উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন: জমজমাট লখনউ ক্যান্টনমেন্টের যুদ্ধে, কতটা প্রাসঙ্গিক যাদব পরিবারের অপর্ণা
সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার লখনউ ক্যান্টনমেন্ট থেকে সমাজবাদী পার্টির হয়ে দাঁড়াচ্ছেন যাদব পরিবারের ছোটবউ অপর্ণা যাদব।
লখনউ, ২৪ জানুয়ারি : সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার লখনউ ক্যান্টনমেন্ট থেকে সমাজবাদী পার্টির টিকিট অখিলেশের থেকে পেলেন যাদব পরিবারের ছোটবউ অপর্ণা যাদব। অপর্ণার আগে কনৌজ কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন যাদব পরিবারের বড় বউ অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল যাদব। লখনউ ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রে ২৬ বছরের অপর্ণা ভোট যুদ্ধ লড়তে চলেছেন বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী রীতা বহুগুণা জোশীর বিরুদ্ধে ।
এদিকে , ৬৭ বছর বয়সী রীতা কিছুদিন আগেই কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচএন বহুগুণার মেয়ে রীতা বহুগুণা গত নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রায় ২১ হাজার ভোটে এই এলাকা থেকেই জিতেছেন। এই কেন্দ্রের ওপর রীতার দখলও ভালো বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। তবে অপর্ণাও হাল ছাড়ার পাত্রী নন। তিনি জানিয়েছেন, " লখনউ ক্যান্টনমেন্টের মানুষ জানেন এতদিন পর্যন্ত তাঁদের এলাকায় কীরকম কাজ হয়েছে । এই কেন্দ্রের মানুষ জানেন আমি বিধায়ক না হয়েও কেমন কাজ করি ।"
এর আগে, লখনউ ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছোটবউ অপর্ণাকে টিকিট দেওয়ার জন্য ছেলে অখিলেশের কাছে সুপারিশ করেছিলেন বাবা মুলায়ম। একবছর আগে থেকেই অপর্ণাকে টিকিট দেওয়ার কথা অখিলেশকে বলেন তিনি। সেজন্য পার্টির কাজে তিলে তিলে নিজেকে তার যোগ্য করে তুলেছেন অপর্ণাও। মূলত প্রার্থী তালিকাকে কেন্দ্র করেই দন্দ্ব চরমে ওঠে পিতা পুত্রের। কিন্তু প্রশ্ন উঠতেই পারে, যে সমাজবাদী পার্টির এতজন কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে হঠাৎ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হলেন অপর্ণা? তাহলে একটু পেছনের দিকে যাওয়া যাক। ঝালিয়ে নেওয়া যাক, যাদব পরিবারের ইতিহাস।
সময়টা ২০০৩ সাল, মারা যান মুলয়মের প্রথম স্ত্রী তথা অখিলেশ যাদবের মা মালতী দেবী। খবরের উঠে আসতে থাকে মুলায়মের জীবনের আরেক মহিলার নাম। তিনি সাধনা গুপ্তা। শোনা যায়, ৮০ -এর দশকে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তৎকালীন সমাজবাদী পার্টির তরুন তুর্কি মুলায়ম সিং যাদবের। সাধনাও কাজ করতেন সমাজবাদী পার্টির অফিসে। ১৯৮৮ সালে তাঁদের ছেলে তথা মুলায়ম সিং যাদবের ছোট ছেলেপ্রতীক জন্মায়। এদিকে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর একলা মুলায়ম ২০০৭ দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন সাধনাকে।
জানা যায়, ধীরে ধীরে সমাজবাদীপার্টির আঙিনায় উজ্জ্বল হতে থাকেন সাধনা। চান তাঁর ছেলেও পাক অখিলেশের মতো রাজনৈতিক রাজপাট। তবে সাধনার সে স্বপ্নে জল ঢেলে দেয় প্রতীক নিজেই। রাজনীতি নিয়ে সে আগ্রহী নয়, একথা মায়ের কাছে সে স্পষ্ট জানায় প্রতীক। কিন্তু তাতেও হাল ছাড়েননি সাধনা। ছেলের সাহায্যে না হলেও রাজপাট নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুত্রবধু অপর্ণাকে তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করতে চান সাধনা।
এগল্পের সঙ্গে রামায়ণের কাহিনীর কিছুটা মিল খুঁজে পেতেই পারেন! তবে উল্লেখ্য, বর্তমানে যাদব পরিবারের পিতা পুত্রের মধ্যে যে সম্পর্কের চিড় ধরেছে তার নেপথ্যে রয়েছে এই ঘটনা। অন্তত সূত্রের দাবি তেমনই। তাই সেই দিক থেকে দেখতে গেলে অপর্ণা যাদব নামটি এখন শুধু লখনউ ক্যান্টনমেন্টবাসীদের কাছেই নয়,দেশের তাবড় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বের।
কর্মসূত্রে অপর্ণা একটি এনজিওর কর্ণধার। ঘরে রয়েছে তাঁর এক সন্তানও। বিভিন্ন সূত্রের খবর, এককালে অপর্ণা মোদী ভক্তও ছিলেন। লখনউ ক্যান্টনমেন্টে অপর্ণার জমি কতটা শক্ত হতে পারে সেদিকে নজর রাখছে গোটা 'গো-বলয়' রাজনীতির দুনিয়া তথা ভারত। পাশপাশি লখনউ ক্যান্টনমেন্টে অপর্ণাকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত আদৌ সমাজবাদীপার্টির পক্ষে যাবে না বিপক্ষে, সেদিও নজর রাখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।