প্রধানমন্ত্রী বিগ বাজারের বিগ বস, তাঁকে সরালেই দেশ বাঁচবে, কটাক্ষ মমতার
মোদির আমলে দেশে সুপার এমার্জেন্সি জারি হয়েছে। দেশের মানুষের কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
পাটনা, ৩০ নভেম্বর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে 'বিগ বাজারের বিগ বস' হিসেবে ব্যাখ্যা করে মমতার হুঁশিয়ারি, নরেন্দ্র মোদিকে ক্ষমতা থেকে সরালে তবেই দেশ বাঁচবে। মোদির আমলে দেশে সুপার এমার্জেন্সি জারি হয়েছে। দেশের মানুষের কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বুধবার নোট বাতিলের প্রতিবাদে পাটনার সভা থেকে ফের একবার প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে মঙ্গলবার লখনউয়ের সভা থেকে মোদিকে গদি ছাড়া করার হুঙ্কার দিয়েছিলেন, আজ পাটনার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি, দেশকে বাঁচাতে গেলে সবার আগে সরাতে হবে নরেন্দ্র মোদিকে। নইলে দেশের সামনে বড় বিপদ। দেশে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
মোদিকে সরাসরি আক্রমণ করে তিনি বলেন, 'কালো টাকা তো রয়েছে আপনার কাছে, কালো টাকা রয়েছে আপনার দলের কাছে।' নইলে বিহারে, ওড়িশায় জমি কিনছেন কী করে! কী করে আপনার দলের নেতার বিয়ে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে? কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের মেয়ের বিয়ে যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সে খবর আপনি রাখেন প্রধানমন্ত্রী? তাঁর কটাক্ষ, 'জনতার ঘরে তালা মেরে, আপনি নিজের ঘরে টাকা ভরছেন, মানুষ আপনাকে ক্ষমা করবেন না। মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবে।'
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এদিন নোট বাতিল ইস্যুতে পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করেন। এদিনের সভায় মমতা দাবি করেন, পুরো দেশ লুঠ করে নিতে চাইছেন মোদি। মানুষের টাকা লুঠে নিয়েছেন। স্ত্রী ধনও লুঠ করেছেন। এটা মা-বোনেদের অপমান। স্ত্রী জাতির অপমান। মা-বোনেরা আর ভোট দেবেন আপনাকে? প্রশ্ন ছুড়ে দেন মমতা। তারপর বলেন, রাত পোহালেই মাস পয়লা বেতনের কী হবে, তা এখনও ঠিক করতে পারেনি। এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। মানুষ কী খাবে? তারা কি মোবাইল খাবে। মোদিজির মুখে তো শুধু মোবাইল ব্যাঙ্কের কথা।
তিনি জানেন না, দেশের অধিকাংশ এলাকায় এখনও ব্যাঙ্ক নেই। ব্যাঙ্কে, এটিএমে টাকা মিলছে না, এখন টাকা মিলছে বিগ বাজারে। কিন্তু কোনও এক দুরুহ নিয়মে সমবায় ব্যাঙ্কে টাকা মিলছে না। সমবায় ব্যাঙ্কে কেন টাকা নেই? প্রশ্ন তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে মোদিজিকে বিগ বাজারের বিগ বস বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়লেন না তিনি।
বিদেশ সফর নিয়েও মোদিকে খোঁচা দিতে ছাড়লেন না মমতা। মমতা বলেন, বিদেশ যখন যান, তখন কে যায় সঙ্গে? বিদেশে থেকে তো কালো টাকা ফেরাতে পারলেন না। কালো টাকা কালোই রয়ে গিয়েছে। সাধারণের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন বলেছিলেন, এখন কেন মুখে সাড়া নেই? আপনার প্রতিশ্রুতি রক্ষার কী হল? মমতা বলেন, মোদি চলে যাবেন, কিন্তু মানুষের হাতে টাকা ফিরবে না। মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ওদিকে লক্ষ্য নেই প্রধানমন্ত্রীর। এটা কি সরকার চলছে? পাটনার ধরনা মঞ্চ থেকে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে এখন একদিকে মোদি, অন্যদিকে জনতা। সমাঝোতা করতে মাত্র এক মিনিট সময় লাগে। কিন্তু কখনই মোদির সঙ্গে যাব না। মানুষের সঙ্গেই থাকব। এ লড়াই আমার একার নয়। এ লড়াই জনতারও। জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এই অনৈতিকতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত। এখন দু'রকমের ৫০০ টাকা ছাপানো হচ্ছে। তা নিয়ে বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষ।
এদিন নোট বাতিলের প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সভা ভরিয়ে দেন লালুপ্রসাদ যাদব। তাঁর দলের সমর্থকেই ভরে যায় এলাকা। সভায় আসেন সমাজবাদী পার্টির সমর্থকরা। লণ্ঠনের পাশাপাশি এদিনের সভায় উড়েছে তৃণমূলের ঘাসফুলের পতাকা। নাম না করে তিনি এদিন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সমালোচনা করেন। আরজেডি এদিন মমতার পাশে দাঁড়ালেও, নীতীশ কুমার দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। তাই পাটনার মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, গদ্দারি চলবে না। উল্লেখ্য নোট বাতিল ইস্যুতে নীতীশ ও তার দল জেডিইউ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। প্রকারান্তরে মোদির নোট বাতিল সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছিলেন নীতীশ।