নোট বাতিলে কোথাও বেড়েছে ধার মেটানোর হিড়িক, কোথাও আবার খুচরো দিতে না পেরে খুলছে নতুন ধারের 'খাতা'
নোট বাতিলের জেরে কোথাও ধারের খদ্দেররা দীর্ঘদিনের ধার মেটানোর তড়িঘড়ি পৌঁছে যাচ্ছে দোকানে, কোথাও আবার খুচরো দিতে না পেরে খুলছে নতুন ধারের 'খাতা'। নোট বাতিলের জেরে বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন চিত্র।
'আজ নগদ কাল ধার', লেখা বোর্ড যতই ঝুলুক দোকানে, চায়ের দোকান, পানের দোকান, সিগারেট-বিড়ির দোকানে ধারের খাতা থাকবে না কারো তা কি আর হয়? দিনের পর দিন বিনাপয়সা চা-পানমশলা সিগারেট-বিড়ি কিনে গ্রাহকদের একটাই পেটেন্ট লাইন "খাতায় লিখে রাখ, পরের মাসে পুরোটা চুকিয়ে দেব।" [পাকিস্তানের সেই নীল চোখের 'চাওয়ালা'র নয়া মেকওভার দেখলে নিজেকে আর সামলাতে পারবেন না!]
অগত্যা দোকানদারই বা কী করবে, টাকা পরে হাতে আসবে এই আশাতেই খাতায় হিসাব লিখে রাখে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের ঘোষণা দু-একদিনের জন্য এই চিত্রটাও একেবারে পাল্টে দিয়েছে। [নোট বাতিল প্রসঙ্গে এখনও বিভ্রান্তি? 'ছুট্টা নেহি হ্যায়' অ্যাপ প্রচারই মুশকিল আসান]
পুরনো হিসাব মিটিয়ে ফেলতে একেবারে দোকানে হুড়মুড়িয়ে পড়ছেন ধারে মাল কেনা গ্রাহকরাও। হাতে সব ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট।
বছর আঠাশের ছোটেলালের চা-সিগারেটের ছোট্ট ঘুমটি। ছোটেলালের কথায়, "আশেপাশে অফিস পাড়া। অধিকাংশই নিয়মিত খদ্দের। বেশিরভাগই খাতায় ধারের হিসাবে লেখায়। মাসের শেষ থোকা টাকা দেয়। অনেককে তো বলে বলে মুখ ব্যাথা হয়ে যায় কিন্তু প্রত্যেক মাসেই বলে পরের মাসে একসঙ্গে দিয়ে দেব। কিন্তু নোট বাতিলের খবর শুনে এখন ধার মেটাতে আসছে ওরাও, হাতে ৫০০-১০০০ টাকার নোট নিয়ে। আমিও নিয়ে নিচ্ছি, পরে ব্যাঙ্ক থেকে ভাঙিয়ে নিতে পারব। কিন্তু এ সুযোহ হাতছাড় হলে পরে আর এই ধারের টাকা মেটাবে কি না কে জানে।" [৫০০-১০০০ টাকা বাতিল হওয়ায় ধার করে সংসার চলছে বিপাশা বসুর, লক্ষ্মীর ভাঁড়ই ভরসা মিনির]
সিগারেটের দোকানগুলিতেও অন্যদিনের চেয়ে একই তফাৎ এখন চোখে পড়ছে। সিগারেট দোকানের দোকামদার রমেশের কথায়, "যারা সবসময় একটা-দুটো করে খুচরো সিগারেট কিনত এসে, তারা এখন ৫০০ টাকার নোট নিয়ে পুরো প্যাকেট কিনতে চাইছে। কেউ আবার ২-৩টে করে প্যাকেট কিনতে চাইছে।"
কিন্তু চাওয়ালা ছোটেলালের মতো ভাবতে পারছেন না রমেশ। তার কথায়, যারা ৫০০ টাকা ১০০০ টাকার নোট নিয়ে সিগারেট কিনতে আসছেন তাদেরকে দিলে হয়তো আমার বিক্রি বাড়বে, কিন্তু অত ৫০০ টাকার নোট আমি চালাব কোথায়? [৫০০-হাজারে অরুচি ভগবানেরও, নোটে ভয় বড়বাজার জৈনমন্দিরে]
এদিকে আবার ছোট্ট চায়ের দোকান মোহনের। মোহন আবার বলছে, "চা-সিগারেট খেতে সবাই ৫০০-১০০০ টাকার নোট নিয়ে আসছে। এত খুচরো দেবই বা কোথা থেকে। অগত্যা চেনাশোনাদের জন্য হিসাব খাতা চালু করতে হচ্ছে। অনেকে আবার বিনামূল্যে চা খাওয়ার আবদার জুড়ছে কারণ, হাতের খুচরো শেষ করতে চাইছেন না কেউই। এরম চলতে থাকলে তো ব্যবসা লাটে উঠবে..." চিন্তা মোহনের।