নগ্ন নারীদেহের ছবি আর অশ্লীলতা সমার্থক নয়, বলল শীর্ষ আদালত
১৯৯৩ সালে জার্মানির 'স্টার্ন' পত্রিকায় টেনিস তারকা বরিস বেকার ও তাঁর বান্ধবী বারবারা ফেলটাসের একটি ছবি ছাপা হয়। সেখানে বারবারা ফেলটাস ছিলেন সম্পূর্ণ নগ্ন। সেই ছবিটি তুলেছিলেন বারবারা ফেলটাসের বাবা স্বয়ং! তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই ছবিটি তোলা ও ছাপা হয়েছিল। কারণ বারবারা ফেলটাস নিজে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন।
এই ছবি কিছুদিন আগে পুনরায় ছাপায় এ দেশের দু'টি পত্রিকা। আর তার জেরে হইচই শুরু হয়। একদল আইনজীবী মামলা রুজু করেন আদালতে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, নগ্ন নারীদেহের ছবি ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। তা ছাড়া নগ্ন নারীশরীর দেখলে পুরুষের মনে কাম জাগা স্বাভাবিক। নিম্ন আদালত এই যুক্তিকে মেনে নেয়। কিন্তু, শীর্ষ আদালত সম্পূর্ণ উলটো রায় দিল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণণ এবং বিচারপতি এ কে সিক্রির বেঞ্চে মামলাটির দীর্ঘ শুনানি হয়। বিচারপতিরা বলেছেন, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নারীশরীর মানেই তা সবসময় অশ্লীল নয়। দেখতে হবে, সেই ছবি পুরুষমনে কামের উদ্রেক ঘটাচ্ছে কি না। এক্ষেত্রে নারীদেহের ছবি কী ভঙ্গিমায় রয়েছে, সেটা বিচার্য। সাধারণভাবে কামোত্তেজক ভঙ্গিতে নারীদেহের ছবি থাকলে তা যৌন লালসার জন্ম দিতে পারে। আবার সবক্ষেত্রে যে বিষয়টা এত সহজভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব তা নয়। কারণ, নগ্ন নারীশরীরের ছবি যে দেখছে, তার দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। বলা যায়, বিষয়টি পুরোপুরি আপেক্ষিক।
সর্বোচ্চ আদালতের মতে, নগ্ন নারীদেহের কোনও ছবিকে অশ্লীল বলা যাবে কি না, তা বিচারের সময় ওই ছবির উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যেমন, বারবারা ফেলটাসের যে ছবি শ্বেতাঙ্গ বরিস বেকারের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল, তাতে বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী বার্তা ছিল। এতে সমাজের মঙ্গল সাধিত হয়েছে। কোনও কুরুচিকর বার্তা দেওয়া ওই ছবির উদ্দেশ্য ছিল না। বিচারপতিদের আরও বক্তব্য, সমসাময়িক পরিস্থিতি অনুযায়ী অশ্লীলতার সংজ্ঞা পাল্টে যায়, এটাও ঠিক। ১৯৯৩ আর ২০১৪ সালের মূল্যবোধ যে এক নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ হল, নগ্নতা আর অশ্লীলতা সমার্থক নয় বলেই মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর আঁকা বিভিন্ন ছবি, খাজুরাহোর ভাস্কর্য শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। আর আলাদা করে দেখা হয়েছে পর্নোগ্রাফিকে। নগ্নতার সঙ্গে যদি শিল্প জড়িয়ে থাকে, তা হলে কখনওই তা অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়বে না এবং সেক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং ইনডিসেন্ট রিপ্রেজেন্টেশন অফ উইমেন (প্রহিবিশন) অ্যাক্ট আরোপিত হবে না।