যাদবপুর যেন 'উপদ্রুত কাশ্মীর', পুলিশি কড়াকড়িতে ম্লান সমাবর্তন
কলকাতা, ২৪ ডিসেম্বর: কখনও উপদ্রুত কাশ্মীরে ঘুরে এসেছেন? যেখানে রাস্তাঘাট মায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও রাইফেল উঁচিয়ে ঘোরে নিরাপত্তারক্ষীরা! যদি তেমন ঘটনার সাক্ষী এখনও না হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার কাছে বিরল অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। মহানগরীর বুকে এক টুকরো 'উপদ্রুত কাশ্মীর' এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়! অন্তত বুধবারের সমাবর্ত অনুষ্ঠান ঘিরে তেমনই মনে হল।
পড়ুয়াদের পাশাপাশি শিক্ষকদের অধিকাংশ সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। তাঁরা উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবিতে অনড়। মঙ্গলবার থেকেই ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে অনশন, বিক্ষোভ। তাই সমাবর্তনে অশান্তি এড়াতে এ দিন পুলিশে-পুলিশে ছয়লাপ হয়ে যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। হাতে লাঠি, কাঁধে ঝুলছে রাইফেল। এমন ছবি ৫৯ বছরের সমাবর্তন ইতিহাসে সম্ভবত দেখেনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
এ দিন সকালে ক্যাম্পাসে ঢোকেন রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তাঁর কাছে যাতে বিক্ষোভকারীরা পৌঁছতে না পারেন, সেই জন্য কড়া পাহারা বসায় পুলিশ। কিন্তু দূর থেকেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়। বিব্রত হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা। দ্রুত প্রেক্ষাগৃহে ঢুকে যান রাজ্যপাল।
কিন্তু আরও বাকি ছিল। গুটিকয়েক পড়ুয়ার উপস্থিতিতে যখন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী শংসাপত্র তুলে দিচ্ছেন এক-এক করে, তখন হঠাৎ এক ছাত্রী এগিয়ে আসেন। তিনি রাজ্যপালের হাত থেকে শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করেন। বলেন, উপাচার্য পুলিশ ডেকে তাঁর বন্ধুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছেন। তার পর পদত্যাগও করেননি। তাই তিনি শংসাপত্র নেবেন না। রাজ্যপাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। প্রথমে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেন। এই ছবি সঙ্গে সঙ্গে টিভিতে সম্প্রচারিত হওয়ায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর পরই রাজ্যপাল মঞ্চ ছেড়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যান। কিন্তু উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর হাত থেকে শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করেন উপস্থিত বাকি পড়ুয়ারা। অনেকের বুকে আঁটা ছিল ব্যাজ, 'আমরা এই ভিসি-র পদত্যাগ চাই।'
কাল থেকেই আচার্য তথা রাজ্যপাল, উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী প্রমুখের পদত্যাগ চেয়ে পোস্টারে ছেয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।
প্রসঙ্গত, এদিনের সমাবর্তনে সাম্মানিক ডি লিট দেওয়ার কথা ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। কিন্তু বিতর্কিত উপাচার্যের হাত থেকে তা নিলে জলঘোলা হতে পারে, এটা বুঝেই শেষ পর্যন্ত রাজি হননি ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক।