"কে রাহুল সিনহা?" এরপর এঁরাই হয়ত বলবেন, "কে মমতা? চিনি না তো!"
সমকালীন বাংলার কিছু 'বরেণ্য' ব্যক্তি, মানে যাঁরা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে ভালবাসেন আর কী, তাঁরা নাকি আজ মিছিল বের করবেন, কারণটা যদিও কারও কাছেই স্পষ্ট নয় (কেউ কেউ বলছেন এ নাকি চোর বাঁচাও আন্দোলন!)| সেই মিছিলকে কেন্দ্র করে দেখলাম বিভিন্ন বাংলা খবরের চ্যানেলে নারদ-নারদ চলছে গতকাল | ভাগ্যিস সঞ্চালক মশাই মাঝখানে ছিলেন না হলে বুঝতেই পারতাম না যুদ্ধের সীমাটি কথা দিয়ে গিয়েছে, কারণ মুখগুলো এতবার জায়গা বদল করে যে হিসেব রাখাই দায় কে কোন পক্ষে লড়ছেন |
যাই হোক, সব ঠিকঠাকই চলছিল (মানে আর কী কিছুই ঠিকঠাক চলছিল না) তখন আচমকা দেখলাম এক তৃণমূলী নেতা (এই দলের নেতারা তো আবার ভোটের আগেই জন্মান আবার ভোটে হারলেই দলের আম কর্মী হয়ে যান), যিনি বোধয় গলা-টলাও সাধেন বলে বসলেন যে রাহুল গান্ধীর নাম তিনি জানেন কিন্তু রাহুল সিনহা সম্পর্কে তিনি বিশেষ অবগত নন | বাহ, বেড়ে বললেন তো নেতাজি! আর কিছু না হোক, সিপিএম-এর তাচ্ছিল্য করার সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ ধারক এবং বাহক তো আপনারাই দেখছি |
যাকগে, আপনি কাকে চেনেন না চেনেন তাতে কী এলো গেল? এখন আপনাদের দলের ভিতরে যা ত্রাহি-ত্রাহি রব উঠেছে, কবে না টিভিতে আপনাদেরই দেখি বলতে:"মমতা কে? চিনি না তো!"
ফিরে আসি মিছিলের প্রসঙ্গে | এই মিছিলটা তো আসলে 'অরাজনৈতিকের রাজনীতিকরণ', তাই তো? আর সেই রাস্তার রাজনীতিতে সামিল হতে গিয়ে সুবিধাবাদী গায়ক-বাদকদের সং সাজতে হচ্ছে কারণ অন্ধ কানাগলিতে হুড়ুম-দারুম করে ঢুকে পড়ে এখন তাঁরা আর পথ খুঁজে পাচ্ছেন না | কিন্তু আপনাদের কী বাড়িতে রান্না চড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে যে এখন সাধারণ বিচারবুদ্ধি হারিয়ে এক মেষ-মানসিকতার মোহে আক্রান্ত হয়ে আলেয়ার পিছু ধাওয়া করছেন?
বিরোধীকে তাচ্ছিল্য করে এককালে বামেরা ডুবেছিল, এঁরাও সেই একই পথে চলেছেন
নইলে 'রাহুল সিনহা কে?' বলা যে আজকের দিনে নেহাত ভাঁড়ামো সেটা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন থাকে না | শাসক দলের সেলেব্রিটি কর্মীরা যে রাজনীতি সম্পর্কে নেহাতই আনাড়ি সেটাও প্রমাণিত হয় এইসব কথাবার্তা শুনলে | কখনও বলছেন বাংলার সংস্কৃতির উপর আঘাত হচ্ছে (পরমা আইল্যান্ডের মূর্তিটি কী মোদী সরকার হওয়া করে দিল?) আবার কখনও বলছেন ফ্লাইওভারের টাকা বা ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না বলে প্রতিবাদ! একজন অভিনেতা তো বলেই ফেললেন, পাঁচ মিনিটে ছটা কারণ শুনলাম মিছিলের! হক কথা | মাথার মতো কি তাহলে পুরো শরীরটাই অবশ হয়ে পড়ছে?
অবশ্য না পড়ার কথাও নয় | রাজনীতির নাম করে রাম-শ্যাম-যদুর হাতে যা কিছু বলার লাইসেন্স তুলে দিলে যে সবকিছুই বেসামাল হয়ে পড়বে, তাতো জানা কথাই |
সব মিলিয়ে, পুরো ব্যাপারটাই এত হাস্যকর পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে বাঙালির রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নামক যে গালভরা প্রশস্তি এককালে শুনতাম সেটা কানে এলেই কীরকম একটা গা গুলিয়ে ওঠে আজকাল |
শুধু খারাপ লাগে যে যে-সমস্ত তৃণমূল কর্মীরা সত্যিকারের লড়াই লড়েছেন কিন্তু তবুও বাজে লোকের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের জন্যে | পরিবর্তন চাইতে গিয়ে দেখলেন শুধু কিছু স্বার্থপরের কপাল ছাড়া আর কিছুই বদলায়নি এই রাজ্যে |