গ্রিন করিডর করে লিভার প্রতিস্থাপনেও শেষ রক্ষা হল না, মৃত্যু হল সংযুক্তার
সালকিয়ার বজলপাড়া লেনের বাসিন্দা সংযুক্তাদেবীর শরীরে লিভার প্রতিস্থাপন হওয়ার পর থেকেই সংশয় তৈরি হয়ছিল। শুক্রবার পিজি হাসপাতালে চিরনিদ্রায় ঢলে পড়লেন সংযুক্তা।
কলকাতা, ১২ নভেম্বর : শেষ রক্ষা হল না। স্বর্ণেন্দু রায়ের লিভার তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপিত হওয়ার পরও বাঁচার সাধ অপূর্ণই রয়ে গেল হাওড়ার সংযুক্তা মণ্ডলের। আট দিনভর জীবনযুদ্ধ চালিয়ে শেষমেশ হার মানলেন তিনি। শুক্রবার পিজি হাসপাতালে চিরনিদ্রায় ঢলে পড়লেন সংযুক্তা।
সালকিয়ার বজলপাড়া লেনের বাসিন্দা সংযুক্তাদেবীর শরীরে লিভার প্রতিস্থাপন হওয়ার পর থেকেই সংশয় তৈরি হয়ছিল। তিনি ওই অঙ্গের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। ডাঃ সুভাষ গুপ্তের নেতৃত্বে অপারেশন হয়েছিল তাঁর। কিন্তু তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। ওই রাতেই দ্বিতীয়বার অপারেশন করা হয়েছিল তাঁর।
তারপর সংযুক্তাদেবীর অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও উন্নতি হচ্ছিল না কিছুতেই। পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার ইউনিটে ভরতি করা হয়েছিল তাঁকে। রক্তক্ষরণ বন্ধ হলেও তীব্র শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট শুরু হয় নতুন করে। সেই কারণে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখতেও হয়। বৃহস্পতিবার থেকেই হাল ছেড়ে দেন ডাক্তাররা। শুক্রবার সব শেষ হয়ে গেল। পিজি-র লিভার ইউনিটের চিকিৎসকরাও ভেঙে পড়েছেন আপ্রাণ চেষ্টার পরও সংযুক্তাদেবীকে বাঁচাতে না পারায়।
সংযুক্তাদেবীর স্বামী সোমনাথ মণ্ডল জানিয়েছেন, চেষ্টার তো ত্রুটি রাখা হয়নি। সবাই সব রকম চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনও লাভ হল না। সবাইকে নিরাশ করে সংযুক্তা চলে গেল। তবু তাঁর আবেদন, 'ব্রেন ডেথ'-এর পর অঙ্গদানের উৎসাহে যেন ভাটা না পড়ে। লিভার প্রতিস্থাপনে এই ব্যর্থতার পর প্রশ্ন উঠে পড়েছে, তবে কি পিজি-র পরিকাঠামোর কোনও গলদ রয়ে গিয়েছে এখনও?
দেশের এক নম্বর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে অপারেশন করানো হয়েছে। বাইরের হাসপাতাল এই লিভার প্রতিস্থাপনে সাফল্যের হার বেশি, অথচ এ রাজ্যে কেন কম? কেন সেই সাফল্যের খোঁজ পাচ্ছে না পিজি-র মতো সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। গ্রিন করিডর থেকে শুরু করে সমস্ত পরিষেবা মিললেও তবে কেন সাফল্য অধরা রয়ে গেল? সমস্যা কোথায়? তা নিরূপণেই এখন ব্যস্ত পিজি।
রাজ্য তথা পূর্ব ভারতের প্রথম লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছিল ২০০৯ সালের এপ্রিলে এই পিজি হাসপাতালে। সাত মাসের ছোট্ট রৌশনকে লিভার দিয়েছিলেন বাবা রজব আলি। সেবার সাফল্য মিলেছিল। মোট চারটি লিভার প্রতিস্থাপনের পর সংযুক্তাদেবীর মৃত্যুতে ইনস্টিটিউট হিসাবে এখানে সাফল্যের হার গিয়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। স্বর্ণেন্দুর কিডনি প্রতিস্থাপিত হওয়া দুই রোগিণী রুবি ও নিলোফার অবশ্য ভালো আছেন।