়া, ১৭ অক্টোবর : উলুবেড়িয়ার কুশবেড়িয়ায় শ্বশুরবাড়িতে যাদবপুরের প্রাক্তনী মিতা মণ্ডলের রহস্য মৃত্যুর তদন্তে সিট গঠনের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে সোমবারই সিট গঠন করে সিআইডি। উলুবেড়িয়া থানা পুলিশের কাছে থেকে সমস্ত কেস-ডায়েরি হাতে তুলে নেয় এই বিশেষ তদন্তকারী দল।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে গিয়ে দেখা করেন মিতার বাপের বাড়ির সদস্যরা। মিতার এক ভাইকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে বাবার চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাজ্য নেবে বলে জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন, নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। সেই কারণেই তদন্তভার অর্পণ করা হয়েছে সিআইডিকে।
শ্বশুরবাড়িতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী মিতা মণ্ডলের রহস্যমৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে পুরো সাতটা দিন। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া এতটুকু এগোয়নি। মিতার স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে উলুবেড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ঘটনার তিনদিন পর। অর্থাৎ অভিযোগের চারদিন পরও পুলিশের সাফল্য বলতে মিতার স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার। এখনও দেওর ও শাশুড়ি ফেরার। মিতার মৃত্যু আত্মহত্যা না কি খুন, তা নিয়েই ধন্দ কাটাতে পারেনি পুলিশ।
এরমধ্যেই মিতাকে সুবিচার দিতে তোলপাড় হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিচার চেয়ে মিতার বন্ধুরা, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-পরিজনরা পথে নেমেছেন। সংবাদমাধ্যম মুখর হয়েছে। তবু তদন্ত প্রক্রিয়ায় এগোয়নি। তাই এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে গতি আনতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত।মাস ছয়েক আগে উলুবেড়িয়ার কুশবেড়িয়ার বাসিন্দা রানা মণ্ডলের সঙ্গে মিতার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগেই ছিল।
মদ খেয়ে রানা প্রায়ই মারধর করত মিতাকে। মিতার বাপের বাড়ির অভিযোগ টাকা চেয়ে তাদের মেয়েকে চাপ দিত রানা। মিতা আত্মহত্যা করেছেন বলে দশমীর দিন সকালে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের খবর দেন তিনি। কুশবেড়িয়ার নার্সিংহোমে গিয়ে মিতার রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখেন তাঁর বাপের বাড়ির লোকেরা। তারপরই খুনের অভিযোগ করতে গিয়ে বাধা পান বলে অভিযোগ। তিনদিন পর নথিভুক্ত হয় এফআইআর।
এই ঘটনায় এখনও অনেক প্রশ্ন অধরা। সেই প্রশ্নের উত্তর পেলেই নিশ্চত হওয়া যাবে মিতাকে পরিকল্পিত করে খুন করা হয়েছে, নাকি তিনি নিত্য অশান্তি-নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা রয়েছে, গলায় ফাঁস লেগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
শরীরের সমস্ত আঘাতই মৃত্যুর আগে। আর এ থেকেই স্পষ্ট, তাঁকে মৃত্যুর আগে মারধর করা হয়েছিল। শারীরিক নির্যাতনের পরই তাঁকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, নাকি তিনি স্বেচ্ছায় গলায় দড়ি দিয়েছেন, তা জানতে ভিসেরার জন্য পাঠানো হয়েছে নমুনা। ভিসেরা রিপোর্ট এলে এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যাবে।