(ছবি) উত্তরপ্রদেশ জয়ে বিজেপির ৯ সুপারহিট ফর্মুলা!
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের ফল স্পষ্ট হতেই চার্ট বাস্টারে ফের এক নম্বরে একটাই গান ,"রং দে তু .... গেরুয়া..."।
লখনৌ, ১১ মার্চ : উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের ফল স্পষ্ট হতেই চার্ট বাস্টারে ফের এক নম্বরে একটাই গান ,"রং দে তু .... গেরুয়া..."।[(ছবি) উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নেতানেত্রীদের প্রতিক্রিয়া ]
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে অখিলেশ যাদব, রাহুল গান্ধী, মায়াবতী ফ্যাক্টর সবই ডাহা ফেল। চারিদিকে শুধুই 'মোদী হাওয়া'। ম্যাজিক ফিগারের থেকে অনেক বেশি আসনে জিতে সরকারে আসা পাকা করে নিয়েছে বিজেপি। নির্বাচনী প্রচারে কোনও প্রার্থীকেই দল মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে প্রচারে আনেনি। এদিকে নির্বাচনী প্রচারে সেই ব্র্যান্ড মোদীই ছিল বিজেপির হাতিয়ার। আর তাই তো, ঠিক ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রতিফলন ২০১৭-র উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটেও। যেখানে 'বিজেপির জয়'-এর থেকে লোকমুখে প্রাধান্য পাচ্ছে 'মোদী ঝড়' বা 'মোদীর জয়'।[(ছবি) কেশব মৌর্য থেকে যোগী আদিত্যনাথ, উত্তরপ্রদেশের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকা ]
কিন্তু উত্তরপ্রদেশে এই বিশাল জয়ের সুপারহিট ফর্মুলাটি কী?
মোদী ম্যাজিক অব্যাহত
উত্তরপ্রদেশের ফলাফলে স্পষ্ট যে রাজ্যে 'মোদী রাজ্য' এখনও অব্যাহত। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে যে মোদী হাওয়া শুরু হয়েছিল তা এখনও অব্যাহত।
প্রায় প্রত্যেকটি ভোট পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সমীক্ষায় ধরা পড়েছে রাজ্যে মোদীর হাইভোল্টেজ জনপ্রিয়তার আভাস। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী আগে থেকে ঘোষণা না করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিশ্মাতেই অর্ধেক বাজিমাৎ হয়েছে।
অধিকাংশ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে অখিলেশ সিং যাদব সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাও প্রধানমন্ত্রীর ম্যাজিকে হারিয়ে গিয়েছেন তিনিও। এই বিষয়টা অন্তত পরিস্কার ৩ বছর কেন্দ্রে থাকার পরও মোদী বিরোধী কোনও হাওয়া এখনও ওঠেনি।
'সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং'
মোদী ফ্যাক্টর ছাড়াও অমিক শাহের স্ট্র্যাটেজি দারুণভাবে কাজে এসেছে। রাজ্যে জাতি ভেদের রাজনীতি দুর করতে সফল হয়েছেন বিজেপি সভাপতি। কেশব প্রসাদ মৌর্যকে দলের রাজ্য সভাপতি করা থেকে শুরু করে স্বামী প্রসাদ মৌর্যকে দলে আনা, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাউকে প্রচারে না আনার সিদ্ধান্তগুলি খুব ভেবেচিন্তেই নিয়েছেন শাহ।
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে অমিত শাহের 'তিনের বিরুদ্ধে এক' স্ট্র্যাটেজি দারুণভাবে সফল। নির্বাচনকে সহজ ব্যখ্যা করা হয়েছিল, সপার মুসলিম-যাদব যৌথ ভোট এবং বসপার জাটভ ভোটের বিরুদ্ধে অন্যান্য জাতির ভোট যা বিজেপির জন্য মনে করা হয়েছিল। এই নীতিতে কাজ করতে গিয়ে বিজেপি প্রায় ১৫০টি আসন যাদব নয় এমন পিছিয়ে পড়া বিভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন। বিজেপির সঙ্গে আপনা দল এবং সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির মতো দলের জোট সাহায্য করেছে পটেল, কুরমী এবং রাজভারের মতো অ-যাদব ওবিসিদলের ভোট জোগাড় করতে।
বিহার থেকে শিক্ষা
বিহারের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে বিজেপি। বিহারে মহাজোটের বিপক্ষে যেভাবে ভেঙে পড়েছিল বিজেপি তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছিল বিশেষ। বিহারে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রধান প্রচারক হিসাবে মোদীকেই সবসময় সামনে রাখা হয়েছিল এখানে সে ভুলটা করেনি বিজেপি। স্থানীয় অনুষ্ঠানের সময় যাতে স্থানীয় নেতারা গুরুত্ব পান সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় সংগঠন ফ্যাক্টর যে নির্বাচনে কাজ করবে তা ভাল করেই বুঝতে পেরেছিল বিজেপি।
জয়, শুধু জয়ই ছিল লক্ষ্য
"জয় এবং জয়ী প্রার্থী গুরুত্ব রাখে" এই মন্ত্র নিয়ে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে নেমেছিল বিজেপি। যারা অন্য দল থেকে বিজেপিতে এসে যোগ দিয়েছে এমন প্রায় ১০০ জন প্রার্থীকে নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। ফলে অন্যান্য দলগুলি থেকেও কিছুটা করে ভোট টানতে সমর্থ হয়েছে বিজেপি।
ইতিবাচক 'নোটবাতিল'
বিরোধীরা নোট বাতিলকে সাধারণ মানুষ বিরোধী পদক্ষেপ বলে চিৎকার করলেও বিজেপির ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ কিন্তু নির্বাচনের ট্রাম্প কার্ড । চণ্ডীগড়, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রের পুরসভা নির্বাচন হোক হা ওড়িশার পঞ্চায়েত নির্বাচন, নোট বাতিলের পর থেকে বিজেপির ঝুলিতে জয় এসেছে প্রত্যেকবার। বলা যায় বিজেপির ক্ষেত্রে নোট বাতিল পদক্ষেপ সৌভাগ্য নিয়ে এসেছে।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। উত্তরপ্রদেশে গ্রামীন জনসংখ্যা বেশি, একটা বড় অংশই পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র থেকে উঠে আসা অভিবাসী শ্রমিক দল। মনে করা হচ্ছিল এই অংশ নোট বাতিলের জেরে বড় ধাক্কা খেয়েছে এবং তার নেতিবাচক প্রভাব নির্বাচনে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে পড়বে। তবে সে গুড়ে বালি।
শেষমুহূর্তে পরিকল্পনায় বদল
অমিত শাহ এবং বিজেপির নির্বাচনী প্রচার ব্যবস্থাপক দল কোনও রকমের ঝুঁকি নিতে চায়নি। তাই যেখানে মোদীর ১০টি মতো জনসভার কথা শুরুর দিকে ছিল, তা প্রচার পর্ব শেষ হতে হতে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০টির বেশি জনসভায়। বারাণসীতে টানা তিনদিন প্রচার চালিয়েছিলেন মোদী। এমনকী রাত্রিযাপনও করেছিলেন বারাণসীতে যা লোকসভা নির্বাচনের সময়ও দেখা যায়নি।
অখিলশ নীতিশ নন, লালু হতে পারেননি রাহুল
বিহারের কায়দায় সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহাজোট করতে চাইলেও বিহার আরহ উত্তরপ্রদেশের ফলে আকাশ পাতাল পার্থক্য তৈরি হয়েছে। কারণ অখিলেশ যাদব নীতিশ কুমার হয়ে উঠতে পারেননি যিনি রাজ্যের উন্নয়নের ছবি তুলে ধরে ভোট টানতে পারেননি।
সপা ভেবেছিল কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংখ্যালঘু ভোটকে নিজেদের দিকে ঘোরাতে পারবে আবার পাশাপাশি রাহুল গান্ধীর ফলে উচ্চ বর্ণের ভোটব্যাঙ্কও পকেটে পুরতে পারবে। কিন্তু অখিলেশ নীতিশ নন আর রাহুল যে লালু হতে পারেননি তার হাতে নাতে প্রমাণ মিলেছে নির্বাচনের ফলে। লালু নীতিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শক্তি বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন কিন্তু উত্তরপ্রদেশে 'ডুবন্ত' কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সপা বরং আরও কিছুটা তলিয়ে গেল চোরাবালিতে।
সপা-কং জোটে কেমিস্ট্রির অভাব
সপা-কং জোট হওয়া সত্ত্বেও জোটের মুখ্য প্রচারক অখিলেশ যাদব, রাহুল গান্ধী এখানেও 'নায়ক' হয়ে উঠতে পারেননি। বরং সহ অভিনেতা হয়েই থেকে গেলেন। কংগ্রেসের আর এক মুখ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে এক্স ফ্যাক্টর প্রচারক হিসাবে প্রোজেক্ট করা হলেও হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র জমসভাতেই দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মোদীর পাশাপাশি অখিলেশ-রাহুল যৌথ প্রচারে কয়েকটি জনসভা রোড শো করলেও জোটের মধ্যে দুই দলের ভারসাম্য ও কেমিস্ট্রির অভাব প্রতি মুহূর্তে স্পষ্ট হয়েছে। ফলে প্রচার পর্বেই বিজেপি সপা-কং জোট থেকে একটা বড় তফাৎ গড়ার ক্ষেত্রে সফল হয়েছে।
মেরুকরণে সাফল্য
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে ভোটারের মেরুকরণের চেষ্টা সব দলই চালিয়েছে। একদিকে যেখানে সপা এবং বসরা দুই দলই সংখ্যালঘু ও মুসলমান ভোট টানার চেষ্টা চালিয়েছিল সেখানে বিজেপি খেলেছে হিন্দুত্ব কার্ডে। মোদীর কবরস্থান বনাম শ্মশান মন্তব্য হোক বা অমিত শাহর 'কাসভ' আক্রমণ, বিরোধীদের মুসলিম ভোট টানার আগ্রাসী চেষ্টাকে লোকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর ক্ষেত্রে একটা পরিকল্পিত পদক্ষেপ। সেই চালের পাল্টা দিতে পারেনি বিজেপি বিরোধী দলগুলি।