পরিবেশ বাঁচাতে হাজারের বেশি গাছ রোপন করে একা লড়ছেন দারিপল্লি, কেমন তাঁর লড়াই জেনে নিন
সবুজায়নে পরিবেশকে সাজিয়ে নেওয়ার নেশায় , হাজারেরও বেশি গাছ রোপন করে এদেশে এক বিরল ঘটনার নজির গড়েছেন দারিপল্লি রামাইয়া।
উষ্ণায়ণের যুগে গরমের হাত থেকে বাঁচতে ক্রমাগত বেড়েছে এসি, বিদ্যুৎচালিত ফ্যানের ব্যবহার। তবে যতই এর ব্যবহার বেড়েছে ততই দূষণের সমস্যা বেড়েছে। আর তার ফলেই চরমে উঠেছে অত্যিষ্ট করা গরমে মানুষের হাসফাঁসানি । মুক্তির পথ দেখিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। প্রকৃতিকে ভালোবাসে সে পথ দিয়ে এই দেশ তথা বিশ্বকে ভালো রাখার জন্য একা লড়ে গিয়েছেন তেলাঙ্গানার খাম্মামের দারিপল্লি রামাইয়া। সবুজায়নে পরিবেশকে সাজিয়ে নেওয়ার নেশায় , হাজারেরও বেশি গাছ রোপন করে এদেশে এক বিরল ঘটনার নজির গড়েছেন তিনি। একাজের জন্য কোনও পরিবর্ত অর্থ পাননা তিনি। কেবল নেশার টানে গাছ লাগিয়ে যান দারিপল্লি। দারিপল্লির এই নিঃশব্দ প্রকৃতি সেবাকে কুর্ণিশ জানায় গোটা ভারত। দেখে নেওয়া যাক তাঁর লড়াইয়ের রাস্তা কতটা বন্ধুর ছিল।
[আরও পড়ুন:আসল নায়ক এঁরাই! স্বেচ্ছায় আগুন থেকে মানুষকে রক্ষা করে চলেছেন প্রৌঢ় বিপিন]
'চেত্তালা রামাইয়া' নামে পরিচিতি
স্থানীয়রা তাঁকে চেত্তালা রামাইয়া নামে ডেকে থাকেন। 'চেত্তালা' শব্দের অর্থ গাছ। গাছি লাগিয়ে , তিনি কোনও আর্থিক সাহায্য বা গাছ লাগানোর পরিবর্তে কোনও টাকাও পান না দারিপল্লি রামাইয়া। গাছ লাগানো তাঁর নেশা। ১৮ বছর বয়স থেকেই তিনি এই কাজ করে চলেছেন ভালোবেসে। একাজ করে তিনি মনের শান্তি পান। ২০১৫ সালে তাঁর প্রচেষ্টা সম্মানিত হয় ভারত সরকারের তরফে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে ন্যাশনাল ইনোভেশন ও আউনস্ট্যান্ডিং ট্র্যাডিশনাল নলেজ অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করেন।
কীভাবে কাজ শুরু
৮০ এর দশকে খাম্মাম জেলার যে কটি ফাঁকা জায়গা ছিল, সেখানে ক্রমাগত গাছ লাগাতেন দারিপল্লি। স্থানীয়রা তাঁকে দেখতেন , সাইকেলে বস্তায় ভর্তি গাছের বীজ বয়ে নিয়ে যেতে । প্রথমের দিকে নদীর ধারে গাছ লাগাতে শুরু করেন তিনি। পরে তা রাস্তার ধারে ও জেলার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যায়। তিনি বলেন, 'বাচ্ছাকে হাতে ফল না ধরিয়ে দিয়ে, তার হাতে গাছ দাও। সেই গাছ মাটিতে পুঁতে ফল পেড়ে খাওয়ার আনন্দ পাক শিশুরা।'
কে এই দারিপল্লি রামাইয়া ?
১৯৩৭ সালে তেলাঙ্গানার খাম্মাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন দারিপল্লি রামাইয়া। পরিবেশে সবুজায়নের জন্য তিনি ২০১৭ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকেও তাঁকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত। দশম শ্রেনির পর পড়াশুনা না চালিয়ে গেলেও তিনি , পরিবেশ বিষয়ক নানা দিক নিয়ে কৌতূহল রাখেন।
দারিপল্লির জীবনের লক্ষ্য কী ?
স্থানীয়রা বলেন প্রায় ১ লাখ গাছ দারিপল্লী একাই রোপন করেছেন। তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য হল যত বেশি সম্ভব গাছ রোপন করা। তিনি চান প্রত্যেকটি মানুষ মিলে যদি প্রতিদিন একটি করে গালাগাতে পারেন, তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার লড়াইয়ে আমরা উষ্ণায়নকে হারিয়ে দিতে পারব।