কার্গিল শহিদ-কন্যার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে উত্তাল ফেসবুক, রং লাগল রাজনীতিরও!
এবিভিপি-র বিরুদ্ধে শহিদের কন্যার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে উত্তাল ফেসবুক। অভিযোগ রামজস কলেজে এবিভিপি-র 'দাদাগিরি'-র পর অনলাইনে এবিভিপির বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রচার চালানোয় ধর্ষণ ও প্রাণনাশের হুমকি মিলেছে।
নয়াদিল্লি, ২৭ ফেব্রুয়ারি : এবিভিপি-র বিরুদ্ধে কার্গিল শহিদের মেয়ের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে উত্তাল ফেসবুক। রামযস কলেজে এবিভিপি-র 'দাদাগিরি'-র পর অনলাইনে বিজেপির যোগ থাকা এই ছাত্র সংগঠনর বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রচার চালানোয় ধর্ষণ ও প্রাণনাশের হুমকি মিলেছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে এই ছাত্রী। গুরমেহর কউরের এই ফেসবুক পোস্ট ইতিমধ্যেই ভাইরাল সোস্যাল মিডিয়ায়।
দিল্লির মহিলা কমিশনের কাছে গুমেহক অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁর ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন, এবং নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি একটি প্রোফাইল পিকচার লাগান যে ছবিতে তার হাতে একটি প্ল্যাকার্ড ধরা এবং তাতে লেখা রয়েছে "আমি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আমি এবিভিপিকে ভয় পাই না। আমি একা নই, ভারতের সমস্ত পডু়য়াই আমার সঙ্গে #StudentsAgainstABVP". এর পর থেকেই সোস্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের মুখে পড়তে হয় গুরমেহরকে।
ঘটনার সূত্রপাত
২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনার সূত্রপাত। রামজস কলেজে একটি অনুষ্ঠানে জেএনইউ ছাত্র নেতা উমর খালিদ এবং শেহলা রশিদকে "কালচার অফ প্রোটেস্ট (আন্দোলনের সংস্কৃতি)" নিয়ে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু এবিভিপি-র বিরোধিতার জেরে রামজস কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়।
এবিভিপি-র আচরণে ক্ষুব্ধ বাম ভাবাদর্শের ছাত্র সংগঠন, রামজস কলেজের পড়ুয়া এবং শিক্ষকরা একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেন । কিন্তু অভিযোগ, মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলা চালায় এবিভিপি। এই ঘটনায় একাধিক পড়ুয়া, শিক্ষক এবং সাংবাদিককে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়।
তেরঙা মিছিল
সোমবার এবিভিপি নেতৃত্বাধীন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠন তেরঙা পতাকা নিয়ে রামজস কলেজ থেকে একটি মিছিল করে। তাদের দাবি, উমর খালিদকে আমন্ত্রণ জানিয়ে যারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাধারণ পড়ুয়ারা তাদের বিরুদ্ধে। যারা হিংসাকে প্রশ্রয় দেয় এবং সাধারণ পড়ুয়াদের মারধর করে সেই বাম পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
গুরমেহরের দাবি
দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল দিল্লির পুলিশ কমিশনার অলোক বর্মাকে একটি চিঠিতে জানান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী গুরমেহক কউর এবিভিপির বিরুদ্ধে সোস্যাল প্রচার চালানোর পর ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছেন।
এবিভিপি-র ধর্ষণ অভিযোগ
এবিভিপি-র এক সদস্য পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন বাম অনুমোদিত AISA-এর দুই কর্মী তাঁর শ্লীলতাহানি করেছে ২১ ফেব্রুয়ারি। তাঁর অভিযোগ রামজস কলেজের অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার পরেই শ্রী রাম কলেজ অফ কমার্সের বাইরে তাঁকে হেনস্থা করা হয়।
গুরমেহরের বিরোধিতায় বিশিষ্টরা
ফেসবুক পোস্টে কার্গিল যুদ্ধে শহিদ মনদীপ সিংয়ের মেয়ে গুরমেহর একটি প্ল্যাকার্ডের সাহায্যে বলেন, পাকিস্তান আমার বাবাকে মারেনি, যুদ্ধ মেরেছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিরন রিজিজু সোমবার ইঙ্গিত দেন গুরমেহরের অভিযোগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রভাব রয়েছে। রিজিজু টুইট করে বলেন,"কারা এই তরুণীর মাথায় বদচিন্তা ঢোকাচ্ছে? শক্তিশালী সেনা যুদ্ধ প্রতিরোধ করেছে। ভারত কখনও কাউকে আক্রমণ করেনি, তবে দুর্বল ভারত অতীতে আক্রান্ত হয়েছে।"
অন্যদিকে বীরেন্দ্র সহবাগ সরাসরি গুরমেহর প্রসঙ্গ না টানলেও কিছুটা খোঁচার ভঙ্গিতেই নিজে হাতে একইভাবে একটি প্ল্যাকার্ড ধরা ছবি টুইটারে পোস্ট করেন। যাতে লেখা রয়েছে, আমি দুটো তিনশতরান করিনি, আমার ব্যাট করেছে।
শুরু রাজনীতি
বিষয়টিতে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক রং লেগে যায়। এরপর কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী গুরমেহর কউরকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, "স্বৈরশাসনের ভয়ের বিরোধিতা করে আমরা আমাদের পড়ুয়াদের পাশে আছি। প্রত্যেক রাগ, অসহিষ্ণুতা এবং অবহেলার জন্য একজন গুরমেহর কউরের আওয়াজ সবসময় থাকবে।"
এদিকে এনডিএ সরকারের মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, "কিছু বিপথগামী শ্রেণী তরুণ সমাজকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ভারতে সামাজিক উত্তেজনা এবং জনসাধারণের আবেগকে আঘাত করার চেষ্টা করছে। "