৭ ঘন্টার তালিবানি তাণ্ডবের পর জঙ্গিমুক্ত পেশোয়ারের স্কুল, মৃত ১৩২ পড়ুয়া-সহ ১৪৫
পেশোয়ার, ১৭ ডিসেম্বর : এর আগে তালিবানরা প্রায় ১০০০টি স্কুলে নয় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, নয় পুড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েদের অধিকারের দাবিতে আওয়াজ তোলায় গুলি করে মালালা ইউসুফজাই-কে গুলি করে মুখ বন্ধ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে।
কিন্তু মঙ্গলবার যা হল তা অকল্পনীয়। নিজেদের যুদ্ধকে শিক্ষাক্ষেত্রে যেভাবে আরোপ করল তালিবানি জঙ্গীরা তার নিন্দার ভাষা নেই। পেশোয়ারের স্কুলে হামলা চালিয়ে প্রাণ নিল ১৪৫ জনের। যাঁদের মধ্যে ১৩২ জনই স্কুলের পোশাক পড়া পড়ুয়ারা। প্রায় সাত ঘন্টা স্কুলের ভিতর তাণ্ডব চালানোর পর অবশেষে জঙ্গিমুক্ত হল পেশোয়ারের স্কুল।
সাত ঘন্টার এই তালিবানি তাণ্ডব চালায় ৯ জঙ্গির একটি জস। স্কুলের বারান্দা থেকে অ্যাসেম্বলি হলে মুহুর্মুহু চলতে থাকে গুলি বর্ষণ। একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটে গ্রেনেডের। সূত্রের খবর অনুযায়ী স্কুলে এদিন প্রায় ১৫০০ ছাত্র ও ৭০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন।
এই বিভীষিকার সাতঘন্টা যে কীভাবে কেটেছে ছাত্রদের তা শব্দে প্রকাশ করা মুশকিল।ছাত্রদের কপালের মাঝখানে গুলি মেরে এফোরওফোর করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বেঞ্চের তলায় লুকিয়ে ছিল তাদের টেনে হিঁচড়ে বের করে আনা হয়েছে দেখানোর জন্য, শিক্ষক শিক্ষিকাদের মারার সময় কেমন করে রক্তের ফুলকি ঠিকরে বেরয়।
স্কুলের ভিতরে এক একটা বিস্ফোরণের শব্দ স্কুলের গেটের বাইরে কান্নার রোল তুলেছে অভিভাবকদের মধ্যে। সন্তানকে হারানোর সম্ভাবনা যে ক্রমেই বেড়ে চলেছিল সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে। ক্রমেই স্বার্থপর হয়ে উঠছিলেন বাবা-মায়েরা, অন্য যে কোনও ছাত্র মারা যাক আমার সন্তান যেন সুরক্ষিত থাকে, বারবার মন থেকে এই প্রার্থনাই বেরচ্ছিল।
শুধু দেশ বিদেশের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা নন, টলিউড-বলিউড তারকারা নন এই হামলার নিন্দায় মুখ খুলেছে অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনও। আফগান তালিবান যারা সন্ত্রাসকে একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে হাজার হাজার আফগান নাগরিকের খুন করে, তারাও টুইটারে পোস্ট করে এই হামলার নিন্দা করে জানিয়েছে এই আক্রমণ অ-ইসলামি এবং তারা এই ঘটনায় মর্মাহত।প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, জঙ্গিহামলা শুরু হয় সকাল ১০ টা নাগাদ। আধাসামরিক বাহিনির ছদ্মবেশে স্কুলের মধ্যে ঢুকে পড়ে ৯ বন্দুকধারি জঙ্গি। পিছনের দেওয়াল টপকে ঢুকে পড়ে তারা। ধেয়ে যায় মূল ভবনের দিকে তার পর থেকেই গুলি ও গ্রেনেড বর্ষণ শুরু করে।
এই ঘটনার দায় স্বীকার করে, তালিবান মুখপাত্র মহম্মদ কুরাসানি জানিয়েথেন, তারা পেশোয়ারের সামরিক পাবলিক স্কুলকে নিশানা করেছিল কারণ, সেনারা তাদের ছেলেমেয়েদের সেনা হওয়ার জন্য এখানে পড়াশোনা করায়। ছেলেমেয়ে হারালে কেমন লাগে তা এবার ইসলাম অধিকারের শত্রুরা উপলব্ধি করতে পারবে।
পেশোয়ারের হাসপাতালের দৃশ্যটা আরওই ভয়াবহ। ছোট ছোট কফিনে ভরে গিয়েছে হাসপাতালের দালান। চাপ চাপ রক্তের দাগ যেন চোখের জলেও ধুচ্ছে না।