ফোরফ্রন্টে সুদীপ অথচ মদন ব্যাকফুটে, একুশের সমাবেশে রাস্তায় ‘একা’ মমতার সহযোদ্ধা
রোজভ্যালিতে ফেঁসেও সুদীপ স্থান পেলেন মমতার পাশে। সারদাকাণ্ডে জেল ফেরত মদন মিত্র উঠতে পারলেন না একুশের মঞ্চেই। সাধারণ কর্মীদের সঙ্গেই তাঁর স্থান হল রাস্তায়।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! একুশের মঞ্চে সামনের সারিতে রোজভ্যালিকাণ্ডে অভিযুক্ত সদ্য জামিনে মুক্ত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়! কিন্তু সারদায় অভিযুক্ত মদন মিত্রের ঠাঁই হল না মঞ্চেই। দলের আর পাঁচটা সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে রাস্তাতে বসেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে হল তাঁর এক সময়ের সহযোদ্ধা প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রকে। এক যাত্রায় পৃথক ফলের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে রইল এবারের একুশে জুলাই।
কেউ ভাবেননি এমন একটা দৃশ্য অপেক্ষা করে রয়েছে তৃণমূল-জনতার জন্য। সামনের সারিতে বসা মমতার দলের একনিষ্ঠ সমর্থকরা 'দোর্দন্ডপ্রতাপ' মদন মিত্রের এই অবস্থা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। সবাই হতচকিত। কেউ সেলফি তুললেন। কেউ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। হয়তো মনে মনে ভাবলেন- এমনও তাহলে হয়!
এদিন শহিদ দিবসের মঞ্চ প্রস্তুত। নেতারা মঞ্চে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। মদন মিত্রও নেতা। তিনিও তাই মিছিল নিয়ে সভাস্থলে আসার পর পা বাড়িয়েছিলেন মঞ্চের দিকে। কিন্তু মঞ্চে উঠতে যেতেই বাধা পেলেন তিনি। তাঁর যে অধিকার নেই মঞ্চে দাঁড়ানোর। প্রতিবাদ করেননি তিনি। দুঃখ পেয়েছিলেন। চোখে জল চলে এসেছিল তাঁর। ক্ষোভে-অভিমানে হতচকিত হয়ে বসে পড়েছিলেন রাস্তায়।
তারপরই ফিরেছিল সম্বিত। সামনেই তো প্রেসবক্স! সাংবাদিকদের নজর এড়াতে পারবেন না তিনি। তাই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মনের সেই কষ্ট কি চাপা যায়! চাপতে পারেননি মদন মিত্রও। তাঁর চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল হতাশার ছাপ। তবু চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন নিজেকে সামলে নেওয়ার। বলেছিলেন, 'শরীরটা ক'দিন ধরেই ভালো যাচ্ছে না। হঠাৎ শরীর খারাপ লাগায় মঞ্চে উঠতে পারিনি। রাস্তায় বসে পড়েছি।
নিজেকে সামলে নেওয়ার পরই অবশ্য আবার মেজাজে ফেরেন তিনি। তখন বলেন, 'রাজনৈতিক দল হল সমুদ্রের মতো। কখনও ঢেউ এসে দূরে নিয়ে চলে যায়। তারপর ফের জনতার কাঁধে ভর দিয়ে ফিরতে হয় সৈকতে। হাল ছেড়ো না বন্ধু কন্ঠ ছাড়ো জোরে।' পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'আমি রাস্তার লোক, রাস্তাতেই থাকব। মঞ্চে আমার তো কোনও কাজ নেই। আজ মঞ্চে অভিষেকের অভিষেক হবে। আগামীদিনে দিল্লিতে অভিষেক হবে মমতার। আমি চিরকালই রাস্তায় থেকেছি। মানুষের পাশে থাকতে চেয়েছি। তাঁদের পাশেই আছি, পাশেই থাকব।
মদন মিত্র যা-ই সাফাই দিন না কেন- এদিনের ঘটনা অন্য কিছুর আভাস দিচ্ছে! কেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নারদ-কাণ্ডে সমস্ত অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রী-সাংসদরা মঞ্চ আলো করে বসে রয়েছেন, শুধু নেই মদন মিত্র? তাঁর স্থান জনতার সঙ্গে। কেন? তবে কি দলে ব্রাত্য হয়ে গেলেন তিনি? তাঁর কাছে মমতার দরজা কি তাহলে বন্ধই হয়ে গেল? এমন নানা প্রশ্ন ভিড় করছে মমতার সমাবেশে রাস্তায় বসে পড়া বিধ্বস্ত মদন মিত্রের ছবি দেখে। উত্তরের অপেক্ষায় শুরু দিন গোনা।