এই দেশে স্মার্টফোনের চেয়েও সস্তা একে ৪৭, কালাশনিকভ রাইফেল!
পেশোয়ার, ২৯ জুলাই : দারা আদম খেল। পাকিস্তানের একটি উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল। পাখতুন ও আফ্রিদি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস এখানে। সেভাবে দেখতে গেলে সুপরিচিত হওয়ার মতো কিছুই নেই দারা আদম খেল-এ। তবে অন্যভাবে এই জায়গা সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছে। [১০০ সন্তানের পিতা হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছেন এক পাকিস্তানি নাগরিক!]
এই জায়গাটি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনার বাজার। সারা দেশের সব প্রদেশ থেকে ধাতুর টুকরো সব জমা হয় দারা আদমে। আর তারপরে এখানকার কারখানায় সেই দিয়ে তৈরি হয় একে ৪৭, কালাশনিকভের মতো অত্যাধুনিক রাইফেল ও অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র। যার দাম অন্য সব জায়গার চেয়ে কম। এমনকী একটি স্মার্টফোন কিনতে যা খরচ হয়, তার চেয়ে কমে একেবারে পাইকারি মূল্যে এখান থেকে অস্ত্র কেনা যাবে। [টাওয়ার ছাড়াই মোবাইলে যোগাযোগের নয়া উপায় বাতলেছে পাক জঙ্গিরা!]
দারা আলম এক ভয়ঙ্কর জায়গার নাম। দুষ্কৃতীদের চারণভূমি এই এলাকা আজকের নয়, ১৯৮০-র দশক থেকেই এমন হয়ে রয়েছে। পেশোয়ার থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরের এই এলাকা যেন দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য। শুধু কমদামে আগ্নেয়াস্ত্রই নয়, স্মাগলিং, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে চোরাই গাড়ির ব্যবসা সব চলে এখানে। জাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি চাইলে সেটাও নামমাত্র কড়িতে পেয়ে যাবেন এখানে। [পাকিস্তানে ছাপা জাল নোট এই ৩টি দেশ ঘুরে ভারতে আসে!]
আশির দশকে এই ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে। আফগান জেহাদিরা সীমান্ত পেরিয়ে এসে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময়ে এখান থেকে অস্ত্র কিনতে শুরু করে। পরে সেই যুদ্ধ থেমে গেলেও অস্ত্রের কারবারে ভাটা পড়েনি। এরপর তালিবানরা তার দখল নেয়। গোটা দারা আদম খেল জুড়ে সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে তালিবানরা। [লাদেনকে মারার জন্য আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করে পাকিস্তান!]
তবে এখন সেসব থেকে বেরিয়ে এসেছে দার আদম খেল। তবে অস্ত্র ব্যবসা যেমন চলার তেমনই চলছে। নওয়াজ শরিফের সরকার রাস্তায় রাস্তায় নজরদারি চালালেও তা 'নাম কে ওয়াস্তে'। অন্দরে অন্দরে ফুলে ফেঁপে উঠছে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা।
এক অস্ত্র ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাজারে কিনতে গেলে MP5 সাবমেশিন গানের দাম পড়বে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু দার আদম খেলে সেটাই আপনি পেয়ে যাবেন মাত্র ৭ হাজার টাকায়, সঙ্গে একবছরের গ্যারান্টি। কালাশনিকভ রাইফেলের দাম এখানে ৮ হাজার টাকার মতো। যা ভালো স্মার্টফোনের চেয়েও অনেক কম দাম।
এখানে বছরের পর বছর ধরে এই অস্ত্র ব্যবসা চলছে। এর কোনও লাইসেন্স নেই, এটা অবৈধ। অথচ পাকিস্তান প্রশাসনের কেউ দেখেও দেখেন না। আর সেই সুযোগেই এই এলাকায় বেড়ে চলেছে জঙ্গিদের আনাগোনা। সব দেখেও চোখ বন্ধ, মুখে কুলুপ সরকারের। হবে নাই বা কেন? দেশটার নাম যে পাকিস্তান।