মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প হারলেই রিপাবলিকানদের মঙ্গল
অতিরিক্ত নেতির রাজনীতি করাটাই রক্ষণাত্মক রিপাবলিকান পার্টির কাল হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা; ট্রাম্পের পরাজয় ঘটলেই আত্মানুসন্ধানের সম্ভাবনা রয়েছে
আগামী ৮ নভেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকানদের ফের হোয়াইট হাউসে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা তা পরিষ্কার হবে আর কয়েকদিনের মধ্যেই। কিনতু এই নির্বাচনে ট্রাম্প তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে জিতুন বা হারুন, তাঁর দল রিপাবলিকানদের ২০১৬-র এই বিহুবিতর্কিত নির্বাচন থেকে শেখার অনেক কিছুই রয়েছে।
যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি বা জিওপি যদি এই ভুলগুলো শুধরে নিতে পারেন এই বেলা, তাহলে ট্রাম্পের পরাজয় ঘটলেও তাঁদের লোকসান বিশেষ হবে না। আবার, ট্রাম্প যদি জেতেন আর রিপাবলিকানরা তাঁদের পুরোনো অভ্যেসও না ছাড়তে পারেন, তবে জিওপি-র ভবিষ্যৎ যে খুব সুরক্ষিত, তা বলা চলে না।
এমনটাই মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম খ্যাত রেডিও সঞ্চালক মাইকেল মেদভেদ। ইউএসএ টুডে পত্রিকাতে "জিওপি নিডস রাডিক্যাল থিঙ্কিং" শীর্ষক একটি লেখায় মেদভেদ বলেন এই নির্বাচনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নিজেদের মধ্যে দোষারোপের খেলায় না মেতে রিপাবলিকানদের প্রয়োজন শূন্য থেকে শুরু করার।
মেদভেদ এই প্রসঙ্গে রিপাবলিকানদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তিনটি দাওয়াই বাতলেছেন।
"রিপাবলিকান নেতারা, নেতির রাজনীতি বন্ধ করুন এবার"
এক, নেতির রাজনীতি বন্ধ করা। মেদভেদ বলেছেন শুধুমাত্র বিরোধীদের না দুষে রিপাবলিকানদের এবার উচিত নিজেদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জনসমক্ষে তুলে ধরা। তিনি বলেন যে রিপাবলিকানরা যেভাবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা সহ ডেমোক্র্যাটদের বিভিন্ন নেতাকে আক্রমণ করেছেন নানা সময়ে, তা আদতে তাঁদের নিজেদের পক্ষে ভালো বিজ্ঞাপন নয়।
"ওবামা আদৌ মার্কিন নাগরিক নন" বা "হিলারিকে জেলে পুরে দেব" ইত্যাদি নানা মন্তব্য করে রিপাবলিকান প্রতিনিধি মার্কিন নাগরিকদের কাছে টেনে নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন, বিশেষ করে সেই সমস্ত প্রতিনিধিদের যাঁরা গত দু'টি নির্বাচনে ওবামা তথা ডেমোক্র্যাটদেরই ভোটে জিতিয়েছিলেন।
"এমন অবান্তর প্রতিশ্রুতি দেবেন না যা মেটানো সম্ভব নয়"
দ্বিতীয়ত, মেদভেদ রিপাবলিকানদের পরামর্শ দিয়েছেন এমন প্রতিশ্রুতি না দিতে যা বাস্তবে রক্ষা করা যায় না। এই প্রসঙ্গে তিনি উত্থাপন করেছেন ট্রাম্পের মেক্সিকো সীমান্তে বিরাট দেওয়াল তোলার প্রতিশ্রুতি যার মাধ্যমে তিনি আমেরিকার দক্ষিণী প্রতিবেশী থেকে অভিবাসন বন্ধ করতে চান।
সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া বা বিদেশিদের ঘর ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার কথা না বলে জিওপি-র নেতৃত্বের উচিত সীমান্ত নিরাপত্তা নীতির সংস্কার ইত্যাদি বাস্তবিক বিকল্পের কথা বলা, মনে করেন মেদভেদ।
"মনোনয়ন পর্ব আরও যথাযথ করুন"
মেদভেদের তৃতীয় দাওয়াইটি হচ্ছে মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে। জিওপির সমস্যা হচ্ছে তাদের অতি লম্বা এবং দুর্বোধ্য প্রার্থী চয়ন প্রক্রিয়া যা আদতে ট্রাম্পের মতো প্রার্থীকে উঠে আসতে সাহায্য করেছে এবং আহত করেছে দলের ভাবমূর্তিকেই।
মেদভেদ রিপাবলিকানদের বলেছেন তাঁদের মনোনয়ন পর্বটিকে আরও নির্মেদ করে তুলতে। হইচই কম করে প্রার্থী নির্বাচনে স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক পরিসরকে বাড়ানোর কথাও বলেছেন।
তবে মেদভেদ এও যোগ করেছেন যে ট্রাম্প যদি এবারের নির্বাচনে জেতেন, তবে জয়োল্লাসে মজে থাকা রিপাবলিকানদের চোখে এই বাস্তবতা ধরা দেবে, এমন সম্ভাবনা কম।
অর্থাৎ, যেই নেতির রাজনীতি তাঁদের মজ্জাগত, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের নেতৃত্বে তাই আরও বড় হয়ে উঠবে। বরং ক্লিন্টন যদি রাষ্ট্রপতি হন, তাহলেই রিপাবলিকানদের প্রকৃতিগত বদল ঘটার বেশি সম্ভাবনা, মত মেদভেদ-এর।
অর্থাৎ, সোজা ভাষায় বললে, ট্রাম্প হারলেই রিপাবলিকানদের ভালো।