For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

মর্গে থাকা লাশ: বছরের পর বছর গন্তব্যহীন হিমায়িত মানুষেরা

পারিবারিক বিরোধ কিংবা আইনি জটিলতায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বেশ কয়েকটি মরদেহ। কবে জটিলতা কাটবে আর কবেই বা তারা সমাহিত হবেন অন্তিম শয়ানে কেউ জানে না।

  • By Bbc Bengali

মরদেহ
Getty Images
মরদেহ

এ যেন 'মরেও শান্তি নেই'। জাগতিক দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার পরও স্বজনেরা তাদের শেষ বিদায় জানাননি কিংবা জানাতে পারেননি। তাদের কেউ হাসপাতালে মারা গেছেন, কারোবা হয়েছে অপমৃত্যু।

আইনি জটিলতায় আটকে গেছে অন্তিম শয়ান, তাই তাদের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরে।

বছরের পর বছর হিমঘরে কাটিয়ে দিচ্ছেন তারা।

চার বছর মর্গে থেকে জুনে গাজীপুরে সমাহিত হয়েছেন রবার্ট মাইরন বার্কার

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রবার্ট মাইরন বার্কারের মৃতদেহ চার বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থাকার পর এ বছরের ২৪শে জুন গাজীপুরের একটি চার্চে সমাহিত করা হয়।

* আড়াই বছর ধরে ঢাকা মেডিকেলে মার্কিন নাগরিকের লাশ

* চার বছর মর্গে থাকা লাশ সৎকার হবে ইসলাম ধর্মমতে

* মৃতদেহের 'ধর্ম' নিয়ে সংশয়, মর্গে পড়ে আছে কিশোরীর লাশ

পেশায় একজন বিদেশি উন্নয়নকর্মী মি. বার্কারের সাথে বাংলাদেশি মাজেদা খাতুনের বিয়ে হয় ২০১৪ সালের ১লা এপ্রিল।

দুই হাজার আঠারো সালের ২৫ই মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার দক্ষিণখানের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।

ময়নাতদন্তের পর তাকে কোথায় সমাহিত করা হবে তা নিয়ে জটিলতা শুরু হয়।

বিদেশি নাগরিক হওয়ায় দূতাবাসের ছাড়পত্র ছাড়া তার লাশ এদেশে সৎকার করা যাচ্ছিল না।

দুই হাজার একুশ সালের জানুয়ারিতে বিবিসিকে মি. বার্কারের বাংলাদেশি স্ত্রী মাজেদা খাতুন বলেছিলেন, মি. বার্কারের অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিবারকে জানানো হলেও কেউ ফিরতি কোন যোগাযোগ করেনি।

প্রায় চার বছর অমীমাংসিত থাকার পর ২০২২ সালের জুনে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এবং পুলিশের মাধ্যমে গাজীপুরের মাওনায় একটি চার্চে তাকে সমাহিত করা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন দক্ষিণখান থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আজিজুল হক মিয়া।

তিনি বলেছেন, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের অনাপত্তিপত্র নিয়ে একজন দূতাবাস কর্মকর্তা, পুলিশ এবং মাজেদা খাতুনের উপস্থিতিতে মি. বার্কারকে সমাহিত করা হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়ে অর্ধযুগের বেশি ঢাকা মেডিকেলে মর্গে

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন ওই দেশের নাগরিক থিইসিয়া সিকেওয়েস্ট।

মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান নামে ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে নিয়ে ২০১৫ সালের শেষদিকে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু কয়েক মাস পর ২০১৬ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় থিইসিয়ার।

থিইসিয়ার স্বামীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয় তখন।

কুমিল্লা সদর হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছিল, তাতে থিইসিয়ার শরীরে কীটনাশকের উপস্থিতি পেয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বিবিসিকে বলেছেন, ওই মামলায় পুলিশ মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল।

কিন্তু এ বছরের জুলাই মাসে মি. হাসানুজ্জামান মারা যান বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা।

এদিকে, সেই ২০১৬ সাল থেকে মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের হিমাগারে পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের ইনচার্জ মোহাম্মদ সেকান্দার আলী।

মৃতদেহ
Getty Images
মৃতদেহ

মি. আলী বিবিসিকে বলেছেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই সময় মর্গের ব্যবস্থা ছিল না, সেজন্য দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক এই নারীর মরদেহ এখানে পাঠানো হয়।

তিনি বলেছেন, থিইসিয়ার লাশ নিতে কেউ আসেনি, তার বাংলাদেশি স্বামী কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা স্বজন-কেউই আসেনি তাকে নিতে।

বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাস নেই, থিইসিয়ার নিজের দেশ থেকেও যে কোন সন্ধান-প্রত্যাশী আসেনি তার খোঁজে, তার এটি একটি কারণ হতে পারে।

ধর্ম পরিচয় আর দুই স্ত্রীর দ্বন্দ্বে আট বছরের বেশি সময় ধরে মর্গে

মৃত্যুর পর আট বছরের বেশি সময় ধরে খোকন ওরফে খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের পড়ে আছে।

কোন ধর্মমতে তাকে সমাহিত করা হবে এ দ্বন্দ্বে তার দুইজন স্ত্রী, যাদের একজন হিন্দু এবং একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তারা আদালতের দ্বারস্থ হন।

কিন্তু সে মামলাটি এখনো মীমাংসা হয়নি।

লাশ হস্তান্তর নিয়ে জটিলতায় খোকন কোন ধর্মের ছিলেন ছিলেন তা জানতে আদালতে মামলা হয়।

মি. খোকনের স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক হাবিবা আকতার খানম বিবিসিকে বলেছেন, ২০১৮ সালে এই মামলার রায়ের তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এর পর চারবার পিছিয়েছে সেই তারিখ।

তিনি জানিয়েছেন, ১৯৮০ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন খোকন নন্দী, এরপর ১৯৮৪ সালে তাদের বিয়ে হয়।

আদালত
Getty Images
আদালত

বিয়ের ত্রিশ বছর পর ২০১৪ সালের ২৬শে জুন বারডেম হাসপাতালে মারা যান মি. খোকন।

এরপরই কোন ধর্মমতে তার দাফন বা সৎকার হবে তা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়, ফলে তখন তার মরদেহের ঠাঁই হয় বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।

সেখান থেকে ওই বছরের নভেম্বরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় মি. খোকনের লাশ।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বলতে হাবিবা আকতার খানম কাঁদছিলেন, বিবিসিকে তিনি বলেন, "আমি খোকনের সম্পত্তি চাইনি কখনো, চাই না। আমি শুধু সম্মানের সাথে ইসলাম ধর্মমতে খোকনকে দাফনের অধিকার চাই।"

বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মর্গে এমন বিরোধপূর্ণ জটিলতা কত মরদেহ আটকে আছে তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।

তবে কয়েক বছর আগে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে এক নারীর মরদেহ চার বছর ধরে পড়ে থাকার খবর আলোচিত হয়েছিল।

দুই হাজার চৌদ্দ সালে লিপা রাণী থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে হোসনে আরা আত্মহত্যা করার পর থেকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের হিমঘরে ছিল তার মরদেহ।

কোন্ ধর্মমতে তার লাশের সৎকার হবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল তার বাবা এবং শ্বশুর এই দুই পরিবারে।

দুই পরিবারের কেউই ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না।

শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে মেয়েটির লাশ ইসলাম ধর্মমতে দাফনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

লাশ সংরক্ষণে জটিলতা

অনেক সময়ই হাসপাতালের মর্গে দীর্ঘ সময় লাশ সংরক্ষণ বেশ কঠিন একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

কারণ দেশের বড় সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই হত্যা, আত্মহত্যা, বা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণে অনেক মৃতদেহ আসে ময়নাতদন্তের জন্য।

লাশ প্রতীকী ছবি
Getty Images
লাশ প্রতীকী ছবি

অনেক লাশ আসে যা ঘটনার সাথে সাথে শনাক্ত করা যায় না, পরিচয় নিশ্চিতের জন্য সেগুলো সংরক্ষণ করতে হয়।

এজন্য যে রকম সরঞ্জামাদি প্রয়োজন সরকারি হাসপাতালে তার ঘাটতি আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের ইনচার্জ মোহাম্মদ সেকান্দার আলী বলেছেন, তার হাসপাতালে এখন লাশ সংরক্ষণের সুবিধা বেড়েছে।

কিন্তু বছর খানেক আগেও হাসপাতালে মাত্র পাঁচটি ফ্রিজারে ২০টি লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল, যার মধ্যে তিনটি ফ্রিজার নষ্ট ছিল কয়েক বছর ধরে।

ওই তিনটি ফ্রিজার এখনো নষ্ট।

কিন্তু কয়েক মাস আগে ৪০টি লাশ সংরক্ষণ করা যায় এমন একটি বড় ফ্রিজার দেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে, তার ফলে এখন মরদেহ সংরক্ষণের সুযোগ বেড়েছে।

মি. আলী জানিয়েছেন, কোন মরদেহ কতদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হবে তার নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।

শনাক্ত করা যায়নি, এমন বেওয়ারিশ লাশ একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়।

কিন্তু আইনি জটিলতা আছে এমন লাশের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি ছাড়া সৎকারের অনুমতি দেয়া হয় না।

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর:

বিনিয়োগে প্রধান বাধা দুর্নীতি-যুক্তরাষ্ট্রের এ রিপোর্ট নিয়ে যা বলছে বাংলাদেশ সরকার

তুরস্কের বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন কী, কেন কিনছে বাংলাদেশ

জন্মস্থান মৌলভীবাজার, জাতীয় পরিচয়পত্রে হয়ে গেল ভেনেজুয়েলা

নেপাল: বাঘ ফিরে আসায় একইসাথে উচ্ছ্বাস এবং আতংক

English summary
Corpses in the morgue: people frozen with no destination for years in Bangladesh
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X