'সিন্ধু জল চুক্তি' দিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে চাইলে তা ব্যুমেরাং হতে পারে ভারতের কাছে!
উরি হামলার পরে পাকিস্তানকে এবার সামরিক অথবা কূটনৈতিক আক্রমণ করা উচিত ভারতের। বহুলাংশের মত তেমনই। পাকিস্তানকে যতক্ষণ না উচিত শিক্ষা দেওয়া যাবে, ততক্ষণ এই প্রতিবেশী দেশ সন্ত্রাসবাদকে উসকানি দেওয়া নিয়ে উচিত শিক্ষা পাবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। আর যদি কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ না বাধিঁয়ে পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে হয়, সেক্ষেত্রে সিন্ধু জল চুক্তি বড় হাতিয়ার হতে পারে ভারতের। [উরি হামলার পরে মাসুদ আজহারের জঈশ-ই-মহম্মদ 'সেরা জঙ্গি দল' ক্লাবে উত্তীর্ণ হল!]
এই চুক্তির খেলাপ করে পাকিস্তানকে শায়েস্তা করা সম্ভব বলে মত অনেকের। তবে কি এই চুক্তি? ঘটনা হল, ১৯৬০ সালে জল বণ্টন সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয় ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে। এটি 'সিন্ধু জল চুক্তি' নামে পরিচিত। সেইসময়ে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় দুই প্রতিবেশী দেশ জল নিয়ে মধ্যস্থতায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেছিল। যদিও তাতে বিশেষ সুফল মেলেনি। [উরি হামলার জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে এসেই হামলা চালিয়েছে, এই তার প্রমাণ!]
১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আয়ুব খানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বের তিনটি নদী বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রুর অধিকার থাকবে ভারতের কাছে। অন্যদিকে পশ্চিমের তিনটি নদী সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলমের অধিকার থাকবে পাকিস্তানের। [উরির প্রতিশোধ : সীমান্তরেখা পার করে ২০ জঙ্গির দমন করল স্পেশ্যাল ফোর্স?]
তবে এই চুক্তিতে প্রথম থেকেই বিতর্ক ছিল এবং আজও রয়েছে। কারণ সবকটি নদীর উৎপত্তিস্থলই ভারতীয় অববাহিকায়। ফলে যেহেতু সবকটি নদী ভারতের মধ্য দিয়ে বয়ে পাকিস্তানে যাচ্ছে, তাই চুক্তি অনুযায়ী ভারত সেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সহ সমস্ত কাজে এই জল ব্যবহার করতে পারবে বলে স্থির হয়। মোট জলের ২০ শতাংশ ভারত ব্যবহার করতে পারবে বলে ঠিক হয়েছিল।
তবে চুক্তির পর সেভাবে কখনও সমস্যা তৈরি না হলেও পাকিস্তানের বরাবর ভয় রয়েছে এই নদীর জল নিয়ে। যেহেতু যুদ্ধ শুরু হলে ভারত চাইলে পুরো জলটাই পাকিস্তানে ঢোকা বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে অর্ধেক পাকিস্তান শুকিয়ে যেতে পারে। সেহেতু বহুবার চুক্তি নিয়ে সরব হয়েছে পাকিস্তান।
তবে গত পাঁচ দশকের বেশি সময় গড়িয়ে গেলেও ভারত কখনও জল ছাড়া নিয়ে কখনও বেইমানি করেনি। কখনও কোনও সমস্যা দেখা দিলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষকে পাশে সরিয়ে আইনি পথে এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। ফলে এই জল চুক্তি বিশ্বের অন্যতম সফল চুক্তি বলেই মান্যতা পেয়েছে।
অনেকে বলছেন যেহেতু সিন্ধু চুক্তির নিয়ন্ত্রণ বহুলাংশে ভারতের হাতে রয়েছে, তাই চাইলে এটি নিয়েই পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে পারে ভারত। জল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকির বদলে পাকিস্তানকে দিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের জব্দ করা সম্ভব বলেও অনেকে মনে করছেন। কারণ এই জলধারা পাকিস্তানে না পৌঁছলে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের খরাসঙ্কটে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠবে।
তবে ভারত কি এতটা কঠোর হতে পারবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূটনৈতিকভাবে ভারতের এই পদক্ষেপ করা ঠিক হবে না। কারণ হিমালয়ের কোল থেকে উৎপন্ন ব্রহ্মপুত্র নদীর নিম্ন অংশে ভারত রয়েছে। এই নদী উত্তর-পূর্ব ভারতকে জল সরবরাহ করে। এর উপরের অংশে রয়েছে পাকিস্তানের 'বন্ধু' চিন।
যদি ভারত সিন্ধুর জল নিতে কূটনীতি করতে যায় তাহলে বেজিংকে বলে ইসলামাবাদ ভারতকেও চাপে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতেই পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার প্রয়াস চলছে। সেই জায়গায় জল ইস্যুকে সামনে তুলে ধরলে পাকিস্তান ইস্যুর মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে।
সিন্ধু চুক্তির পাশাপাশি ভারত প্রতিবেশী আরও দুটি দেশের সঙ্গে জল চুক্তিতে আবদ্ধ। একটি হল গঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি, এবং আর একটি হল গন্ডক নিয়ে নেপালের সঙ্গে চুক্তি। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে জল নিয়ে গোলমাল বাঁধলে অন্য চুক্তিগুলিও সমস্যায় পড়তে পারে।
ফলে পাকিস্তানকে যদি চাপে ফেলতে হয় তাহলে ভারতকে অন্য কোনও পথে এগোতে হবে। প্রতি আক্রমণ অবশ্যই করবে ভারত, তবে কূটনৈতিক পথে, সারা দুনিয়ার আত্মবিশ্বাস অর্জন করে। একমাত্র তবেই কোণঠাসা করা সম্ভব হবে পাকিস্তানের মতো দেশকে।