যন্ত্রণায় ছটফট করা ছেলেকে স্বস্তি দিতে মায়ের তেল মালিশেই বিপদ, মৃত্যু ছেলের
পায়ের ব্যথায় তেলমালিশ আরাম দেয়। কিন্তু আপনি কি জানেন এই তেল মালিশই কারোর প্রাণ কেড়ে নিতে পারে যদি তা সঠিক উপায়ে সঠিক রোগীকে দেওয়া না হয়।
নয়াদিল্লি, ২ মে : পায়ের ব্যথায় তেলমালিশ আরাম দেয়। কিন্তু আপনি কি জানেন এই তেল মালিশই কারোর প্রাণ কেড়ে নিতে পারে যদি তা সঠিক উপায়ে সঠিক রোগীকে দেওয়া না হয়। ছেলেকে আরাম দিতে মায়ের করে দেওয়া তেলমালিশই কীভাবে ২৩ বছরের ছেলের প্রাণ কেড়ে নিল তা জানিয়ে তেল মালিশ নিয়ে সতর্ক করলেন এইমস-এর চিকিৎসকরা।
ঘটনাটি একবছর আগেকার। ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে বাঁ পায়ে চোট পান দিল্লি নিবাসী ২৩ বছরের এক যুবক। পাকে সাময়িক গতিহীন রাখতে পায়ে প্লাস্টার করা হয়। প্লাস্টারের ফলে ওই যুবকের পায়ের শিরার গভীরে একটি রক্তজমাট সৃষ্টি হয়। যার আকার ৫X১ সেন্টিমিটার। এই রক্তজমাটটি পায়ের শিরা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বয়ে গিয়ে যুবকের ফুসফুসগত ধমনীতে পৌঁছয়। এই ফুসফুসগত ধমণীই ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ করে। ধমণীতে রক্তজমাট পৌঁছলে সঙ্গে সঙ্গে মৃ্ত্যু হয় যুবকের।
যুবকের শরীরের ময়নাতদন্তে এই রক্ত জমাটের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। চিকিৎসকদের কথায়, গোড়ালির হাড়ের ফাটলের জেরে শিরার গভীরে রক্তজমাট বা থ্রম্বোসিস হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই রক্তজমাটের কারণে আচমকা মৃত্যু তা মোটেই স্বাভাবিক নয়।
এইমসের তরফে বলা হয়েছে ৩১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯ টা নাগাদ ওই যুবককে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। ততক্ষণে সে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও ডাক্তাররা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি। প্রথমটায় কারণ বুঝে ওঠা যাচ্ছিল না। পরে জানা যায় যুবকের পায়ে ব্যথা হওয়ায় তাঁর মা ৩০ মিনিট ধরে তেল মালিশ করে রাত ৮ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। সেই সময়ে আচমকাই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায় ছেলেটির। ধীরে ধীরে সে অচৈতন্য হয়ে পড়ে। তার কারণ মালিশের কারণে শিরার রক্তজমাট রক্তের সঙ্গে ফুসফুস ধমনীতে চলে যায়।
সম্প্রতি মাইক্রো লিগ্যাল জার্নালে এই ছেলেটির মেডিক্যাল রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে। এই জার্নালে বলা হয়েছে, চোট খাটো শারীরিক সমস্যায় মালিশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু যুবকের মা জানতেন না মালিশের কারণে এক্ষেত্রে কী কী ধরণের জটিলতা তৈরি হতে পারে। ওই যুবকের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিয়ে ডাক্তাররাও মালিশ করলে কী কী জটিলতা বা সমস্যা তৈরি হতে পারে তা নিয়ে কোনও কিছু রোগীর পরিবারের কাছে উল্লেখ করেনি। যদিও তা চিকিৎসকদেরই আগে থেকে বলা উচিৎ ছিল।
এইমসের চিকিৎসকদের কথায়, এই যুবকের মৃত্যু সতর্কতা হিসাবে নেওয়া উচিৎ। জোর করে ভুল পদ্ধতিতে অতিরিক্ত সময় ধরে মালিশ রোগীর শিরার গভীরের রক্তজমাটকেও প্রাণঘাতী করে তুলতে পারে।