বিশ্বকাপ ২০১৫: বাংলাদেশী বন্ধুরা, অযথা এত চেঁচামিচি কেন? পরাজয়টা মেনে নিলে ক্ষতি কী?
বেঙ্গালুরু, ২০ মার্চ : মেলবোর্নে আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫-এর কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হারার পর ক্ষুব্ধ বাংলাদেশী বন্ধুরা এখানে-ওখানে বহু জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছেন। ম্যাচের আম্পায়ারকে একেবারে তুলোধনা করে ছাড়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কর্পোরেট স্বার্থকে কারণ হিসাবে দেখিয়ে এও অবধি বলা হচ্ছে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কোনও বাধা না আসে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হিসাবে বাংলাদেশ কত ভাল দল যে সমর্থকরা এত চেঁচামিচি করছেন?
যাঁরা বাংলাদেশের পরাজয় এতটা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন, চেঁচামিচি করছেন, ভারতকে গাল পারছেন, তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন আপনারা নিজেরাই বলুন তো বাংলাদেশ কী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিরিখে বাংলাদেশ কী এত বড় মাপের দল যার হারে বা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ায় সমর্থকরা একেবারে পাগল হয়ে উঠেছে? হ্যাঁ, তবে এই প্রতিবাদের সত্যিই যদি কোনও যুক্তি থাকে আপনাদের কাছে বোঝান না একবার।
উপমহাদেশ একটু অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য পরিচিত ঠিকই, তবে যেভাবে আইসিসি প্রধান নিজের প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করলেন তা হাস্যকর
উপ-মহাদেশের ক্ষেত্রে সবকিছুতেই একটু বাড়তি প্রতিক্রিয়া দেওয়াটা বেশ সাধারণ ব্যাপার। ১৯৯৬ সালে ইডেনে শ্রীলঙ্কার কাছে ভারতের পরাজয়টা মনে আছে তো। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হারার পর যেভাবে আইসিসি সভাপতি মুস্তাফা কামাল একজন বাংলাদেশী হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিষ্ঠানকে 'ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল' (যা আসলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) বলে কটাক্ষ করলেন, কিছু মনে করবেন না তা বাংলাদেশী সমর্থকদের (এখানে শুধু তাদের কথাই বলা হচ্ছে যারা বিনা কারণে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করছেন) নিম্নরুচির পরিচয় দিচ্ছে।
বাংলাদেশের আইসিসি সভাপতি জানতেন না বর্তমানে ভারত এই খেলায় শাসন করছে? নাকি গতকালই জানলেন সেটা?
বর্তমানে বাণিজ্যিক ক্রিকেটের বাজারে ভারত যে বিশ্ব ক্রিকেটে প্রাধান্য তৈরি করেছে তা কী অজানা ছিল আইসিসি সভাপতির? রাজনীতিবিদ থেকে ক্রিকেট কর্তা হওয়া কামাল, ভারতের কাছে বাংলাদেশের হারার পরই আচমকা ক্রিকেটের আত্মা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শীর্ষে বসে থাকা এক কর্তা যখন একটি নির্দিষ্ট দেশের প্রতিনিধি হিসাবে আচরণ করেন তা কি সত্যিই লজ্জাজনক নয়?
বাংলাদেশ হেরেছে কারণ কারণ এখনও ভারতের শক্তির সঙ্গে সমতা আনতে পারেনি তারা
বাংলাদেশ হেরেছে কারণ ভারতের পারফরম্যান্স বা শক্তির মাপকাঠিতে সমস্তকে উঠতে পারেনি তারা। দুই দলের মধ্যে খেলোয়াড়দের মধ্যে দক্ষতা এমনকী অভিজ্ঞতাতেও আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে। রোহিত শর্মা যদি ১৩৭ না করে নব্বইয়ের ঘরে রান করে আউট হতো তাহলেও কী খুব বেশি তফাৎ গড়তে পারত বাংলাদেশ গতকালের ম্যাচে?
৩০৩ রান তাড়া করতে গিয়ে যেখানে কোনও খেলোয়াড় ব্যক্তিগত ৫০ রানের গণ্ডি টপকালেন না সেখানে ম্যাচ জয়ের আশা?
শেষ ২০ ওভারে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশী বোলারদের যেভাবে পিটিয়েছে, আর অন্যদিকে ব্যাট করতে নেমে ৩০৩ রান তাড়া করতে গিয়ে যেখানে একজন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানও ৪০ রান ব্যক্তিগত ভাবে সংগ্রহ করতে পারলেন না, সেঞ্চুরি হাঁকানোর কথা তো ভুলেই যান, যদিও এত বড় রান সফলভাবে তাড়া করতে গেলে যার প্রয়োজনীয়তা ছিল আবশ্যিক, তারা ম্যাচ হারায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে?
বোলিং, ব্যাটিং এমনকী ফিল্ডিংয়ে (একাধিকবার পায়ের ফাঁক দিয়ে যেভাবে বল গলিয়েছেন বাংলাদেশী ফিল্ডাররা, ওভার থ্রো-এর বহর দেখে সারা বিশ্ব হাসিতে ফেটে পড়েছে ) এই ধরণের পারফরম্যান্স হওয়ার পরেও তারা ভুল আম্পায়ারিংয়ের তত্ত্ব খাঁড়া করে বিদ্রোহ-বিক্ষোভ করছে এটা কী সত্যিই যুক্তিসঙ্গত? আপনারাই বিচার করুন।
হাবিবুল বাশার একমাত্র বাংলাদেশী যার কথায় অন্তত কিছুটা যুক্তি রয়েছে
প্রাক্তন বাংলাদেশী অধিনায়ক হাবিবুল বাশার একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিপক্ষ শিবিরের হওয়া সত্ত্ব্ও সংবেদনশীল কথা বলেছেন। আম্পায়ারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বাশার বলেছেন, কোনও একটি বিশেষ দিনে সিদ্ধান্ত পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে। আর এই জন্যই ক্রিকেট তফাৎ গড়তে পারে। কিন্তু যেভাবে তাঁর দেশের সমর্থকরা এবং মিডিয়া শোরগোল ফেলছে, বিরোধী স্লোগান দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের নিজের নিয়ে একটা বিশাল কিছু ধারণা আছে।
আজ পর্যন্ত কতগুলি টেস্ট ম্যাচ জিতেঠছে বাংলাদেশ এবং কতগুলি বড় দলের বিরুদ্ধে?
কতগুলি
টেস্ট
ম্যাচ
বাংলাদেশ
এখনও
পর্যন্ত
জিতেছে?
আর
জিতলেও
তার
মধ্যে
কতগুলি
বড়
বড়
দলগুলির
বিরুদ্ধে?
২০০৭
সালে
যখন
বাংলাদেশ
ভারতকে
চমকে
দিয়েছিল
তখন
যদি
আলিম
দার
কোনও
ভুল
সিদ্ধান্ত
নিয়ে
না
থাকেন
(২০০৭
সালের
সেই
ম্যাচেরও
আম্পায়ার
ছিলেন
আলিম
দার),
তাহলে
গতকালের
ম্যাচ
নিয়ে
কেন
প্রশ্ন
তোলা
হচ্ছে?
ধোনির টস জেতাও কী ক্রিকেট কর্তারা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন?
আশা করি এটা অন্তত শুনতে হবে না যে, যে কয়েনটি দিয়ে টস হয়েছিল তার রিমোর্ট কন্ট্রেল কর্পোরেট হাউস বা আইসিসি কর্মকর্তাদের হাতে ছিল এবং তারা চেয়েছিল ধোনি টস জিতে প্রথম ব্যাট করুক, যাতে বড় রানের সাহায্য়ে বিপক্ষকে একেবারে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলতে পারে।
প্রিয় বাংলাদেশী বন্ধুরা, আম্পায়ারিং-এর গলদে আপনাদের সঙ্গে আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু দয়া করে আপনারা এই সত্যটা গ্রহণ করুন যে গতকাল এমসিজি মাঠে ভারত দল হিসাবে অনেক উন্নত ও যোগ্য ছিল। আমরা এও আশা করি এই হার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আরও শক্তি দেবে আগামী বড় ম্যাচে আমাদের দিকে আরও বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য। মাঠের জবাব মাঠের জন্যই তোলা থাক না...।