হিসাব বহির্ভূত নগদকে 'আইনি আয়' হিসাবে দেখাতে যে ফন্দি ফিকির এঁটেছে জনতা!
হিসাব বহির্ভূত নগদকে 'আইনি আয়' হিসাবে দেখাতে যে ফন্দি ফিকির এঁটেছে জনতা। কিভাবে নিজের হিসাব বহির্ভূত নগদকে 'আইনি আয়' হিসাবে দেখাবেন তা বাতলেছেন কর উপদেষ্টারাই।
বেঙ্গালুরু, ১৬ নভেম্বর : ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তে বেশ বিপাকে পড়ছে অনেকেই। যাঁরা নিয়মিত আয়কর দিয়েছেন তাদের কোনও ভয় নেই। কিন্তু যাঁরা টাকার উৎসের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না তাদের ক্ষেত্রে তো মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা।
আয়কর ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞদের কথায়, আপনি পুরনো টাকা বদলে নতুন টাকা নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কে যেতেই পারেন। তবে, যদি ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া বিশাল পরিমাণ টাকার পরিমাণের সঙ্গে আপনার আয়কর রিটার্নে আপনার ঘোষণা করা আয়ের সামঞ্জস্য না থাকলেই বিপাকে পড়তে হতে পারে।
কারণ, ২.৫ লক্ষ টাকার বেশি টাকা জমা দেওয়া হলে তার উপর নজর রাখবে আয়কর বিভাগ। কর ফাঁকির অভিযোগ উঠলে দেয় আয়করের উপর জরিমান লাগবে ২০০ শতাংশ।
যেমন ধরুন ৫ লক্ষ টাকার ক্ষেত্রে আয়কর ২৫,০০০ টাকা। জরিমানা দিতে হবে ৫০,০০০ টাকা, অর্থাৎ মোট কর দিতে হবে ৭৫,০০০ টাকা। আবার ধরুন ২০ লক্ষ টাকার আয়কর হয় ৪.২৫ লক্ষ টাকা। জরিমানা সেক্ষেত্রে ৮.৫ লক্ষ টাকা অতএব মোটে দিতে হবে ১২.৭৫ লক্ষ টাকা। এবার ধরুন যার ১ কোটি টাকা রয়েছে। তার আয়কর হয় ২৮.২৫ লক্ষ টাকা, জরিমানা ৫৬.৫০ লক্ষ টাকা, অতএব পুরো দিতে হবে ৮৪.৭৫ লক্ষ টাকা।
এবার বিষয় হল হিসাববহির্ভূত নগদ অর্থকে আইনি হিসাবে দেখাতে একাধিক ফন্দি ফিকির এঁটেছে আম জনতা। আর তাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে বুদ্ধি জোগাচ্ছেন ট্যাক্স কনসালটেন্ট বা আয়কর উপদেষ্টা এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা। একঝলকে দেখে নিন কোন কোন 'ট্রিকস' ব্যবহার করা হচ্ছে।
গৃহিনীর সঞ্চয়
সংসারের মাস খরচের থেকে গৃহিনীর জমানো টাকা হিসাবে দেখানো যেতে পারে। কর আইন হিসাবে এভাবে জমানো টাকার কোনও নির্দিষ্ট মাত্রা উল্লেখ নেউ। তবে নগদের পরিমান অবশ্যই বাস্তবসম্মত হতে হবে। পরিবারের মিলিত আয় এবং মাসিক খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকলে কিন্তু সেক্ষেত্রেও সমস্যা হবে। অর্থাৎ যদি আয়করদাতা আয় মাসে ৮০,০০০ হয়। এবং খরচ ৪০,০০০ হয়। তাঁর স্ত্রী আট থেকে দশ হাজার টাকা প্রতিমাসে সরাতে পারবেন।
- আয়কর দফতর নজর রাখবে এই টাকার পরিমাণ যেন পরিবারের বাজেটের ২০-২৫ শতাংশ না ছাড়ায়।
টিউশন থেকে আয়
অনেকই বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে, রান্না বা হাতের কাজ শিখিয়ে টাকা উপার্জন করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পন্থাই ব্যবহার করছেন লোকেন। হিসাববহির্ভূত টাকা স্ত্রী বা সন্তানের টিউশন থেকে আয় হিসাবে দেখাচ্ছেন।
- তবে এই আয়ের পরিমাণ যদি বিশাল হয় তাহলে তাহলে নজর পড়তে পারে করদাতার আয়কর রিটার্নেও। সেক্ষেত্র ওই ব্যক্তিকে ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকা জমা দিতে বলা হতে পারে। যারা প্রতিদিন ২০-৩০ জন ছাত্র পড়ানোর দাবি করবেন তাদের রোজকার দিনপঞ্জী যাচাই করে দেখা হতে পারে।
আত্মীয়র কাছ থেকে উপহার
আরও একটি চলতি ফন্দি হল আত্মীয়ের কাছ থেকে নগদ উপহার। নির্দিষ্ট সরাসরি আত্মীয়ের কাছ থেকে পাওয়া নগদ উপহার করযোগ্য নয়। তবে এই টাকার পরিমাণ যেন বাস্তবসম্মত হয়। তা যেন বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। মাসিক আয় যে বাড়ির ১ লক্ষ টাকা তার নগদ উপহারের পরিমাণ বছরে যেন ৪০,০০০-৫০,০০০ না হয়। তাহলে সমস্যা হতে পারে।
- যদি এই নগদ উপহারের পরিমাণ বাস্তবসম্মত বনা হয় তাহলে উপহার প্রদানকারীর নাম চাইতে পারে আয়কর দফতর। এবং তার আয়ের উৎস খতিয়ে দেখা হতে পারে।
বিয়ে, অন্নপ্রাসন, পৈতে অনুষ্ঠান
যাদের সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে বা সন্তানের অন্নপ্রাসন বা পৈতে অনুষ্ঠান হয়েছে, তারা অনেকটা স্বস্তিতে। এই অনুষ্ঠানে প্রাপ্য নগদ উপহার করযোগ্য নয়।
- তবে এই টাকার পরিমানও বাস্তবসম্মত না হলে আয়কর দফতর অতিথি তালিকা চাইতে পারে, কারা নদগ উপহার দিয়েছেন তাদের নাম খতিয়ে দেখতে পারেন।
শ্রমিক/কর্মচারী পাওয়া আগাম বেতন বা ঋণ
ছোট ব্যবসায়ী বা চাকুরিজীবীরা কর্মচারীদের পাওয়া আগাম বেতন বা ঋণ হিসাবে টাকা দেখাতে পারেন।
- তবে আগাম বেতনের ক্ষেত্রে ২-৩ মাসের বেতন আগাম হিসাবে দেখানো যেতে পারেন। তার বেশি হলেই কিন্তু নজরে পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে ঋণের ক্ষেত্রে কাগজে কলমে প্রমাণ তা থাকলেও সমস্যা হতে পারে।