ভারতে খোলা মাঠে শৌচ নির্মূল : মোদী সরকারের অধীনে উন্নয়নের খতিয়ান
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মুখ্য ভিতই হল প্রত্যেকটি গৃহস্থের সঙ্গে শোচালয় যুক্ত করা এবং খোলা মাঠে মলত্যাগের অভ্যাসকে নিঃশেষ করে দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মুখ্য ভিতই হল প্রত্যেকটি গৃহস্থের সঙ্গে শোচালয় যুক্ত করা এবং খোলা মাঠে মলত্যাগের অভ্যাসকে নিঃশেষ করে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদী বলেছিলেন ২০১৯ সালের মধ্য়ে স্বচ্ছ ভারতের লক্ষ্য তিনি পূরণ করবেন।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা হয়। তখন দেশে, গ্রামাঞ্চলে প্রত্যেক ১০টি বাড়ির মধ্যে মাত্র প্রায় ৪টি (৪১.৯ শতাংশ) বাড়িতে শৌচাগারের সুবিধা থাকত। ২০১৯ সালের মধ্যে বাড়িতে শৌচাগারের লক্ষ্য পূরণে সরকার ৫ বছরের মধ্যে ১০কোটি শৌচাগার তৈরির লক্ষ্য তৈরি করে।
কেন এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তিবিশেষের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের কাছে শৌচাগারের সুবিধা নিশ্চিত করা কেন সরকারের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার বেশ কিছু কারণ আছে।
প্রথমত, খোলা স্থানে শৌচক্রিয়ার জেরে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। এর ফলে ডায়রিয়া, আন্ত্রিকের মতো রোগ ছড়াতে পারে।
দ্বিতীয়ত, দেশের অন্যতম বড় সমস্যা অপুষ্টির পিছনেও এই খোলা স্থানে শৌচকর্মের প্রাদুর্ভাব রয়েছে।
তৃতীয়ত, সংযুক্ত শৌচাগারের অভাব পড়ুয়াদের শিক্ষার উৎসাহে ভাটা আনতে পারে, বিশেষত ছাত্রীদের ক্ষেত্রে। উপযুক্ত শৌচগারের অভাবে তারা স্কুল যেতে চায়না।
চতুর্থত, সংযুক্ত শৌচাগার না থাকা মহিলাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকেও বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মহিলারা রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুরে শৌচকর্ম সারতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
UPA সরকারের তুলনায় অনেক ভাল কাজ করছে মোদী সরকার
বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে প্রত্যেক ১০টি বাড়ির মধ্যে প্রায় ৬টি (৬১.৭২ শতাংশ ) বাড়িতে উপযুক্ত শৌচাগারের সুবিধা রয়েছে। ৩ বছরে প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। সরকারের সহায়তায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শৌচাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়াতেই এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৪ কোটি শৌচাগার তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। মোদী আমলে বাৎসরিক শৌচাগার নির্মানের সংখ্যাটা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উদাহরণস্বপূপ, ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ প্রত্যেক বছর ৫০ লক্ষেরও কম শৌচাগার নির্মান হয়েছিল।
বার্ষিক শৌচাগার নির্মানের এই সংখ্যাটা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনার পর অনেকটাই বেড়ে যায় এক ধাক্কায়। ২০১৬-১৭ সালে ২ কোটিরও বেশি শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেলেও সরারের যে লক্ষ্যমাত্র ছিল ২০১৯ সালের মধ্যে উন্মুক্ত শৌচক্রিয়াকে শূন্যে নামিয়ে আনা তা হয়তো সম্ভব হবে না।
উন্মুক্ত মলত্যাগের পরিসংখ্যান : আরও গভীর সমস্যায় আলোকপাত করতে হবে
সরকারের লক্ষ্য গৃহস্থে শৌচাগার নির্মান। সরকার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকেও উন্মুক্ত মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জোর দিতে বলছে। একটা গোটা অঞ্চল বা গ্রাম যদি খোলা মাঠে শৌচক্রিয়ার অভ্যাস ত্যাগ (ODF) করতে পারে তবেই ডায়রিয়া, কলেরা জাতীয় রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি দেশের ১,৯৩,৩৭৪টি গ্রাম নিজেদেরকে খোলামাঠে ছেড়ে শৌচাগার ব্যবহারের কথা ঘোষণা করেছে। যদিও মাত্র ৮৩,৫৫৬ টি গ্রামের ODF তকমা যাচাই করা হয়েছে।
সাধারণত যাচাই প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ গ্রামগুলি নিজেদের ODF বলে ঘোষাণা করার পর কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য ওই গ্রামটিকে ODF বলে প্রমাণ করে। আমাদের বুঝতে হবে কোনও গ্রামকে ODF ঘোষণা করা বা শৌচাগার নির্মান করাই যথেষ্ট নয়। শৌচাগার নির্মানের পর তা ব্য়বহার করা হচ্ছে কি না তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকসময় দেখা যায়, শৌচাগার নির্মান করা হলেও তা ব্যবহার না করে খরাপ রক্ষণাবেক্ষণের কারণে খারু হয়ে যায়। তাই শুধু শৌচারগার নির্মান করাই শেষ কথা নয়, সরকারের উচিৎ তা যাতে নিয়মিত ব্যবহৃত ও পরিচ্ছন্ন রাখা হয় সেদিকেও নজর দেওয়া।
উপসংহার
যে লক্ষ্য নিয়ে মোদী সরকার মাঠে নেমেছে তা একটা বড় চ্যালেঞ্জ সে বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। এটা বড় চ্যালেঞ্জ কারণ পরিকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাপশি মানুষের আচরণে পরিবর্তন আনাও বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে নিরাপদেই বলা চলে মোদী সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযান অবশ্যই উন্নয়নের পথ নিয়ে গিয়েছে দেশকে। তবে এই অভিযানের স্বার্থকতা তখনই বোঝা যাবে যখন সরকার ও আম জনতা দুজনে দুজনের পরিপূরক হয়ে কাজ করতে পারবে।
(প্রণব গুপ্ত -স্বাধীন গবেষক ও রণণীতি কনসাল্টিং ও রিসার্চের ম্যানেজিং পার্টনার নীতিন মেহতার লেখা থেকে অনুবাদ করা।)