টাইটেনিয়ামের পাত বসল অভিষেকের চোখের নীচে, সফল অস্ত্রোপচার, জানালেন চিকিৎসকেরা
সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অরবিট ফ্লোর রিপেয়ারিং অপারেশন সম্পূর্ণ হল সফল ভাবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। চোখের নীচে বসানো হয়েছে টাইটেনিয়াম প্লেট।
কলকাতা, ২৫ অক্টোবর : সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অরবিট ফ্লোর রিপেয়ারিং অপারেশন সম্পূর্ণ হল সফল ভাবে। ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ১২ জনের চিকিৎসকের দল মঙ্গলবার বেলভিউতে সাংসদের চোখের অরবিট ফ্লোরে অস্ত্রোপচার করল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। চোখের নীচে বসানো হয়েছে টাইটেনিয়াম প্লেট।
এদিন অভিষেককে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে এই অপারেশন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সাড় ১২টার পর তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলেও, তাঁর অপারেশন শুরু করতে লেগে যায় আরও দু'ঘণ্টা। আড়াইটা নাগাদ তাঁর অপারেশন শুরু করা হয়। প্রায় সাড়ে চারটে পর্যন্ত এই অপারেশন চলে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অভিষেকের সম্পূর্ণ জ্ঞান আসতে সাড়ে ছ'টা বাজবে।
চিকিত্সকদের পরিভাষায় এই অরবিট ফ্লোর রিপেয়ারিং হল অরবিটো জাইগোম্যাটিক কমপ্লেক্স। মুখের গঠন নির্ভর করে এই অংশের হাড়ের ওপর। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে পথ দুর্ঘটনায় এই হাড়েরই একটা অংশ ভেঙে যায় তৃণমূল যুব সভাপতির। বাঁ চোখের নীচের সেই হাড়েই মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করলেন ম্যাক্সিলো ফেসিয়াল বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, চোখের নীচের দিকটাকে বলা হয় ফ্লোর ওয়াল।
এখানকার কোনও হাড় ভাঙলেই দরকার পড়ে অরবিট ফ্লোর রিপেয়ারিং অপারেশনের। কীভাবে হয় এই অপারেশন? বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রথমেই রোগীকে অজ্ঞান করা হয়। এরপর চোখের পাতা ক্লিপিং করে আটকানো হয়। তারপরই শুরু হয় কাটাছেঁড়ার কাজ। স্ক্যালপল দিয়ে সূক্ষভাবে চোখের নীচের অংশটি কাটা হয়। যন্ত্রের মাধ্যমে কিছুটা ওপরে তোলা হয় চোখ। তারপরই পর্যবেক্ষণ করা হয় কোন হাড় ভেঙেছে।
গুরুতর আঘাত হলেই প্লেট বসানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অভিষেকের আঘাত গুরুতর হওয়ায় প্লেট বসানো হয় তাঁর চোখের নীচে। একেবারেই পাতলা ৪ মিলিমিটার গেজের একটি টাইটেনিয়াম পাত বসানো হয়েছে অভিষেকের চোখের নীচের অংশে। দুটি স্ক্রু দিয়ে প্লেটটি আটকানো হয় অরবিটাল ফ্লোরে। এরপর ফ্লোর ডাকশন টেস্ট করে দেখা হয় প্লেটটি সঠিকভাবে বসানো হল কি না। এক্ষেত্রে চোখের মণি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তাও দেখা হয়। এরপর শুরু হয় প্লাস্টিক সার্জারির কাজ।
চিকিত্সক সুকুমার মুখোপাধ্যায় পুরো অস্ত্রোপচারের পর্যবেক্ষণ করেন। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও অরবিট সার্জেন অনির্বাণ ভাদুড়ির নেতৃত্বে অপোরেশন হয়। ছিলেন দুই ম্যাক্সিলো ফেসিয়াল সার্জেন ডা. অমিত রায় ও ডা. কমলেশ্বর কোঠারি। তারপর প্লাস্টিক সার্জারি করেন ডা. রাজেন ট্যান্ডন। অস্ত্রোপচার চলাকালীন উপস্থিত ছিলেন দুই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনোতোষ পাঁজা ও ডা. এসবি রায়। দুই চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ডা. জয়াংশু সেনগুপ্তও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অভিষেকের অস্ত্রোপচারে।