দেউচা কয়লাখনির অধিকার চেয়ে মোদী দরবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা
দেউচার অধিকার পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, এখনও তা বিশবাঁও জলে। প্রায় তিন মাস হতে চলল, এ সংক্রান্ত কোনও চিঠিই হাতে পায়নি রাজ্য সরকার।
দেউচা পাঁচামি কয়লা খনির অধিকার কার? এখনও সেই ধন্দ কাটেনি। এই খনির অধিকার কেন্দ্রের তরফে পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, এখনও তা বিশবাঁও জলে। প্রায় তিন মাস হতে চলল, এ সংক্রান্ত কোনও চিঠিই হাতে পায়নি রাজ্য সরকার। তাই ধন্দ কাটাতে বৃহস্পতিবার দেউচা পাঁচামি খনি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মধ্যে অবস্থিত হলেও, এই দেউচা খনি থেকে কয়লা তুলত বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও সতলুজ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই খনি থেকে কে কত কয়লা পাবে, তাও কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রক স্থির করে দিয়েছিল। সেইমতো রাজ্যগুলি সম্মিলিতভাবে একটি সংস্থা তৈরি করে কয়লা তোলার কাজ করত। কিন্তু সহমতের ব্যাপারে কয়লা তোলা নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় খনিটির ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।
তখনই কেন্দ্রের অন্তঃমন্ত্রক কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় খনিটির অধিকার পশ্চিমবঙ্গকেই দেওয়া হবে। যেহেতু খনিটি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত, খনিটির অধিকার পশ্চিমবঙ্গের উপরই বর্তায়। সেইমতো এপ্রিলের প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি গেলে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু তারপর মে মাস শেষ হতে চলল, কেন্দ্রীয় কয়লা ও বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কোনও চিঠি রাজ্যের হাতে আসেনি।
কেন কেন্দ্র তাঁদের সিদ্ধান্ত জানানোর পরও কোনও চিঠি এল না? কেন খনি হস্তান্তরের ব্যাপারে কোনও অগ্রগতি নেই এখনও? মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁজ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়লা মন্ত্রককে চিঠি লেখার কথাও বলেছিলেন তিনি। সেইমতো তদ্বির শুরু করেন মুখ্যসচিবও।
এরপরই ফের দিল্লি সফরের আগে মুখ্যমন্ত্রী পরিকল্পনা করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যদি বৈঠক নির্ধারিত হয়, তবে তিনি এই প্রসঙ্গ তুলবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে দেউচা পাঁচামি খনি হবে অন্যতম মুখ্য বিষয়।
কেননা, এই কয়লাখনি থেকে কয়লা তোলার কাজ শুরু হলে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। প্রায় এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই কাজে। কিন্তু দেউচা নিয়ে কেন্দ্রের হঠাৎ নীরবতায় উদ্বিগ্ন রাজ্য। দেউচায় প্রায় ২১০ কোটি ২০ লক্ষ টন কয়লা মজুত রয়েছে। এই খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে এনটিপিসি-কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু কেন্দ্রের চিঠি না আসায় কাটোয়া প্রকল্পটিরও কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর দেউচা পাঁচামি খনিটি নতুন করে বণ্টনের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল কেন্দ্র। তখনই রাজ্য সরকার আবেদন করেছিল। রাজ্যের প্রস্তাব পাওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রক কমিটি গঠন করে পশ্চিমবঙ্গকে অধিকার দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। সেইমতো ২০১৭-র ১০ মার্চ খনিটি রাজ্যকে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানায় কেন্দ্র।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রের আন্তঃমন্ত্রক কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেও কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রক ও কয়লামন্ত্রকের সম্মতিসূচক কোনও চিঠি আজ পর্যন্ত মেলেনি। সেই কারণেই মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নতুন করে উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। দিল্লি রওনা হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলে যান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মূল আলোচ্য তালিকায় দেউচা পাঁচামি কয়লা খনির বিষয়টি থাকবে।