ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি: প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের ওপর
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি এবার সম্ভবত সরাসরি প্রভাব ফেলতে চলেছে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ও তার কর্মীদের ওপর।
ওয়াশিংটন, ৩১ জানুয়ারি : ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি এবার সম্ভবত সরাসরি প্রভাব ফেলতে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ও তার কর্মীদের ওপর। ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে এক কার্যনির্বাহী খসরায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,'ভিসা'-এর যে নীতিতে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গুলি বাইরের দেশ থেকে কর্মী নিয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সেই নীতি পরিবর্তন করা হবে। এতে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা তথা তার কর্মীদের ওপর যথেষ্ট প্রভাব পড়তে চলেছে বলে খবর।[মার্কিনি চাপের জেরে লস্কর প্রধান হাফিজ সঈদকে গৃহবন্দি করল পাক প্রশাসন]
বিদেশি কর্মী সংক্রান্ত 'ভিসা' মূলত মার্কিন সংস্থাগুলির জন্য তৈরি হয়, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে কর্মী নিয়ে গিয়ে নিয়োগ করে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উপযুক্ত কর্মী, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গুলি পেতনা বলে দাবি করা হয়। এছা়ড়াও মার্কিন নাগরিকদের তুলনায় ভারতীয়রা অনেক কম বেতনে কাজ করেন। কিন্তু এর ফলে বেকারি বেড়ছে মার্কিন মুলুকে।[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা কি এবার পাকিস্তানের ওপর পড়তে চলেছে ?]
এই যুক্তিতেই এইচ-১বি ও এল-১ ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি করতে চলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এইচ-ওয়ান বি ভিসার সবচেয়ে বড় গ্রাহক ভারতীয় কর্মীরা। বিভিন্ন মার্কিনি সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটা বড় অংশই ভারতীয়রা দখল করে রয়েছে। অন্যদিকে কিছুদিন আগে অভিযোগ ওঠে, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে যে সমস্ত কর্মী 'এইচ-১ বি ভিসা'-এর মাধ্যমে আনা হয়, তাঁরা মার্কিনিদের থেকে নিকৃষ্টমানের।[অভিবাসন নিয়ে কড়া পদক্ষেপ ট্রাম্পের]
যদি এই নীতি লাগু করা হয়, তাহলে মার্কিন সংস্থা গুলিকে বিদেশী কর্মী নিয়োগের আগে মার্কিন কর্মী নিয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে, যেভাবে মার্কিন সংস্থা অ্যামাজন, অ্যাপেল,মাইক্রোসফ্ট তাদের সংস্থায় কর্মী নিয়োগ করে তাতে প্রভাব পড়বে । শুধু তাই নয়, প্রভাব পড়বে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস ও উইপ্রো-তেও। যদিও এবিষয়ে ইনফোসিস-এর তরফে কিছু মন্তব্য করা হয়নি। তবে সংস্থার তরফে,মার্কিন 'ভিসা' সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। টিসিএস-এর মতো অন্যান্য ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গুলি এবিষয়ে জানিয়েছে, ক্রমাগত তারা মার্কিন সংস্থা গুলিকে বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত সমর্থন যুগিয়েছে,তাদের উন্নতমানের কর্মীদের কাজের মাধ্যমে।[জিনপিং, পুতিন, নওয়াজ শরিফের আগে কেন মোদীর সঙ্গে কথা বললেন ট্রাম্প?]
এদিকে, খসরার প্রস্তাবে স্পষ্ট বলা হয়েছে, জাতীয় স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি খুব শিগগিরই লাগু করা হবে। পাশপাশি বলা হয়েছে, 'ভিসা' নীতি পদ্ধতি এমনভাবেই তৈরি হবে যাতে মার্কিন কর্মীদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা যায়। নিয়োগের ক্ষেত্রে মার্কিন কর্মীদের বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা হবে। এই নীতি বর্তমানে আইনতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের ওপরও লাগু হবে। এছাড়াও, এইচ-১বি ও এল-১ ভিসার সূত্রে যাঁরা আমেরিকায় রয়েছেন, এবার থেকে তাঁদের স্বামী বা স্ত্রীদের 'এমপ্লয়মেন্ট কার্ড' পাওয়া অসুবিধাজনক হবে।
তবে এখনও একটি বিষয় অস্পষ্ট, যে এই খসরায় মার্কিন রাষ্ট্রপতির সিলমোহর পড়ার পর, তা কতটা নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলবে ভারতীয়দের ওপর। এর আগে ডেমোক্রেট কংগ্রেসের তরফে একটি বিল আনা হয়, যাতে এইট-১বি ভিসাকে প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
এবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বভাবতই সিলিকন ভ্যালির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সংঘাত আরও ঘোরতর হয়ে উঠল। ইতিমধ্যেই সিরিয়া, সুদান, ইরান, লিবিয়া,ইরাক-সহ ৭ দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর শনিবার যে নিষেধাজ্ঞা জারি নিয়ে বিস্তর জল গড়িয়েছে মার্কিন রাজনীতিতে। ট্রাম্পের নীতির সমালোচনায় এগিয়ে এসেছেন গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই , ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ সহ একের পর এক বাণিজ্যিক সংস্থার প্রধান।