কীভাবে রাহুল মুখার্জীর সঙ্গে শিনা বোরার প্রথম দেখা, প্রেম এবং সব শেষে অন্তর্ধান!
মুম্বই, ২৩ নভেম্বর : পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে রাহুল মুখার্জী জানিয়েছেন কীভাবে তার সঙ্গে শিনা বোরার আলাপ হয়, কোথায় প্রথম দেখা, কীভাবে বন্ধুত্ব পেরিয়ে প্রেমে পরা, বাগদান করা এবং ২০১২ সালে নৃশংয়ভাবে দুজনকে বিচ্ছিন্ন করার খেলার আগে পর্যন্ত তাদের জীবনের চড়াই উতরাই পুরোটাই জানিয়েছেন রাহুল। পাশাপাশি কীভাবে তাদের সম্পর্কে আঘাত পেলেন শিনার মা তথা তাঁর খুনী, পুলিশের কাছে সমস্ত তথ্য দিয়েছে পিটারপুত্র তথা শিনার প্রেমিক রাহুল মুখার্জী।
কীভাবে প্রথম দেখা
২০০৮ সালে যখন রাহুল বাবা পিটার মুখার্জীর সঙ্গে থাকতে শুরু করল তখন ওয়ারলিতে মার্লো অ্যাপার্টমেন্টে প্রথম দেখা হয় রাহুলের সঙ্গে শিনার। এরপর থেকেই তারা মাঝে মধ্যেই বাইরে দেখাসাক্ষাৎ শুরু করে। এবং ক্রমেই তাদের বন্ধুত্ব গভীর হয়ে ওঠে।
রাহুলের কথায় কয়েক মাস মুম্বইয়ে কাটানোর পরই সে লন্ডনে চলে যায়। যদিও কয়েক মাসের মধ্যেই আবার মুম্বইয়ে ফিরে আসে সে। সেই সময় ইন্দ্রাণী পিটারকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে সে যেন তার ছেলেকে অন্য কোথাও থাকতে বলে দেয়। এরপরে পিটারের কথায় খার দান্দায় একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে সে।
সবচেয়ে বড় স্বীকারোক্তি
বাবার সাহায্যে প্রাইম ফোকাস এ চাকরি পায় রাহুল। তখনও শিনা ও রাহুলের দেখা করা চলছিল। এরভাবেই আস্তে আস্তে একে অপরের প্রেমে পড়ে যায় শিনা ও রাহুল। রাহুলের কথায়, "একদিন শিনা এসে বলে, ও ইন্দ্রাণীর বোন নয়, বরং মেয়ে। যখন ইন্দ্রাণী আমার ও শিনার সম্পর্কের বিষয়ে জানল তখন ও রেগে লাল হয়ে বাবার সঙ্গে এবিষয়ে ঝামেলা করতে লাগল। শিনাকেও গুয়াহাটি পাঠিয়ে দেওয়া হল।"
২০০৯ সালে শিনাকে দিল্লি পাঠানো হল। সেখানে কিছু একটা ভয়ঙ্কর শারীরিক সমস্যা নিয়ে শিনা হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে সে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক ও মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল। ইন্দ্রাণী জানায় শিনা ওর প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে স্থানান্তরিত হয়ে যাক। প্রাথমিকভাবে এর বিরোধ জানালেও পরে মায়ের কথাতেই কাজ করে শিনা।
ওষুধেই বিপদ
রাহুল পুলিশকে জানায়, "সেই সময় আমার হাতে টাকা ছিল না। বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়ে কোনওমতে সোজা বেঙ্গালুরু চলে যাই। শিনা তখন খুব দুর্বল ছিল।" রাহুলের কথায় চিকিৎসক তখন জানায়, ইন্দ্রাণী যে ওযুধগুলি শিনাকে দিচ্ছিল তা আসলে তা আসলে শিনাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলার জন্য। ডাক্তার অবিলম্বে ওই ওষুধগুলি বন্ধ করতে বলেন। ওষুধগুলি ছাড়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিল শিনা, একথাও পুলিশকে জানিয়েছে রাহুল।
২০০৯ সালের শেষ দিকে তারা ফের মুম্বইয়ে ফিরে আসে। শিনা সেখানে কাজ পেয়েছিল বলেই ফিরে আসা। আন্ধেরিতে একটি ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে শিনা ও রাহুল। কিন্তু তাদের সম্পর্কের জেরে পিটার ও ইন্দ্রাণীর মধ্যে চরম তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছিল।
২০১১ সালে রাহুলের মা ও শিনার দাদু দিদার অনুমতি নিয়ে দেহরাদুনে তাদের বাগদান হয়। সেই সময শিনা খুব খুশী ছিল এবং শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিল বলে পুলিশকে জানায় রাহুল।
বাগদানের খবর পেয়ে একদিন ইন্দ্রাণী নৈশভোজে শিনাকে বাড়িতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। সেইদিন রাতে শিনা রাহুলকে বলে, ইন্দ্রাণী অনেক বদলে গিয়েছে।
শিনার অন্তর্ধান
খুনের একদিন আগে ইন্দ্রাণী শিনাকে ফের বাড়িতে ডাকে নৈশভোজে। ইন্দ্রাণী শিনাকে বলে সে তাকে বাগদানের জন্য উপহার দিতে চায়। ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল শিনার অফিস থেকে তাকে নিয়ে যায় রাহুল। শিনা লাল টপ আর একটি প্যান্ট পরেছিলেন।
রাহুল সেদিনের বিবরণ দিতে গিয়ে জানানয়, ইন্দ্রাণী শিনা কোথায় আছে, কী করছে জানতে বারবার ফোন করছিল। ইন্দ্রাণী যে ঠিকানা দিয়েছিল বান্দ্রার ন্যাশনাল কলেজের কাছে, সেই ঠিকানাতেই যায় রাহুল ও শিনা। সেখানে আগে থেকেই একটি রূপোলি শ্যাভ্রোলে গাড়িতে অপক্ষে করছিল ইন্দ্রাণী। চালকের আসনে শ্যাম রাই। অন্য আর একজন ব্যক্তি গাড়িতে বসে সিগারেট খাচ্ছিল (পরে যানা যায় এই অপরিচিত ব্যক্তিই সঞ্জীব খান্না।)
সেখানে শিনাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চলে যায় রাহুল। রাহুলের কথায়, "এরপর যতবার আমি ওকে ফোন করছিলাম, ও আমার ফোনের জবাব না দিয়ে এসএমএস-এ জবাব দিচ্ছিল। আমিও এসএমএস-এই কথা বলতে শুরু করলাম। এই কথপোকথন রাত ৮ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলেছিল। তারপর শিনা এসএমএস-এই আমাকে জানায় ও ইন্দ্রাণীর সঙ্গে আনন্দ করে খাওয়া দাওয়া করেছে। রাতেও ইন্দ্রাণীর সঙ্গেই থাকবে। এরপর আমি বাড়ি চলে যাই। এরপর বারবার আমি ওরে ফোন করার চেষ্টা করি কিন্তু ও আমার ফোনের কোনও উত্তরই দিচ্ছিল না।"
শিনা যখন পরের দিনও ফিরল না তখন চিন্তায় পরে যায় রাহুল।
রাহুল পুলিশকে বলে. "আমি বারবার ফোন করছিলাম, মেসেজ করছিলাম ওকে। হঠাৎ ওর একটা মেসেজ আসে। 'আমি অন্য একজনকে পেয়ে গেছি। তুমি আমাকে ভুলে যাও।' এটাও লেখা ছিল ওই এসএমএস-এ যে ও নতুন প্রেমিকের সঙ্গে সুখে আছে। পরের আর একটা মেসেজে শিনা লেখে ২-৩ মাস পরে ও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। এই ধরণের এসএমএস হঠাৎ করে আমার সন্দেহজনক লেগেছিল।
এরপর থানায় রাহুল নিখোঁজ ডায়েরি লেখা যায়, কিন্তু পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। নিজের সন্দেহের কথা শিনার সহকর্মী, ভাই মিখেইল ও বিধিকে জানায় রাহুল। এরপর তার অফিস থেকে শিনার ল্যাপটপ, অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয় রাহুল। ইন্দ্রাণী তার কাছে চাওয়া সত্ত্বেও তা দেয়নি। পরে খুনের ঘটনা সামনে আসার পর তদন্তকারীদের হাতে সমস্ত জিনিস তুলে দেয় সে।