উল্টোডাঙা সংগ্রামীতে মঙ্গলকাব্যের অনুকরণে ‘থিম পদ্মাবতী’-তে টেরাকোটা ও পটচিত্রের প্রদর্শনী
মঙ্গলকাব্যের ভাবধারায় সেজে ওঠা আস্ত একটা দুর্গা মণ্ডপ। দেবী মনসার উপাখ্যান থেকে শুরু করে চাঁদ সদাগর, লখীন্দর, বেহুলার কাহিনি, যা আবহমানকাল ধরে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়েছে গ্রামবাংলার সংস্কৃতির পরতে পরতে, তা-ই দেখাবে এবার শহরের পুজো।
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম প্রধান কাব্য মনসামঙ্গলকেই এবার দুর্গাপুজোর থিম করেছে উল্টোডাঙা সংগ্রামী। 'পদ্মাবতী' থিমে বাঁকুড়ার টেরাকোটার কাজের পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুরের পটচিত্রে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপের চার দেওয়ালের চালচিত্র।
পদ্মাবতী মনসা মঙ্গল কাব্যের মূল চরিত্র মনসার প্রকৃত নাম। চাঁদ সদাগরের হাত ধরে তাঁর মর্ত্যে পুজো পাওয়া ও প্রচারের আখ্যানই হল মনসামঙ্গল কাব্য। আর তা করতে কত কীর্তিই না করতে হয়েছে। কালনাগিনী, ভেলায় ভেসে স্বর্গে পাড়ি দেওয়া-সবকিছুই দেখানো হয়েছে বাংলার সাহিত্যের ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী৷
উল্টোডাঙা সংগ্রামীর পুজোর মূল আকর্ষণ এই পদ্মাবতী-আরাধনা৷ মাতৃবন্দনার আসরে মনসাপুজোও বলতে পারেন। তবে থিম পুজো। আরও স্পষ্ট করে বললে মনসামঙ্গলের আঙ্গিকে দেবী দুর্গার আরাধনাই লক্ষ্য সংগ্রামীর।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। সেই বড়পুজোর বিষয়-ভাবনায় মনসামঙ্গল কাব্যের ভাবধারাকে নিজস্ব ভাবনার সৃজন করেছেন থিমমেকার সৌরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বাঁকুড়ার টেরাকোটা বা পোড়ামাটি শিল্পকে তিনি ব্যবহার করেছেন মণ্ডপসজ্জায়। সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে পোড়ামাটির কাজ।
টেরাকোটার তৈরি সহস্রাধিক চালচিত্র দেখা যাবে এই মণ্ডপে। মণ্ডপের চতুর্দিকে স্থাপন করা হয়েছে মনসার ঘট। যেমনভাবে বেদিতে ঘট বসানো হয়, তেমন করেই মাটির ঘটদানিতে বসেছে মনসার ঘট। তার চারধারে আলপনা৷ থাকছে মঙ্গলদীপ৷ মাটির বাড়ি। সেখানেই দেবী দুর্গার অধিষ্ঠান। প্লাইউডের উপর প্লাস্টার অফ প্যারিস ও রঙের কাজ করে 'মাটির দেওয়াল' তৈরি করা হয়েছে৷
শুধু বাঁকুড়ার টেরাকোটা শিল্পে সমৃদ্ধ নয় এই পুজো মণ্ডপ, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার লোকশিল্পীদের সুনিপুণ হাতের কারুকার্য এখানে চিত্রিত হয়েছে। পিংলার বিখ্যাত পটচিত্রেই বর্ণিত সমগ্র মনসামঙ্গল কাব্য৷ মনসা সর্পের দেবী। এখন শুধু অনার্যদের মধ্যেই নয়, আর্য সমাজেও মনসা পুজো সুপ্রচলিত। এখানে মাটির দেওয়ালের মধ্যে তৈরি হয়েছে খোপ। সেখানে রক্ষিত টেরাকোটার সাপ৷
গ্রামীণ মন্দিরের আদলে কাল্পনিক দেবীকক্ষ গঠন করেছেন শিল্পী৷ ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রতিমা গড়েছেন মৃৎশিল্পী সনাতন পাল৷এবার পদ্মাবতীর আশীর্বাদে সংগ্রামীর পুজো মণ্ডপ ধন্য হয়ে উঠবে বলেই উদ্যোক্তাদের দাবি।