নৈশভোজের আমন্ত্রণে মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা মমতার, জল্পনায় বিরোধীরা
নয়াদিল্লি, ১৯ ডিসেম্বর : হাজারো বিরোধিতা থাকলেও রাজ্যের উন্নয়ন প্রসঙ্গে কেন্দ্রর সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে আপাতত জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই নৈশভোজে নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি হতে পারেন মমতা। রাষ্ট্রপতি ভবনের এই নৈশভোজে মোদী আসছেন। আর তা জেনেই নৈশভোজে উপস্থিত থাকতে সফরের মেয়াদবৃদ্ধি করেছেন তিনি। তবে তৃণমূল যে সারদা প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান থেকে নড়ছে না সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
মদন মিত্রের গ্রেফতারির পর মমতা হুঙ্কার দিয়েছিলেন কলকাতায় গেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের গ্রেফতার করতে পারে তার সরকার। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মমতার এই হুঁশিয়ারিতে কিছুটা ঘাবড়েও গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী। কলকাতা যাওয়ার পূর্বনির্ধারিত সফরসূচিও নাকি বাতিল করতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন সম্বন্ধিত কাজের সঙ্গে সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল বিজেপির মধ্যে রাজ্যে সংঘাত চললেও তার জন্য যেন রাজ্যে জাতীয় সড়কের কাজ ব্যাহত না হয়।
দিল্লি আসার আগে পর্যন্তও মোদীদর্শনে তীব্র অনিহা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূল সূত্রের খবর , বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধিতা বা বিক্ষোভ নয়, অসুস্থ রাষ্ট্রপতিকে দেখতেই মমতার দিল্লি সফর। যদিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করলেও মমতার সঙ্গে দেখা করেননি প্রণব। এরপরই রাজ্যে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু নৈশ্যভোজের জন্য সফরের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় প্রশ্ন তুলছেন বিরোধিরা। মোদীর সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেকারণেই কী এই সিদ্ধান্ত? হঠাৎ করে কেনইবা বিজেপি সরকার প্রসঙ্গে সুর নরম করলেন কেন মমতা। তবে কী ভিতরে ভিতরে অন্য রাজনৈতিক খেলা খেলছে বিজেপি-তৃণমূল, প্রশ্ন বিরোধিদের।
এদিকে বৃহস্পতিবার সংসদের সেন্ট্রাল হলেও যে চিত্রটা দেখা গেল তা হজম করতে বেশ অসুবিধাই হচ্ছে বিরোধীদের। বেঙ্কাইয়া নাইডু মমতাকে বলেন, কিছু প্রশাসনিক বিষয়ে কথা বলছে খুব তাড়াতাড়িই কলকাতা যাবেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায় হেসে মমতা বলেন, বেঙ্গাইয়া যদি রাজনৈতিক বিষয়েও কথা বলেন তাতে আপত্তি নেই। তিনি কথা বলতে রাজি আছে।
মোদীর সঙ্গে বৈঠক করার মানে এই নয় মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার লড়াই ছেড়ে দেব: অমিত শাহ
রাজ্যের উন্নয়ন প্রসঙ্গে একে অপরকে সহযোগিতা করলেও সিবিআই তদন্তের বিষয়ে নিজেদের আক্রমণাত্মক অবস্থান তাঁরা ছাড়ছেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা। প্রয়োজনে দিল্লি এসে তিনি ধর্ণা দেবেন বলেও জানিয়েছেন। তবে এখনও এবিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন মমতা নিজেই। তবে আক্রমণের ইঙ্গিত দিলেও এদিন মমতার কথার সুর কিন্তু অত্যন্ত নরম ছিল। যা দেখে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, খুব মেপে মেপেই এবার এগোতে চাইছেন মমতা।
মমতা এই ইঙ্গিতই দিতে চাইছেন যে বিষয় ভিত্তিক সমর্থন তারা কেন্দ্রকে দিতে রাজি। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদী চাইছেন,কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সম্পর্ক এবং রাজ্যে বিজেপি-তৃণমূল বিরোধিতা বিষয়টি আলাদা থাকুক। তবে ২০১৬-য় রাজ্যে ভোটের কথা মাথায় রেখে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতি ও প্রশাসন দুটি ভিন্ন বিষয়ে গুলিয়ে ফেলেছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করার মানে এই নয় যে রাজ্য থেকে মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার লড়াই বিজেপি ছেড়ে দেবে। বিজেপি রাজ্যে বিরোধী দল, তা ছাড়া তৃণমূল এনডিএ-এর শরিক দলও নয়। কাজেউ লড়াই ছাড়ার প্রশ্ন নেই।