৬ মাস ধরে দিদির কঙ্কালের সঙ্গে বসবাস ভাইয়ের, খাবারও দিতেন নিয়মিত!
কলকাতা, ১১ জুন : শেক্সপিয়র সরনি থানার একটি বাড়ি থেকে বৃদ্ধের অগ্নিদ্বগ্ধ দেহ উদ্ধার দিয়েই শুরু হয়েছিল এই ঘটনা। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তদন্ত যে মোড় নিয়েছে তাতে চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদেরই।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে রবিনসন স্ট্রিটের একটি বহুতল ফ্ল্যাটের শৌচাগার থেকে উদ্ধার করা হয় অরবিন্দ দে নামে এক ব্যক্তির অগ্নিদ্বদ্ধ দেহ। ওই ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার হয় একটি মেয়েক কঙ্কাল ও দুটি কুকুরের কঙ্কাল।
অরবিন্দ বাবুর ছেলেকে জেরা করে যে সব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ তা সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো। অরবিন্দবাবুর ছেলে পার্থ পুলিশকে জানিয়েছেন যে মহিলা কঙ্কালটি পাওয়া গিয়েছে তা আসলে তাঁর দিদি দেবযানী দে-র। কয়েক মাস আগে তাঁদের প্রিয় পোষ্যের মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেন তিনি। না খেয়ে মাস ছয়েক আগে মৃত্যু হয় দিদি দেবযানীরও।
কিন্তু দিদি ও পোষ্যদের এতটাই ভালবাসতেন তিনি যে তাদের সৎকার না করে বাড়ির মধ্যেই রেখে দিয়েছিলেন তাদের মরদেহ। যাতে মৃতদেহ পচে গন্ধ না ছাড়ে তার জন্য বিশেষ কাপড় দিয়ে দিয়ে ঘরের জানলা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
দিদি ও দুই পোষ্য কুকুরের কঙ্কালকেও নিয়মিত পার্থবাবু খেতে দিতেন বলেও দাবি করেছেন। এর পাশাপাশি তদন্তকারীরা যখন প্রথম ওই ঘরটিতে ঢোকে তখন তারা কিছু অস্পষ্ট মহিলা কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পান। যেন একটা ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা। পরে জানা যায় টেপ রেকর্ডারের মাধ্যমে ওই আওয়াজ আসছে।
পার্থবাবুকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জেরায় পার্থবাবু জানিয়েছে, দিদি উপস্থিতি বোঝার জন্যই ওই ধরণের রেকর্ড বাজাতেন তিনি। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় স্টিরিও সাউন্ড বক্স লুকানো ছিল।
কিন্তু তদন্তে দিশেহারা পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান আত্মহত্যা করেছেন অরবিন্দ বাবু। কিন্তু কুকুর দুটি ও দেবযানী দে-র মৃত্যুর কারণ নিয়ে রয়েছে রহস্য। পার্থবাবু আদৌ কতটা ঠিক কথা বলছে তা নিয়েও দ্বন্ধে পুলিশ।
প্রশ্ন উঠছে, অরবিন্দ বাবু কেনই বা আত্মহত্যা করলেন? বাড়িতে এতমাস ধরে ৩ টি কঙ্কাল থাকা সত্ত্বেও পাড়া প্রতিবেশী কেউ কিছুই টের পাননি? এমনকী কয়েকদিন আগে বাড়িতে জন্মদিনের পার্টি ছিল। নিমন্ত্রিতরা এসেই কোনও অস্বাভাবিক কিছু টের পাননি এটা কী করে সম্ভব? ভাড়াটেরাও টের পাননি কিছু? কেনই বা বাড়িতে ভৌতিক আবহ তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল? পার্থর এই কাজে কী সহমত ছিল বাবা অরবিন্দ বাবুরও?
সকালবেলা এই খবরটি পাওয়ার পর হতবাক প্রতিবেশীরা। অরবিন্দ বাবুর মৃত্যুতেই এই ঘটনা সামনে আসে। ৩টি কঙ্কাল ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে এই রহস্যের জট অনেকটাই খুলবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।