নোট দুর্ভোগকে হাতিয়ার করে সর্বভারতীয় রাজনীতির মুখ হতে চাইছেন মমতা
নোট বিতর্ককে সামনে রেখে আবার সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টায় নামলেন মমতা। বাংলা থেকে দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করেছেন। সঙ্গে পেয়েছেন আপ, শিবসেনা ও ন্যাশনাল কনফারেন্সকেও।
নোট বিতর্ককে সামনে রেখে আবার সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টায় নামলেন মমতা। বাংলা থেকে দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করেছেন। সঙ্গে পেয়েছেন আপ, শিবসেনা ও ন্যাশনাল কনফারেন্সকেও। লক্ষ্য দিল্লির রাজনীতিতে পুনরায় নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা। রাজনীতিতে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের একত্র করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছেন। সঙ্গে সেরে রাখছেন সর্বভারতীয় মঞ্চ গড়ার কাজটাও। সমস্ত বিরোধী দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন মঞ্চে আসতে। তাতে সাড়াও পেয়েছেন।
হাতিয়ার সেই নোট বাতিল ইস্যু। দেশে টাকা নিয়ে চরম অরাজকতা চলছে। বাতিল টাকা জমা দেওয়া, প্রয়োজনের টাকা তোলার ক্ষেত্রে চরম নাকাল সাধারণ মানুষ। অসহায় মানুষ দীর্ঘ লাইন ঠেলেও টাকা জমা দিতে পারছেন না। প্রয়োজন মতো তুলতেও পারছেন না। তার জেরে রাজ্যে আত্মহত্যা করেছেন একাধিক জন। সারা দেশে সেই সংখ্যাটা ৪০ ছাড়িয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন অনেকে। জরুরি অপারেশন, চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিয়ের দিন বদলাতে হচ্ছে। বাজারে বেচাকেনা অনেকটাই পড়ে গেছে। অসংগঠিত শ্রমিকদের দুর্দশা অবর্ণনীয়। ছোট নোটের আকালে তারা কাজ পাচ্ছেন না।
এমনকী দৈনিক বাজার করার ক্ষেত্রেও হাতটান পড়ে গেছে। রাস্তায় সারি সারি পণ্য বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। তাতে মাছ, ডিম, পিঁয়াজ, সবজি পচছে। পেট্রল, ডিজেল কেনার নোট নেই। কৃষি কর, প্রবেশ কর, টোল ট্যাক্স দেওয়ার মতো খুচরো নোট নেই। শুধু বাংলা নয়, সব রাজ্যের হাল একই। কিন্তু কেউই সেভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ভূমিকা নিলেন একমাত্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালোটাকা ও জাল টাকা রোখার দায়ভার কেন সাধারণ মানুষকে নিতে হবে? কেন চরম দুর্ভোগ দিয়ে বহন করতে হবে তাঁদের? এ প্রশ্ন তুলে তিনি সোচ্চার হয়েছেন। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে যাচ্ছেন।
আচমকা বড় নোট বাতিল এবং প্রয়োজন মতো নতুন নোটের জোগান দিতে না পারার ব্যর্থতা যে অর্থনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে তাতে এরাজ্যে কট্টর বিরোধী সিপিএমকেও পাশে চেয়েছিলেন মমতা। এই ইস্যুতে মতপার্থক্য না থাকলেও সিপিএম সাড়া দেয়নি মমতার ডাকে। তবে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। আসন্ন সংসদ অধিবেশনেও এককাট্টা হয়ে মোদি সরকারের মাথা মোড়ানোর উদ্যোগও নিয়েছেন। ঠিক হয়েছে সংসদের উভয়কক্ষেই বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে সরকার পক্ষকে কোণঠাসা করবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, কালোটাকা ও জাল নোট রোখা নিয়ে তার দ্বিমত নেই। দ্বিমত পদ্ধতি নিয়ে। আগে থাকতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে, পর্যাপ্ত নোট মজুত না করে, পরিকাঠামো না গড়ে, রাতারাতি বড় নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশকে অচলাবস্থায় ফেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। সরকার তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এই ব্যবস্থায় সাধারণ মা্নুষ সুখে ঘুমতে পারছেন আর দুশ্চিতায় কালো টাকার মালিকরা ঘুমের ওষুধ খুঁজছেন। কিন্তু ছবিটা একেবারেই উল্টো। কালো টাকার মালিকরা নীরবে কালো টাকা সাদা করার খেলা চালাচ্ছে। যত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, যাদের কারবার শুধু সাদা টাকা নিয়েই, তাদের কালো টাকা নেই। আসলে চমক দেখিয়ে আসন্ন তিন রাজ্যের নির্বাচনে মাইলেজ পেতেই এই নোট বাতিলের খেলা খেলতে চেয়েছেন মোদিজি। তা বুমেরাং হয়ে গেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাল্টা প্রত্যাঘাতের সুযোগ সামনে হাজির হয়েছে বিরোধীদের। কিন্তু মমতা যেভাবে স্ট্রেট ব্যাটে খেলছেন, সেভাবে খেলতে পারেননি কেউ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ করে বসে না থেকে পরিস্থিতি স্বচক্ষে উপলব্ধি করেছেন, ব্যাঙ্কের সামনে ঘুরেছেন, বুঝেছেন যে হাহাকার চলছে তাতে রাজ্য তথা দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে। খাদ্যাভাবেরও সৃষ্টি হবে। তাই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া, মিছিল করা, বিরোধীদের এক মঞ্চে আনা- সব করেছেন তিনি। তাই প্রতিবাদী মুখ হয়ে সামনের সারিতে উঠে এসেছেন বাংলার অগ্নিকন্যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা। পরবর্তী ক্ষেত্রে পুরানো নোটের ব্যবহারে মেয়াদ বাড়ানো, অন্যান্য যে সব ছাড় ঘোষণা হল তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই চাপে। ফলে নোট বাতিল ইস্যুতে এ রাজ্যে মাইলেজ পেলেন মমতাই। পরোক্ষে দিল্লির রাজনীতিতেও নিজের অবস্থান জোরদার করলেন।