মনের ফ্রেমের ‘চৌখুপি’তে অধিষ্ঠিত শিবমন্দিরের দেবী দুর্গা
বুকের খাঁচায় যেমন সযত্নে বাসা বেঁধে রয়েছে মন, তেমনই মণ্ডপের 'চৌখুপি'তে অধিষ্ঠান দেবী দুর্গার। মায়ের কোলের চৌখুপি যেমন স্নেহমাখা হয়, তেমনই দক্ষিণ কলকাতার লেক শিবমন্দিরের উপস্থাপনায় চৌখুপির মণ্ডপে মায়ের অধিষ্ঠানও বিশ্বাসের৷ তাই দর্শনার্থীদের উদ্দেশে পুজো উদ্যোক্তাদের বার্তা- 'মণ্ডপের চৌখুপিতে মায়ের অধিষ্ঠান, ভক্তি ভরে ডাকুন মাকে, মূর্তিতে আসুক প্রাণ৷'
চৌখুপি মানে চৌকো খোপ৷ সেরকমই একটা খোপেই সুরক্ষিত থাকে মন, চৌখুপিসম সিন্দুকে সুরক্ষিত থাকে মণিমাণিক্য, মায়ের কোলের চৌখুপিতে থাকে স্নেহের পরশ মাখা ছোট্ট শিশু।
প্রকৃতির যা কিছু সৃষ্টি, সবই তো চার দেওয়ালে মধ্যে আবদ্ধ। পুজোয় বাজিমাত করতে চাইছে দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির দুর্গোৎসব কমিটি তাই বেছে নিয়েছে চৌকো খোপকেই। আমৃত্যু মনুষ্যজীবনে সবথেকে ব্যবহৃত কাঠ দিয়েই পুরো মণ্ডপের পরিকল্পনা। খাট, আলমারি থেকে শুরু করে টেবিল-চেয়ার, ক্যারম বোর্ড থেকে ব্যাট, ঘুড়ির লাটাই- সবই তো তৈরি কাঠ দিয়েই। ৮০তম বর্ষে শিবমন্দিরের পুজোয় থিমশিল্পী বিমল সামন্ত বাজিমাত করতে চেয়েছেন 'চৌখুপি'র মণ্ডপে৷
চৌখুপির আদলেই মণ্ডপ। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কাঠের উপকরণ দিয়ে সাজানো। থিমশিল্পী বিমল সামন্ত তাঁর সৃজনে ব্যবহার করেছেন লাটাই, খড়ম, ডালের কাঁটা, চামচ, ক্যারম বোর্ড। শুধু কি মণ্ডপ, প্রতিমাসজ্জাতেও সেই কাঠ। শিবমন্দিরে চৌখুপির অন্দরে শোভা পাচ্ছে নিমকাঠের প্রতিমা৷ আলোকসজ্জা, আবহসংগীত চৌখুপি করে তুলেছে আরও মোহময়ী।
গতবছর লোহার কারুকার্যে পঞ্জিকা পার্বণে শিবমন্দিরের পুজোমণ্ডপ মাতিয়েছিলেন বিমলবাবু। এবার কাঠের উপকরণে চৌখুপি সাজিয়ে কিস্তিমাত করে দিয়েছেন তিনি। বাইরে থেকে গোটা মণ্ডপকে দেখতে চৌকো খোপের মতোই লাগবে৷ মণ্ডপের দেওয়াল জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি৷
জীবনের ভালো মুহূর্তগুলো মনের মণিকোঠায় যত্ন করে রাখতেও একটা চৌখুপির দরকার। তা লেন্সবন্দি করে মনের চৌখুপিতে যাতে তা চিরদিন রেখে দেওয়া যায় তারই ব্যবস্থা করেছেন শিল্পী। শিল্পীর এই ভাবনাকে দর্শনার্থীরা তাঁদের মনের 'চৌখুপি'তে জায়গা দেবেনই৷