নোট বাতিল নিয়ে মোদীর নিন্দায় রাজ ঠাকরে; কোনও বিশেষ কারণে কি?
শিবসেনার জনপ্রিয়তাকে ফের চাঙ্গা হতে দেখেই কি পুর নির্বাচনের আগে মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করলেন রাজ ঠাকরে?
নরেন্দ্র মোদী সরকারের 'ডিমনেটাইজেশন' প্রকল্পের সমালোচনা করলেন এবার মহারাষ্ট্র নবনির্মান সেনার (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে "অপরিকল্পিত" বলে রাজ জানান যদি এটি আসল উদ্দেশ্য সাধন না করতে পারে, তবে তার প্রভাব সারা দেশের পক্ষেই মারাত্মক হবে।
মুম্বইতে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে এমএনএস সুপ্রিমো বলেন দেশের ভালো করবে এমন কোনও কাজের বিরোধিতা করার কারণ নেই। "কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করা হয়েছে বলে মনে হয় না। আর তার ফলাফল আমরা সবাই দেখছি," বলেন রাজ।
তিনি এও বলেন যে সবাইকে বলা হচ্ছে এর ফলে দেশের ভালো হবে। কিন্তু কিভাবে ভালো হবে সেটা কেউই বলছেন না, এমনকী প্রধানমন্ত্রীও না। ক্যাবিনেটকে না জানিয়ে যেভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তারও বিরোধিতা করেছেন রাজ।
প্রসঙ্গত, গত ৮ নভেম্বর রাত্রে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের এই ঘোষণাটি করেন কালো টাকার কারবার এবং সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করার লক্ষ্যে। পরে বলা হয় এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর একার ছিল। এমনকী, তাঁর দলের অন্যান্য বড় নেতারাও নাকি জানতেন না এ ব্যাপারে কিছুই।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে বিপুল অর্থব্যয়ের অভিযোগ তুলে রাজ ঠাকরে বলেন যে যদি মোদী কালো টাকাকে এতই ঘৃণা করেন তাহলে লোকসভা নির্বাচনে তিনি জিতলেন কী ভাবে। তিনি আরও বলেন যে বিজেপি তাঁদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসেবে এখনও দেয়নি। "সবাই জানে কার কাছে কত কালো টাকা রয়েছে। সরকার সেইসব কালো টাকার কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা নিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রান করছে কেন?" রাজ প্রশ্ন তোলেন।
পাশাপাশি, সম্প্রতি কর্ণাটকের বিজেপি নেতার কোটি কোটি টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দেওয়ারও কথা বলেন। "একদিকে মোদী কালো টাকা উদ্ধারের কথা বলছেন, অন্যদিকে বিজেপির জনার্দন রেড্ডি ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন," রাজ বলেন।
কিন্তু রাজ এই সময়ে মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন কেন? অতীতে তিনিই বলেছিলেন যে মোদীর মধ্যে উঁচুদরের নেতৃত্বের আভাস তিনি অনেক আগেই পেয়েছিলেন এবং তাঁকে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থনও করেন। তাহলে এখন রাজ কি অবস্থান বদল করছেন?
আসলে কারণ অন্য। মহারাষ্ট্রে বেশ কিছু পুরভোট আসন্ন। আর মহারাষ্ট্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে জঘন্য ফল করার পরে এমএনএস এখন ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। এক সময়ে রাজের উত্থানের ফলে বাল ঠাকরে-পরবর্তী শিবসেনার জনপ্ৰিয়তা অনেকটাই হ্রাস পায়। কিনতু, এবার চিত্রটি উল্টো। এমএনএস-এর জনপ্রিয়তা এখন নিম্নমুখী হওয়াতে এবং বিজেপির জোটসঙ্গী হয়েও তার প্রতি শিবসেনার কঠোর অবস্থান উদ্ভব ঠাকরের গুরুত্ব আবার বাড়িয়েছে অনেকটাই।
যদিও ২০১৪ সালের লোকসভা এবং মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোটসঙ্গী বিজেপির কাছে ঘরের মাটিতেই হার মানতে হয় শিবসেনাকে, তাও তারা বিজেপির প্রতি তাদের অবস্থান শিথিল করেনি। এমনকি, সম্প্রতি কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তারা তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও হাত মিলিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে।
আর সেটা যে তারা আসন্ন পুরভোটে মধ্যবিত্তকে রাগিয়ে দেওয়া বিজেপিকে আরও কোনঠাসা করতেই করছে, সেটা বুঝতে অসুবিধে হয় না। আসন্ন নির্বাচনে এনডিএর এই দুই শরিক দলের একজোট হয়ে লড়ার সম্ভাবনাও অনিশ্চিত। তাই বেশ কিছুটা মুক্ত বিহঙ্গের মতোই ডিমনেটাইজেশন ইস্যুতে মোদীর দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে উদ্যোগী শিবসেনা।
আর এখানেই রাজের চিন্তা। এমনিতেই তাঁর দলের নিম্নমুখী পারফরম্যান্স শিবসেনার যে ভোটগুলি তিনি পাচ্ছিলেন আগের পুরভোটে, তা শিবসেনার বাক্সেই ফিরে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। তাছাড়া, সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর তহবিলে অনুদান দেওয়ার যে বির্তকিত মন্তব্য রাজ ঠাকরে করেন, তাতেও চটেন অনেক সাধারণ মানুষও।
আর তাই এই বেলা মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পুরভোটের আগে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টায় এমএনএস সুপ্রিমো। কারণ এবারও যদি তাঁর দলের ভাগ্যে ওই একই পরিণতি লেখা থাকে, তাহলে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তাঁর নেতৃত্বের উপরে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেবে।