সশস্ত্র জঙ্গিকে একা খতম করেছেন রুকসানা, তাঁর দাপুটে সাহসের কাহিনি ফিল্মের চেয়ে কম নয়
সশস্ত্র জঙ্গিকে একা খতম করেছেন রুকসানা, তাঁর দাপুটে সাহসের কাহিনি ফিল্মের চেয়ে কম নয়
রাতের অন্ধকারে হঠাৎই বাড়িতে হানা জঙ্গিদের। কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে জঙ্গিদের দাবি , তাদের খেতে দিতে হবে, রাত কাটাতে দিতে হবে রুকসানাদের বাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গিদের এই চাহিদার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান রুকসানার বাবা নুর মহম্মদ, জানিয়ে দেন আশ্রয় বা খাবার কোনওটাই তাঁর বাড়ি থেকে জঙ্গিদের মিলবে না। জঙ্গিদের চলে যেতে বলেন তিনি।নুর মহম্মদ এই কথা বলার পরই , তাঁর ওপর চড়াও হয় সশস্ত্র জঙ্গিরা।
বাড়িতে যখন এসব চলছে , তখন ভয়ে, আতঙ্কে খাটের তলায় লুকিয়ে পড়েছিলেন রুকসানা। খাটের তলা থেকে রুকসানা শুনতে পাচ্ছিলেন, তাঁর বাবাকে লাঠি দিয়ে মারধর করছে জঙ্গিরা। অকথ্য অত্যাচার চলছে তাঁর বাবার ওপর। বাবার সেই আর্ত চিৎকার আর সহ্য করতে পারছিলেন না রুকসানা।
এরপরই সোজা বেরিয়ে এসে, রুকসানা কুঠারের এক ঘা দেন জঙ্গিদের একজনকে। সঙ্গে সঙ্গে সেই জঙ্গি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যেতেই , তার হাত থেকে একে-৪৭ রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে বাকি জঙ্গিদের দিকে তেড়ে যান এই কাশ্মীরী মহিলা। সোজা গুলি চালান জঙ্গিদের লক্ষ্য করে, এতে মারা যায় এক জঙ্গি। পরে জানা যায়, রাতের অন্ধকারে তাঁদের বাড়িতে হানা দেওয়া জঙ্গিরা পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈবা সংগঠেনর সদস্য়। মৃত জঙ্গি কুখ্যাত লস্কর কমান্ডার আবু ওসামা । এই তথ্য জানায় জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ।
এদিকে, ঘটনার পর আতঙ্কিত সন্ত্রস্ত, রুকসানা গিয়ে পৌঁছান স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে। জমা দেন বন্দুক, পুলিশের সামনে সমস্ত ঘটনা জানান তিনি। কাশ্মীরের রাজৌরির গুজ্জার গোষ্ঠীর মেয়ে রুকসানার এই অসম্ভব দাপুটে সাহসকে কুর্ণিশ জানিয়েছে ভারত । রুকসানা পেয়েছে 'ন্যাশনাল ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড'। ২০০৯ সালে রুকসানার এই ঘটনা দেশের মেয়েদের সামনে যে উদাহরণ রেখেছে, তা যেকোনও ভারতীয় কাছে গর্বের।
রুকসানার উদাহরণকে সামনে রেখে কাশ্মীর উপত্যকার আরও মেয়েরা হয়তো একদিন এভাবেই গর্জে উঠবে জঙ্গিদের রক্তক্ষয়ী নাশকতার বিরুদ্ধে। উপত্যকার একের পর এক বাড়ির মেয়েরা হয়তো কোনও দিন রুকসানার মতো করেই রুখে দাঁড়াবে জঙ্গিদের অন্যায় দাবির সামনে। রুকসানার বাবার মতো করে জঙ্গিদের ভিক্ষা দেওয়া বন্ধ করবে আরও কোনও এক নুর মহম্মদ। এভাবেই ভূ-স্বর্গ কোনও একদিন স্বপ্নের শান্তি ফিরে পাবে। স্বাধীনতার ৭০ বছর পার করে আজও প্রতিটি ভারতবাসীর এটাই তো স্বপ্ন! আর যুগের পর যুগ গোটা দেশ সেলাম জানাবে রুকসানাদের সাহসকে।