ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক আদতে প্রচার, ওয়াশিংটন পোস্টকে জানালেন পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের গ্রামবাসীরা
ভারতীয় সেনা কি সত্যিই ২৮ সেপ্টেম্বরের রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দিয়ে এসেছিল? গত রবিবার (অক্টোবর ২) দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের কয়েকটি গ্রামের মানুষ বলেন যে যদিও তাঁরা ভারতীয় সেনার তরফ থেকে গোলাগুলির আওয়াজ পেয়েছেন সেদিন রাতে, কিন্তু কোনও 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' তাঁরা প্রত্যক্ষ করেননি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রচারিত দৈনিকটিতে বলা হয়েছে যে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ভিমবের, ছম্ব এবং সাহমনি নামক নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া জেলাগুলির বাসিন্দারা বলেন যে গত বুধবার গভীর রাতে গোলাগুলির আওয়াজে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু ভারতীয় সেনা সীমানা পেরিয়ে জঙ্গিদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানাননি কেউই।
বৃহস্পতিবার (সেপ্টেম্বর ২৯) ভারতের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমের সামনে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'-এর কথা ঘোষণা করার পরপরই পাকিস্তান এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয়, ভারতীয় সেনারা শুধু নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে লক্ষ্য করে সীমিত গুলি চালিয়েছে যাতে দু'জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। এর বেশি কিছু নয়।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সেনা এই অভিযান চালায় জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে এক সেনা ছাউনিতে চোরাগোপ্তা জঙ্গিহানায় তাদের ১৯ জন সহকর্মীর নিহত হওয়ার ঠিক দশদিন পর। উরি হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশজুড়ে ধিক্কারের বন্যা বইতে শুরু করে এবং নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপর চাপ আসতে থাকে পাকিস্তানকে সমুচিত জবাব দেওয়ার।
মোহাম্মদ বোটা নামক এক স্থানীয় গ্রামবাসী দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান যে গোলাবর্ষণের আওয়াজ তাঁদের কাছে নতুন কিছু নয় কিন্তু ওইদিন রাত্তিরে যেন গোলাগুলি একটু বেশিই চলছিল। ওই গ্রামবাসী ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদককে জানান যে গোলাগুলির আওয়াজ শুনে তাঁরা তো ভেবেছিলেন যে যুদ্ধ বুঝি লেগেই গিয়েছে।
কিন্তু অত কিছুর মধ্যেও ওই রাতে ভারতীয় সেনা সীমালঙ্ঘন করেছিল বলে স্থানীয়দের কেউই বলেননি, জানাচ্ছে প্রতিবেদনটি।
বোটা বলেন যে তাঁরা কোনও সেনাকে বা হেলিকপ্টারকে আসতে দেখিনি। ভারতীয় বাহিনীর একাধিক জঙ্গি নিকেশের দাবিকে নস্যাৎ করে তিনি বলেন যে তাঁরা বহু বছর যাবৎ ওই অঞ্চলে রয়েছেন, সবাই সবাইকে চেনেন। তাই কোনও জঙ্গি যদি ওখানে লুকিয়ে থাকতো তাঁরা ঠিক খোঁজ পেতেন। "এসবই ভারতের প্রচার," বোটা বলেন মার্কিন দৈনিকটিকে।
ভিমবের নামক নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে অবস্থিত আরেকটি মফস্সলে মেহরান ইউনাস শেখ জানান গোলাগুলি শুরু হওয়ার পরে স্থানীয় সমস্ত স্কুল এবং সরকারি অফিস-কাছারি বন্ধ হয়ে যায়। সীমার কাছে বসবাসকারী অনেক মানুষই পালিয়ে গিয়েছেন সুরক্ষিত আশ্রয়ে বলে আমেরিকান কাগজটিকে জানান।