সন্তানদের আত্মঘাতী হামলায় নিয়ে গেলো যে বাবা-মা
বিভিন্ন সময়ে আত্মঘাতী হামলায় নারী বা শিশুদের ব্যবহার করা হলেও অভিভাবকদের তত্বাবধানে সন্তানদের আত্মঘাতী হামলায় অংশগ্রহণ করার ঘটনা এই প্রথম।
ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাকে ব্যতিক্রমী মনে করা হচ্ছে কারণ অভিভাবক ও সন্তানসহ দুটি পরিবারের সদস্যরা হামলাটি পরিচালনা করে।
আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য এর আগেও শিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু শিশুদের সাথে নিয়ে বাবা-মায়ের আত্মঘাতী হামলা করা ঘটনা বিরল।
সাধারণত পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে অথবা মাদক ব্যবহারের পর হামলায় বাধ্য করা হয়।
রবিবার সুরা-বায়া শহরের একটি গির্জায় নিজের দুই মেয়েসহ আত্মঘাতী বোমা হামলা করেন একজন মা। দুই ছেলেসহ আরো বাবা হামলা চালান আরো দু'টি গির্জায়।
মেয়েদের বয়স ছিল নয় ও বারে। ছেলেদের একজনের বয়স ১৮ ও অপরজনের ১৬।
নানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দোনেশিয়া বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্দার রেমন্ড আরিফিয়ান্তো বিবিসি'কে বলেন, "ইন্দোনেশিয়ায় এই ধরনের আক্রমণ আমরা আগে লক্ষ্য করি নি।"
সোমবার একই শহরে দুইজন অভিভাবক তাদের তিন সন্তান নিয়ে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা করে। তাদের মধ্যে একজন জীবিত আছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মুসলিমপ্রধান দেশে সম্প্রতি ইসলামপন্থী জঙ্গিরা শক্তিশালী হয়েছে।
কেন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছে?
জঙ্গি হামলার বিষয়ে শিশুদের সাধারণত কেউ সন্দেহ করে না। এটিকে শিশুদের হামলায় যুক্ত করার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন ইন্দোনেশিয়ার জেন্দেরাল আখমাদ ইয়ানি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়োহানেস সুলায়মান।
প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুরা নিরাপত্তারক্ষীদের মনে সাধারণত কম সন্দেহের উদ্রেক ঘটায়।
"নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা সাধারণত নজরে রাখার চেষ্টা করে যে কোনও ব্যক্তি সন্দেহজনক কিছু বহন করছে কি না," বলেন মি. আরিফিয়ান্তো
"কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের শিশুদের ওপরও নজর রাখতে হবে।"
শুরুর দিকে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের আত্মঘাতী আক্রমণ পরিচালনা করতো পুরুষরাই। পরবর্তীতে তালিবান ও ইসলামিক স্টেটের মত জঙ্গি সংগঠনরা হামলায় নারীদের ব্যবহার করা শুরু করে।
নারী আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের পর পরবর্তী ধাপে শিশুদের আক্রমণে ব্যবহার করাই ছিল। ???
তবে ইন্দোনেশিয়ায় এর আগে কখনোই নারী বা শিশুদের আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহার করা হয়নি।
মি. সুলায়মানের মতে এটি ইন্দোনেশিয়ার সমাজ ব্যবস্থার সবচেয়ে দুর্বল অংশটির ফায়দা নিচ্ছে।
"শিশুদের কাছ থেকে এরকম বিপদের আশঙ্কা সাধারণত করা হয় না - আর অভিভাবকদের সাথে থাকা শিশুদের তো নিরাপত্তারক্ষীরা সবসময় ঠিকভাবে তালাশিও নেয় না।"
এর আগে কোথায় এরকম ঘটনা ঘটেছে?
আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার নতুন নয়। ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে তালিবানরা আর নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম এর আগে এই ধরণের আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে।
আইএস এর আগে দরিদ্র পরিবার ও শরণার্থী শিবির থেকে শিশুদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে জঙ্গি সংগঠনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছে।
এরপর বিশেষ ট্রেনিং ক্যাম্পে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, কখনো ব্যবহার করা হয়েছে প্রচারণামূলক ভিডিওতে।
বিভিন্ন সময়ে শিশুদের আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহার করেছে নাইজেরিয়ার বোকো হারামও। জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী গতবছরে নাইজেরিয়ায় আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার করার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেশী ছি
শিশুদের অপহরণ করে ও তাদের ওপর মাদক ব্যবহার করে কখনো কখনো শিশুদের আত্মঘাতী হামলায় বাধ্য করে বোকো হারাম। অনেকসময় পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়েও বাধ্য করা হয় শিশুদের।
এই ধরণের ঘটনা কি আরো ঘটতে পারে?
অভিভাবকরা হামলায় কেন তাদের সন্তানদের ব্যবহার করলেন তা এখনো পরিষ্কার নয় বিশ্লেষকদের কাছে।
মি. সুলায়মান বলেন, "আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে জঙ্গিদের সাথে যোগ দেয়ার মত অনেক শিশুই রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়।"
"ইন্দোনেশিয়ায় অনেক মৌলবাদী স্কুল বা আবাসিক স্কুল রয়েছে, যেখানকার শিশুদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা উগ্রপন্থী নেতাদের জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ।"
তাই মি. সুলায়মান আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এ ধরণের হামলা ভবিষ্যতে আবারো দেখা যেতে পারে। ল।