জনবিস্ফোরণে জেরবার, সমুদ্রের গভীরে আস্ত শহর বানাচ্ছে জাপান!
গোটা দেশে থিকথিক করছে লোক। বাসস্থানের সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। তাই সমুদ্রের নীচে আস্ত শহর তৈরি করার পরিকল্পনা করল জাপান! অন্তত পাঁচ হাজার লোক সেখানে থাকতে পারবে। জাপানিদের এমন ভাবনাচিন্তায় হাঁ হয়ে গিয়েছে গোটা দুনিয়া।
সারা বিশ্বে বেড়েই চলেছে জনসংখ্যা। জমি কমে আসছে, তা বসবাস করার জন্য হোক কিংবা খাদ্য উৎপাদন। শহরে লোক বেড়ে যাওয়ায় জাপানেও রিয়েল এস্টেটের দাম চড়ছে হু-হু করে। টোকিও, ওসাকা, ইয়োকোহামা ইত্যাদি শহরে তো দাম ফেললেও এখন মনের মতো বাড়ি পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠছে। বড় দেশ চীন বা ভারতই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে হাঁসফাঁস করছে, জাপান তো অনেক ছোট! তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে এ বার সমুদ্রকে বেছে নিচ্ছেন জাপানিরা।
যে সংস্থাটির ইঞ্জিনিয়াররা এমন দুঃসাহসী পরিকল্পনা নিয়েছেন, সেই শিমিজু কর্পোরেশন অতিশয় আত্মবিশ্বাসী। শিমিজু কর্পোরেশনের এক কর্তা হিডিও ইমামুরা বলেন, "আমি জানি, এটা অসম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু আমরা সেটা সম্ভব করে দেখাব। যখন মোবাইল ফোনের ধারণা এসেছিল, তখনও লোকে সংশয়ে ভুগত। এমন আবার হয় নাকি! আমি বিশ্বাস করি, জাপানের এই মডেল একদিন সারা পৃথিবী গ্রহণ করবে।"
কেমনভাবে গড়ে উঠবে শহর?
মূল কাঠামো তৈরিতে ব্যবহার করা হবে প্যাঁচালো থাম বা স্পাইরাল পিলার। তা গাঁথা থাকবে সমুদ্রগর্ভের সঙ্গে। অর্থাৎ সমুদ্রস্রোতে শহরের কাঠামোটির স্থানচ্যুতি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। জলে বসবাস করতে হবে, তাই গোটা শহরটা থাকবে একটা স্বচ্ছ গোলকের ভিতর। এর অন্দরে পাঁচ হাজার লোক থাকতে পারবে। বেডরুমের স্বচ্ছ দেওয়ালে টোকা দিয়ে যাবে রাক্ষুসে হাঙর!
শুধু থাকার বাড়িই নয়, শহরটিতে থাকবে ব্যাঙ্ক, হোটেল, হাসপাতাল সব কিছু
কিন্তু শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে কী করে? কোনও ব্যাপারই নয়! সমুদ্রের তলায় প্রাপ্ত মিথেন গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। কয়লার মতো মিথেনের ভাণ্ডার সীমিত নয়, অতএব চিন্তাও নেই! টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার সবই চলবে।
রোদ ঝলমলে দিনে গোটা শহরটা ভেসে উঠবে সমুদ্রের ওপরে। আবার আবহাওয়া খারাপ থাকলে সুড়ুৎ করে ডুব দেবে জলে। এই নগরী থেকে মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের জন্য থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত একটি সেতু।
শিমিজু কর্পোরেশন জানিয়েছে, শহরটি তৈরি করতে ১৬০০ কোটি পাউন্ড খরচ পড়বে। পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০২০ সাল নাগাদ শহরের মূল কাঠামো তৈরি হয়ে যাবে। ২০৩০ সাল নাগাদ তা মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়ে যাবে। শুধু থাকার বাড়িই নয়, শহরটিতে থাকবে ব্যাঙ্ক, হোটেল, হাসপাতাল সব কিছু।
প্রসঙ্গত, এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে 'ওশন স্পাইরাল'।