নজর এবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, লালসার গ্রাস থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী?
অতি লোভ, অর্থ লালসা গ্রাস করেছে রাজ্যকে। সে স্বাস্থ্য পরিষেবা হোক বা স্বাস্থ্য, কিংবা বাসস্থান— মানুষের মৌলিক অধিকার অর্জনের মাপকাঠি হচ্ছে অর্থ।
অতি লোভ, অর্থ লালসা গ্রাস করেছে রাজ্যকে। সে স্বাস্থ্য পরিষেবা হোক বা স্বাস্থ্য, কিংবা বাসস্থান- মানুষের মৌলিক অধিকার অর্জনের মাপকাঠি হচ্ছে অর্থ। চিকিৎসা কেন্দ্র যে কসাইখানা নয়, তা সেবা প্রদানের জায়গা। সে কথা পরিস্ফুট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মামতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাওয়াই দিয়ে বলেছেন, হৃদয়হীন ব্যবসা করবেন না।[ডোনেশনে কড়া মুখ্যমন্ত্রী, নজর এবার রাজ্যের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে]
শুধু মৌখিক দাওয়াই দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় কড়া বিল আনলেন, আইন করলেন। নিয়ম-শৃঙ্খলার বাঁধনে বেঁধে ফেললেন বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে। আইন ভাঙলে কড়া শাস্তি অপেক্ষা করছে সেই বার্তাও দিয়ে রাখলেন। সাবধান করলেন ভুলেও আইন ভাঙবেন না। যদি আইন ভাঙেন তবে কমিশন আছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। বেসরকারি হাসপাতালের বেনিয়ম তিনি রুখবেনই।
না এখানেই থেমে গেলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দফতরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়েও ভুরি ভুরি অভিযোগ জমা পড়েছে। অতিরিক্ত ডোনেশন রুখতে তিনি তাই কড়া হচ্ছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা মিটলেই বৈঠকে বসবেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে। তাঁদের কাছেই চাইবেন এই অসুখের দাওয়াই।
কেন এই পথে হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে? হঠ্যাৎ করে কেন মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সরব? বলা যায় বাধ্য হয়ে। মানুষ হাসপাতালে যায় বিপদে পড়ে। রোগ সারাতে সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে ওই বেসরকারি হাসপাতালগুলো। নির্মম, কসাই বললেও তাই অত্যুক্তি হয় না অনেক ক্ষেত্রে। পরিষেবা দেওয়ার নামে চুটিয়ে ব্যবসা করছে। অস্বাভাবিক রকমের অর্থের বিল করা হচ্ছে। জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি জমা রেখে রোগীকে ঘরে ফেরাতে হচ্ছে।
তবু সবাইকে জীবিত অবস্থায় ফেরাতে পারা যাচ্ছে না। রিলিজ অর্ডার আটকে রাখা, ডেড বডি না ছাড়ার মতো অমানবিক কাজও চলছে। এ জন্য তো দায়ী অতি লোভ, অর্থ লালসা। এ কথা কি অস্বীকার করা যায়! অস্বীকার করা যায়নি বলেই মুখ্যমন্ত্রী এবার কড় হয়েছেন। আইন করেছেন বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে শায়েস্তা করতে।
কিন্তু ঠিক একই কাণ্ড ঘটে চলছে বেসরকারি শিক্ষা ও আবাসনের ক্ষেত্রেও। যে যেমন পারছে মোটা টাকায় শিক্ষাদানের অধিকার বিক্রি করছে। একই কথা খাটে আবাসনের ক্ষেত্রেও। মাথার উপর ছাদ পেতে লাগবে মোটা টাকার ডোনেশন। যার অর্থ টাকা থাকলে পড়াশোনা কর, না থাকলে অশিক্ষিত থাক। বা টাকা থাকলে ফ্ল্যাট কেনো, না থাকলে গাছতলায় থাকো। তাই দাবি উঠেছে হাসপাতালের পর এবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসন কর্তৃপক্ষের পায়ে বেড়ি পরাক সরকার।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মাথার ওপর ছাদ- এগুলো তো মানুষের প্রাথমিক চাহিদা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সুলভ আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দায়ও প্রকারান্তরে সরকারের। এতদিন কিন্তু সরকার বিষয়গুলি নেয় ভাবেনি। অগত্যা সঞ্জয় রায়ের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে সরকারকে। বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কড়া হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে এক অলিখিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কত মানুষের পকেট কাটতে পারে? পকেট কাটার নেশা পেয়ে বসেছে হাসপাতাল, স্কুল-কলেজে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভুলেই গেছে এগুলো মানুষের প্রাথমিক চাহিদা। ভুল গেচে, এগুলো একটা পরিষেবা। মানুষের মৌলিক অধিকার। এখানে কসাই হওয়া যায় না। সরকারি ছাড় নেওয়ার সময় এইসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়। সাধারণ মানুষকে কম খরচে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু পরে তা দেয় না। সরকারি প্রকল্পেও তারা যোগ দেয় না। খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই অভিযোগ এনেছেন প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে।
এখন রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রমরমা। আট হাতে পয়সা লুটছে। নিয়ন্ত্রণ নেই। এখন চারপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো কিন্ডার গার্টেন (কেজি স্কুল)। নামমাত্র মূল্যের শিক্ষক-শিক্ষিকা রেখে মোটা টাকা ফিজ নিচ্ছে। বছরের শুরুতে মোটা টাকার অ্যাডমিশন ফি। যারা একটু নাম করে ফেলেছে, তাদের তো পোওয়া বারো। নার্সারি থেকে ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ- সর্বত্রই চলছে এই ডোনেশন-রাজ। সরকারি গাইড লাইন মানার কোনও প্রশ্নই নেই।
আবাসনেও এক হাল। ফ্ল্যাটের যা রেট তা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। তাহলে মধ্যবিত্ত কোথায় যাবে? তাদের এক টুকরো বাসার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে? নাকি দামি ফ্ল্যাট নিতে ঘুষ নেবে, ডাকাতি করবে? সরকারি ফ্ল্যাট চাহিদার তুলনায় মাত্র ২-৩ শতাংশ। বাকি ৯৭-৯৮ শতাংশের জন্য ভরসা বেসরকারি আবাসন। ফলে আবাসন ব্যবসায়ীরা সুযোগটা নেয়।
যেমন সরকারি হাসপাতালের অপ্রতুলতা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবিজ্ঞ চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসার দীর্ঘসূত্রতা, গাফিলতি, বেসরকারিতে ভর্তির প্রলোভন ইত্যাদির সুযোগগুলো নেয় বেসরকারি হাসপাতল। একইভাবে সরকারি বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মান ভালো নয়। সবাই টিউশন করছেন লাইন দিয়ে। তাতে যা খরচ পড়ছে, তার বেশি দিয়ে বেসরকারিতে ভর্তি হওয়া ভালো মনে করছেন অভিভাবকরা।
এই
পকেটকাটার
রোগ
আগে
সারাতে
হবে।
আর
সরকারকেই
এগিয়ে
আসতে
হবে
তা
বন্ধ
করতে।
শিক্ষা
ও
স্বাস্থ্য
খাতে
সরকার
ভালো
খরচ
করে।
তারপরও
বেহাল
অবস্থা
কেন?
এই
প্রশ্ন
উঠে
পড়বে।
সেই
সঙ্গে
বেসরকারি
ক্ষেত্রে
লাগাম
পরাতে
হবে।
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়
এতদিনে
নড়েচড়ে
বসেছেন।
মানুষ
তাই
আশার
আলো
দেখছে।
হয়তো
এবার
কম
খরচে
বেসরকারি
চিকিৎসা
সম্ভব
হবে।
সম্ভব
সাধ্যের
মধ্যে
বেসরকারি
ক্ষেত্রে
উচ্চশিক্ষাদান।
এবার
বেসরকারি
হাসপাতালের
মতো
শিক্ষা
ও
আবাসন
নিয়ন্ত্রণেও
মাথা
গলাক
সরকার,
এমনটাই
চান
রাজ্যবাসীর।