আন্দামানে দ্বীপান্তরের জীবন কাটাচ্ছেন পর্যটকরা, নোঙর করতে পারেনি নৌজাহাজ
আন্দামানে ভ্রমণে গিয়ে কার্যত দ্বীপান্তরের জীবন কাটাচ্ছেন ১৪ শতাধিক পর্যটক। আকাশভাঙা বৃষ্টি আর প্রবল ঝড়ে হোটেল বন্দি এ রাজ্যেরও ৬০০ পর্যটক।
কলকাতা, ৮ ডিসেম্বর : আন্দামানে ভ্রমণে গিয়ে কার্যত দ্বীপান্তরের জীবন কাটাচ্ছেন ১৪ শতাধিক পর্যটক। আকাশভাঙা বৃষ্টি আর প্রবল ঝড়ে হোটেল বন্দি এ রাজ্যেরও ৬০০ পর্যটক। খারাপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকায় উদ্ধারকার্যে নামতে পারেনি সেনা। জল নেই, খাবার নেই, নেই আলো। অন্ধকারে অসহায় জীবন কাটছে পর্যটনপ্রেমী রাজ্য তথা দেশ ও বিদেশের মানুষদের।
পোর্ট ব্লেয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলির। দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগরের মাঝে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়েছে। চলছে প্রবল বৃষ্টি। নাগাড়ে প্রবল বৃষ্টি চলায় নৌ-জাহাজ পাঠিয়েও হ্যাভলক ও নীল দ্বীপ থেকে উদ্ধার করা যায়নি আটক পর্যটকদের। উত্তাল সমুদ্র। নৌ জাহাজ নোঙরই করতে পারেনি।
এদিকে এমনই ঝড় চলছে যে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। চারিদিক অন্ধকার। জেনারেটর কাজ করছে না। দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি। ক্রমশই আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে আন্দামানে বেড়াতে যাওয়া মানুষগুলোকে। বেড়ানোর আনন্দ নিমেষে আতঙ্কে বদলে দিয়েছে এই প্রকৃতিক দুর্যোগ। এদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও খারাপ হবে আবহাওয়া। এই পরিস্থিতিতে ১৪০০ পর্যটককে উদ্ধার করা কী করে সম্ভব হবে, বুঝে উঠতে পারছেন না উদ্ধারকারী সেনারা।
আটকে পড়া পর্যটক বিনয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, হোটেল থেকে বাইরে বেরনোর উপায় নেই। একপ্রকার বন্দি হয়ে আছি। জল, খাবার সব ফুরিয়ে আসছে। তার উপর চারিদিকে বিরাজ করেছে অন্ধকার। একপ্রকার দ্বীপান্তরের জীবন কাটাতে হচ্ছে সমস্ত পর্যটককে। বিপর্যয় মেকাবিলা দলের সদস্য জ্যোতির্ময় বিশ্বাসও আশার খবর শোনাতে পারেননি।
তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধারকার্য চালানোর মতো কোন অনুকূল পরিস্থিতিই তৈরি হচ্ছে না। কোনও জাহাজ সমুদ্র বক্ষে নোঙর করা যাচ্ছে না। প্রোটোকল অফিসার এ কে রায় জানিয়েছেন, ছোটো নৌকা নামানোর মতো কোনও পরিস্থিতিই নেই। অপেক্ষা করছি একটু আবহাওয়া উন্নতির।
এদিকে পর্যটকরা আটকে পড়ায় উদ্বিগ্ন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিনিয়ত পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা বলেন। তাঁদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আবহাওয়ার একটু উন্নতি হলেই হ্যাভলক ও নীল দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকদের অন্তত পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরিয়ে আনা হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, আমরা সর্বদা যোগাযোগ রাখছি আটকে পড়া পর্যটকদের সঙ্গে। যোগাযোগ রাখা হচ্ছে উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দুর্গত পর্যটকদের হাতে পৌঁছনো যাচ্ছে না। চেষ্টা চলছে। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছন, আবহাওয়া একটু অনুকূল হলেই কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হবে পর্যটকদের। সমস্ত ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে। সবাই নিরাপদে আছেন বলে আশ্বস্ত করেছেন মন্ত্রী।