কাস্ত্রোর কলকাতা আগমনের স্মৃতি আজও রঙিন কমিউনিস্ট নেতাদের মনে
আজও অমলিন ফিদেল কাস্ত্রোর কলকাতার স্মৃতি। আজও বঙ্গের কমিউনিস্ট নেতারা তাঁদের মনের মণিকোঠায় বাঁধিয়ে রেখে দিয়েছে সেই ছবি।
কলকাতা, ২৬ নভেম্বর : আজও অমলিন ফিদেল কাস্ত্রোর কলকাতার স্মৃতি। আজও বঙ্গের কমিউনিস্ট নেতারা তাঁদের মনের মণিকোঠায় বাঁধিয়ে রেখে দিয়েছে সেই ছবি। হতে পারে সাদা কালো। কিন্তু আজও কমিউনিস্ট ভাবনায় বাংলার কমিউনিস্ট নেতাদের মনে রঙিন হয়ে আছেন কাস্ত্রো।
১৯৭৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দমদম বমনবন্দরে নেমেছিলেন কাস্ত্রো। ৪৩ বছর কেটে গিয়েছে। তবু জননায়কের নেহাতই ঝটিকা সফর ঐতিহাসিক হয়ে রয়েছে। কমিউনিস্ট আন্দোলনের জনক বলে কথা। তাঁর আগমন তো ঘটেছিল বঙ্গে। তারপরই বঙ্গে স্থাপিত হয়েছিল বামপন্থী সরকার।
তাঁর আগমন যেমন কলকাতার কাছে সম্পদ হয়ে রয়েছে, তেমনই বঙ্গের বামপন্থী নেতারা মনে করেন, কাস্ত্রোর বঙ্গে পা রাখার পরই পরিবর্তন ঘটেছিল রাজ্যে। কমিউনিস্টরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন।জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্তরা তাঁর সান্নিধ্যলাভ করে রাজ্যে দীর্ঘমেয়াদি সরকার গড়ার রসদ জোগাড় করে নিয়েছিলেন।
তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। তিনি বিশেষ কাজে ছিলেন দিল্লিতেষ আর সেইসময়ই ভিয়েতনাম সফর সেরে হাভানা যাওয়ার আগে নেমেছিলেন কলকাতায়। দমদম বিমানবন্দরে কিউবার রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য তরুণকান্তি ঘোষ৷ কমিউনিস্ট আন্দোলনের অবিসংবাদী নেতাকে স্বাগত জানাতে ছুটি গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা জ্যোতি বসু ও প্রমোদ দাশগুপ্ত। ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষ ও আরএসপি নেতা মাখন পাল ও সিপিএমের নেপালদেব ভট্টাচার্যও।
উজ্জ্বল সবুজ রঙের সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মে দমদমে দেখা দিয়েছিলেন তিনি। এয়ারপোর্টেই লাঞ্চ সেরে ফিদেল কাস্ত্রো রওনা দিয়েছিলেন হাভানার উদ্দেশ্যে। তাঁর সেই স্মৃতি আজও স্মরণ করেন কমিউনিস্ট নেতারা। কিছুদিন আগেই দুই কমিউনিস্ট দলের উদ্যোগেই কলকাতায় কাস্ত্রোর ৯০তম জন্মদিন পালন হয় ঘটনা করে।
আজ দীর্ঘ রোগভোগের পর তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে তাই স্বাভাবিকভাবে উঠল ফিদেল কাস্ত্রোর কলকাতা আগমনের কথা। তাঁর লড়াকু জীবনের কথা স্মরণ করলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে শুরু করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএম নেতা রবীন দেব, সিপিআই রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার, সিপিআই নেতা প্রবোধ পাণ্ডা, প্রবীর দেবরা।
কিউবার প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান ফিদেল কাস্ত্রোকে সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন সূর্যকান্ত মিশ্র। সিপিআই নেতা প্রবীর দেব বললেন, তাঁর কণ্ঠ বারবার গর্জে উঠেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তিনি বিশ্বজুড়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছেন।
ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্য়ুর খবর পেয়ে বিমান বসু বলেন, ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে একটা যুগের অবসান হল। ইন্দ্রপতন হল কমিউনিস্ট আন্দোলনের। সিপিআই নেতা প্রবোধ পাণ্ডা বলেন, তাঁর সংগ্রাম আমাদের চলার পথের পাথেয়। তাঁর আদর্শেই কমিউনিস্ট আন্দোলন চলেছে, তাঁর আদর্শেই তা চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে ভবিষ্যতেও। ফিদেল কাস্ত্রোর ৯০ বছরের সংগ্রামী জীবনই বামপন্থী আন্দোলনের আদর্শ।