পাহাড় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ হাইকোর্টের, কেন্দ্র-রাজ্যকে চরম বার্তা প্রধান বিচারপতির
পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্রের চাপানউতোর হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌঁছয়। সেই মামলার শুনানির আগে দুই পক্ষের আইনজীবীর দীর্ঘ সওয়াল শোনার পরই কঠোর সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতির।
পাহাড় জ্বলছে। তবু ভ্রুক্ষেপ নেই রাজ্য ও কেন্দ্রের। তাঁরা ইগোর লড়াই নিয়েই ব্যস্ত। ব্যস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ঝগড়া করতেই। রাজ্য-কেন্দ্রের এই চাপানউতোরের মধ্যেই পাহাড় ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করল হাইকোর্ট। পাহাড়কে শান্ত করতে অবিলম্বে চার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাজ্যের শীর্ষ আদালত।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে পাহাড় হিংসা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় সরকারকেই ভর্ৎসনা করেন। বলেন, অবিলন্বে আরও বাহিনী পাঠিয়ে পাহাড়ের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে হবে। বেলাগাম মোর্চা সমর্থকদের তাণ্ডব ঠেকাতে কেন্দ্রকে আরও চার কোম্পানি ও রাজ্যকেও আরও পুলিশ পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি।
পাহাড় পরিস্থিতি নিয়ে এদিন প্রধান বিচারপতি রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পাহাড়ে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা চলছে। স্কুল কলেজ বন্ধ, ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না, স্বাধীনভাবে কেউ রাস্তায় বেরোতে পারছেন না, মানুষের খাবারের সংস্থান নেই, পর্যটকরা ভয় পাচ্ছেন পাহাড়ে পা রাখতে- এমতাবস্থায় সবার আগে পাহাড়ের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানো উচিত। কিন্তু কোনও সরকারকেই সঠিক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, পাহাড়ে বাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্রের চাপানউতোর হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌঁছয়। সেই মামলার শুনানি ছিল এদিন। দুই পক্ষের আইনজীবীর দীর্ঘ সওয়াল শোনেন প্রধান বিচারপতি। এদিন সওয়াল চলাকালীন রাজ্যের আইনজীবী অভিযোগ করেন, পাহাড়ে অশান্তির পিছনে রয়েছে জঙ্গি-যোগ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনের পিছনে ইন্ধন রয়েছে নেপালি মাওবাদীদের। রয়েছে জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন (কে)ও।
এরপরই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন কেন পাহাড়ে বাহিনী পাঠানো হচ্ছে না? কেন্দ্রের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও চার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের কেন্দ্রের তরফে সাফ জানানো হয়েছিল, তারা পাহাড়ে আর কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাবে না। ইতিমধ্যে ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তা পর্যাপ্ত বলেই মনে করছে তাঁরা। উল্টোদিকে রাজ্য মনে করছে পরিস্থিতি অনুযায়ী তা পর্যাপ্ত নয়।
পাহাড়ের অশান্তিতে রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়েও এদিন সমালোচনা করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর ব্যাপারে সমস্ত রাজনৈতিক দলই উদাসীন। উল্লেখ্য, এদিনও পাহাড়ে আগুন, হিংসা অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ের মোট পাঁচ জায়গায় আগুন লাগানো হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত। সরকারি অফিসগুলিতে লুঠ চালানো হয়। তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত সেই মোর্চাই।