বিরাট, ঘূর্ণি পিচে বিপক্ষকে নাস্তানুবাদ করাটাই টেস্টে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে না
আবার ফিরে এল বুঝি সেই আজহারউদ্দিন-ওয়াড়েকর ফর্মুলা। ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে তাতে বিপক্ষকে, বিশেষ করে স্পিন খেলা যাদের কাছে বিভীষিকা, চোবানো-এ ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন ঘটনা নয় । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই খেলা খেলে ভারতের ক্রিকেটের আদৌ কতটা উপকার হচ্ছে?
বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীনে ভারত টেস্ট ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে এক বছরের উপর হয়ে গেল। সেই গত বছর অগাস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গলে একটি জেতা খেলা হেরে গিয়েছিল কোহলির দল । অবশ্য, তাতে সিরিজ জেতা আটকায়নি । সেই থেকে পরপর দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে টেস্টের জগৎসভায় আবার শ্রেষ্ঠ আসন অধিকার করেছে ভারত, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হটিয়ে ।
কিন্তু এই জয়গুলির মধ্যে বেশিরভাগই এসেছে 'মাইনফিল্ড' উইকেটে। এক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাঁদের দেশে হারানো ছাড়া (অবশ্য এটাও এখন ভারতীয় দলের কাছে জলভাত হয়ে গিয়েছে) বাকি সব টেস্টই ওই আজহার-ওয়াড়েকর ফর্মুলাতেই প্রায় জেতা হচ্ছে । এতে কোহলির অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান ঝকঝকে দেখাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু টেস্টে এক নম্বর দলের শিরোপাটি কি ঠিক মানাচ্ছে?
পাকিস্তানের এক নম্বর স্থানার্জনের ব্যাপারটি তাও নয় বুঝলাম শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে তাঁদের দেশে রুখে দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে এসেছিল । ভারত কি সেরকম কিছু এখনো করতে পেরেছে? ইংল্যান্ডে ভারতের শেষ জয় কবে এসেছিল মনে করতে বেশ বেগ পেতে হয় । উল্টে ইংল্যান্ড এসে তাঁদের উঠানেই তাঁদের হারিয়ে দিয়ে যায় বছর তিনেক আগে । অস্ট্রেলিয়াতে আর দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতের এখনও সিরিজ জয় অধরা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও ভারতের সাফল্যের হার এমন কিছু আহামরি নয় । চুরাশি বছর ধরে ক্রিকেট খেলেও এশিয়ার বাইরে টেস্টে ভারতের সাফল্যের হিসেব বোধহয় একটি শিশুও জানে । তবে টেস্ট শিরোপার পক্ষে যুক্তি কী?
কোহলির বড় পরীক্ষা হতে চলেছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে, ঘরের মাঠে পাঁচ টেস্টের সিরিজে । এই মুহূর্তে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বিশ্বে বেশ শক্তিশালী একটি দল এবং তাঁদের বিপক্ষে কোহলি নিজের নিখুঁত রেকর্ড কতটা বজায় রাখতে পারেন, সেটাই দেখার।
ব্যক্তিগতভাবেও কোহলির ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজেকে কিছু প্রমাণ করার আছে । সুতরাং, আসন্ন সিরিজে ভারতকে অনেক দিক দিয়েই প্রমাণ করতে হবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপাটিকে।
ইন্দোর, রাজকোট -এইসমস্ত মাঠে টেস্ট ম্যাচ কেন?
আরও অবাক লাগছে এই দেখে যে যখন টেস্টে দর্শক ফিরিয়ে আনতে উন্নতমানের পিচ ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেখানে এই ইন্দোর বা রাজকোট বা বিশাখাপত্তনম-এর মতো (শেষোক্ত দু'।টি মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলবে ভারত) পিচে টেস্ট ম্যাচ খেলার মানে বোঝা মুশকিল। এইসমস্ত মাঠগুলিতে আগে শুধু ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হতো। পাটা উইকেট আর ছোট সীমানার এই মাঠগুলিতে তাও নয় ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে টেস্ট ম্যাচ?
তাতে বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেট দলের কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের দেশে জেতার প্রস্তুতি আদৌ কতটা উপকৃত হবে?