বামেরা দুম করে বনধ ডাকলেন কোন যুক্তিতে?
প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে যে ইস্যুগুলিতে লড়াই করা দরকার, তার থেকে সহস্র যোজন দূরে দেশের বামেরা। সদিচ্ছাটাই আসল আর সেটাই তাঁদের নেই।
এদেশের রাজনীতিতে বামেদের ক্রমাগত কোনঠাসা হয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে শোনা যায় তাঁদের নাকি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। তা প্রাসঙ্গিকতা কি ফিরে আসে দেবতার অনুগ্রহে? তা ফিরিয়ে আনতে হয় নিজের চেষ্টায়। আর বামেদের বৃদ্ধতন্ত্রে সেটারই বড় অভাব।
নইলে যেখানে নোট বাতিল নিয়ে এমনিতেই সব ভেঙে পড়ার জোগাড়, সেখানে সোমবার (নভেম্বর ২৮) 'হরতাল' ঘোষণা করেন তাঁরা কোন বুদ্ধিতে? এইভাবে তাঁরা প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার আশা করেন?
ভারতের মতো দেশে বামেদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে একথা শুনলে ঘোড়াতেও হাসবে। যেখানে দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলি রাষ্ট্রব্যবস্থা দখল করে দিন দিন গরিব-গুর্বো এবং প্রান্তিক মানুষজনকে আরও কোনঠাসা করে ফেলছে, সেখানে বামেরা ইস্যুই খুঁজে পায় লড়াই করার? তাহলে তাঁরা কীসের সর্বহারার পার্টি? নাকি সব বুদ্ধি বিবেচনা হারিয়ে নিজেরাই সর্বহারা?
আসলে কোন পথে আর্থ-রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাওয়া যায়, তার জন্য যেমন বিবেচনা লাগে, তেমনি লাগে হাড়ের জোরও। বামেদের 'তরুণ তুর্কি'দের দেখলে তো মনে হয় মিডিয়ার স্টুডিও ছাড়া তাঁরা আর কোথাও কথা বলতেই জানেন না বা চান না। মুখে না স্বীকার করলেও জাতশত্রু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে শিখুন তাঁরা। কীভাবে লড়ে নিজের জমি বানাতে হয়।
এই যে নরেন্দ্র মোদী তাঁর ডিমনেটাইজেশন-এর আকস্মিক সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে বিরোধীদের হাতে এত বড় অস্ত্র তুলে দিলেন, তার কতটা সদ্ব্যবহার বামেরা করতে পারছে? তাঁদের প্রতিবাদ মানে সেই থোড় বড়ি খাড়া বনধ আর হরতাল যা আসলে আর কিছুই নয়, মমতাকেই আরও বেশি সুবিধে করে দিচ্ছে। শ্রীমতি বন্দ্যোপাধ্যায় যদি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও সারা দেশে দৌড়ে বেড়াতে পারেন কেন্দ্রের বিরোধিতা করতে, সকল দায়ভারশূন্য বামেরা তা পারছে না কেন? কারণ, তাঁদের ইচ্ছে বা দম কোনওটাই নেই।
এই দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো বনধটি ডেকে বামেরা নিজেদেরকে কিনতু মোদীর সঙ্গে একাসনে ফেললেন। তাঁরা হয়তো চাইছেন মমতা প্রশাসক হিসেবে এই বনধের বিরোধিতা করলে তাঁরা বলতে পারবেন যে মমতার মোদী-বিরোধিতা আসলে দেখনদারি রাজনীতি। কিনতু মানুষ কি এতটাই বোকা?
দূরের প্যাঁচপয়জার না ভেবে আগে পরিশ্রম করে নিজেদের জায়গা তৈরি করুন মহান বামেরা। ইস্যুর কোনও অভাব নেই। গরিব মানুষের পাশে আজকেও কেউ নেই। কিনতু সদিচ্ছা থাকলে তবেই কী না উপায় হয়।