না ট্রাম্প সাহেব, হিলারিকে আপনি হারাতে পারবেন বলে মনে হয় না
এতদিন ধরে তো তিনি চালিয়েই খেলছিলেন। প্রতিপক্ষের নেতারা তো বটেই, নিজের রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে তৈরী হওয়া অসন্তোষকেও তিনি হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। মার্কিন মুলুকের তাবড় সংবাদমাধ্যম, মহিলা নেতা কিংবা সাংবাদিক, বিপক্ষ দলের সমর্থক -- কাউকেই এযাবৎ তোয়াক্কা না করা ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার নিউ ইয়র্কের হেম্পস্টিডের হফস্ত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এবছরের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম বিতর্কসভায় যেন শূন্য রানেই আউট হয়ে গেলেন।
আশ্চর্য লাগলেও এমনটাই হয়েছে। যে হিলারি ক্লিনটনকে ট্রাম্প অন্য সময়ে নানা বিশেষণে ভূষিত করে এসেছেন - জনসভায় হোক বা টুইটে - তাঁর সামনাসামনি এসে এই ধনকুবের ব্যবসায়ী যেন কুঁকড়ে গেলেন। অন্যদিকে, প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি এবং মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি দেখালেন যে আগামী ৮ নভেম্বরের জন্যে তিনি সম্পূর্ণ তৈরী। উজ্জ্বল লাল পোশাক পরা হিলারির প্রত্যেকটি অভিব্যক্তিতে ফুটে বেরোচ্ছিল সেই আত্মবিশ্বাস।
কিন্তু ট্রাম্প এই মোক্ষম সময়ে ঠোক্কর খেলেন কেন?
তার অনেকগুলি কারণ রয়েছে। তবে প্রধান যে কারণে ট্রাম্প হিলারির বর্মভেদ করতে পারলেন না তা হচ্ছে অনবরত অবিবেচকের মতো কথা বলে ট্রাম্প নৈতিকভাবে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন। রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে হিলারি সহ বিভিন্ন মহিলাদের সম্পর্কে আপত্তিজনক কথা বলা। "হিলারিকে কি প্রেসিডেন্টের মতো দেখতে?" জাতীয় লাগামছাড়া মন্তব্য করে ট্রাম্প আসলে হিলারির বিরুদ্ধে নিজের জায়গাটাকেই নড়বড়ে করে ফেলেছেন।
মহিলাদের সম্পর্কে এত বাজে কথা বলেছেন ট্রাম্প যে এখন তার মূল্য চোকাতে হতে পারে
তাঁর লড়াইটা যদি কোনও পুরুষের সঙ্গে হতো, তাহলেও হয়তো ট্রাম্পের পক্ষে লড়াইটা এতটা কঠিন দেখাত না, কিন্তু ক্রমাগত মহিলাদের সম্পর্কে বেহিসেবি কথা বলে যখন শীর্ষ লড়াইতে একজন মহিলার বিপক্ষেই তিনি পড়েছেন, তখন তিনি বেআব্রু হতে বাধ্য। ধূর্ত হিলারিও সেই সুযোগ সোমবারের বিতর্কতে নেন পুরোপুরি। বার বার তিনি দর্শকদের মনে করান মহিলাদের সম্পর্কে ট্রাম্পের সব পশুসুলভ বিশেষণ।
হিলারির শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে দেওয়া খোঁচার প্রত্যুত্তরও ট্রাম্প পান এদিন। হিলারি তাঁকে মনে করিয়ে দেন যে বিদেশসচিব হিসেবে তিনি যা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছেন, তা করার পর ট্রাম্প নয় তাঁকে বলতে আসুন 'স্ট্যামিনা'র ব্যাপারে।
পোড়খাওয়া হিলারির কাছে ট্রাম্পকে সামলানো 'বাঁয়ে হাত কা খেল'
আসলে ট্রাম্প-হিলারির এই দ্বৈরথ একটি ব্যাপার পরিষ্কার করে দেয়। হিলারির মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের কাছে ট্রাম্পের মতো 'শখের' রাজনীতিকরা নেহাতই শিশু। হিলারির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মিথ্যাচার ইত্যাদি নানা অভিযোগ আছে বটে, কিন্তু ট্রাম্পের পক্ষে সেসবকে কাজে লাগিয়ে হিলারিকে কোনঠাসা করা প্রায় অসম্ভব।
কারণ আর কিছুই নয় - রাজনীতি নামক শিল্পে হিলারির দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। শুধুমাত্র অভিযোগ করলেই যে রাজনৈতিক যুদ্ধ যেটা যায় না, সেটা ট্রাম্প হয়তো প্রথম বিতর্কসভায় বুঝেছেন হাড়ে হাড়ে। কারণ যুক্তি দিয়ে উনি কিছুই খাড়া করতে পারেননি তো বটেই, উল্টে তাঁরই অতীতে করা সব বিতর্কিত মন্তব্য তুলে এনে হিলারি তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। এতে শেষ অবধি বিতর্কের মান এমন কিছু উন্নত হয়নি, কিন্তু তাতে হিলারির কিছু এসে যায় না। বরং আগামী বিতর্কসভাগুলিতেও যে উনি এই একই অস্ত্র প্রয়োগ করবেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে, তা নিশ্চিত।
ট্রাম্পের আজ অবধি করা সমস্ত এলোমেলো কথাই এই নির্বাচনের শেষ লগ্নে হয়তো তাঁকে লক্ষভ্রষ্ট করবে। সেদিক দিয়ে এই নির্বাচনের উপসংহার হয়তো ম্যাড়মেড়েই হবে। কিন্তু হিলারি যদি জিতে যান, তবে বলতেই হবে যে রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের হারানো মুখের কথা নয়।