মুম্বইয়ের সপ্তম শ্রেণি পাশ বই বিক্রেতা লিখলেন 'আস্ত উপন্যাস'!
মুম্বই, ৫ মে : পুঁথিগত ও প্রথাগত বিদ্যা যে সবকাজে প্রয়োজন তা নয়। স্কুলে না গিয়েও জ্ঞানার্জন সম্ভব। অধ্যাবসায় থাকলে কোনও কিছুই যে বাধা হতে পারে না তার প্রমাণ দিয়েই ছাড়লেন মুম্বইয়ের সন্তোষ পাণ্ডে। [তৃতীয় শ্রেণি পাস বানালেন নিজের 'হেলিকপ্টার']
মুম্বইয়ের ভিলা-পার্লে এলাকায় ছোট্ট একটি বুক স্টল রয়েছে সন্তোষের। ছোট্ট স্টলটি নয় নয় করে অন্তত সাড়ে তিন হাজারের বেশি বইয়ে ঠাসা। পুরনো বইয়ের স্টলে কিছু নতুন বইও রাখতে হয় খদ্দেরদের জন্য। [এবার বাজারে এল 'শূন্য' টাকার নোট!]
৩৩ বছর বয়সী সন্তোষের এটা নিয়েই জীবন। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত কোনওমতে পড়াতে পেরেছিলেন বাবা-মা। মাসে ৬ টাকা স্কুলের মাইনে দিতে না পারায় স্কুলের পাঠ চোকাতে হয় সন্তোষকে। আদতে উত্তরপ্রদেশের আমানি পাণ্ডেপুর গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ এরপর মাত্র ১৩ বছর বয়সেই মুম্বই পাড়ি দেন। [ছেলে বিষয়টায় কাঁচা কি না, তাই অঙ্ক পরীক্ষায় বসলেন বাবা!]
দু'বছর কাজ করার পরে ১৫ বছর বয়সে গ্রামে ফিরে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় সন্তোষকে। এরপর ছোট্ট স্টলে বই বিক্রি আর সঙ্গে চুটিয়ে সংসার। তবুও মনের কোথাও পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসাটা রয়েই গিয়েছিল। ['ব্রেন ডেথ' মহিলার হৃদপিণ্ড প্রাণ বাঁচাল ৬২ বছরের বৃদ্ধের]
আর সেই টানেই আস্ত একটি উপন্যাস লিখে ফেলেছেন তিনি। আসলে চারবছর আগে ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলেন সন্তোষ। সেখানে লঙ্কেশ্বর রাবণ রাজার নানা কাহিনি শোনেন তিনি। কীভাবে ব্রাহ্মণ সন্তান থেকে লঙ্কার অধিপতি হন তিনি তা একেবারে নতুন করে মনে গেঁথে যায় সন্তোষের।
ব্যস সেই চারবছর আগে শুরু। এরপর নিজের কল্পনা ও চলতি লোকগাথাকে এক সুতোয় বেঁধে নিজের মতো করে উপন্যাস লিখে ফেলেছেন তিনি। বইয়ের নাম রেখেছেন "কর্মায়ন : আনটোল্ড সিক্রেটস অব রাবণ"।
এই উপন্যাসটি তিনি হিন্দিতে লিখেছেন। সেটির আবার ইংরেজি সংস্করণও করা হয়েছে। প্রথমে যখন সকলকে বলতেন এমন ঘটনার কথা তখন দোকানের খদ্দের থেকে শুরু করে সকলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সপ্তম শ্রেণি পাশ কেউ উপন্যাস লিখতে পারেন এমনটা কেউ বিশ্বাস করেননি। এমনকী রাত জেগে উপন্যাস লিখতে বসলে প্রথমে স্ত্রী ভেবেছিলেন, সন্তোষ গোপনে পরকীয়ায় মেতেছেন।
তবে পরে সকলের ভুল ভাঙে। সন্তোষের দোকানে রেগুলার কাস্টমার বিনোদ চেরিয়ান পুরো বিষয়টি শুনে বইটিকে ইংরেজি অনুবাদ করতে রাজি হন। সন্তোষের দোকানে আসা প্রকাশক বিনীত বনশল উপন্যাসের কয়েক পাতা পড়ে তা ছাপতে রাজি হন। আর তারপর বাকিটা ইতিহাস। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই সন্তোষের উপন্যাস বাজারে আসতে চলেছে।