কাশ্মীরে নিহত হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির জঙ্গি হয়ে ওঠার কাহিনি
জম্মু, ৯ জুলাই : জম্মু ও কাশ্মীরে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি আবদুল বুরহান ওয়ানি। মাত্র ২১ বছর বয়সেই সে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে মস্ত আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল। গোটা কাশ্মীর জুড়েই সে জঙ্গি কার্যকলাপের জাল বিস্তৃত করার চেষ্টা করে চলেছিল। আর তাই তাকে খতম করে কিছুটা স্বস্তিতে উপত্যকার প্রশাসন। [কাশ্মীরে নিহত হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানি, উপত্যকা জুড়ে কার্ফু]
কিন্তু কে এই আবদুল বুরহান ওয়ানি? কেনই বা এত কম বয়সে সে জঙ্গি হিসাবে প্রশাসনের এত বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠল। কীভাবে এত কম বয়সে সে হিজবুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতা হয়ে উঠল, কীভাবেই বা এই যুবক সন্ত্রাসের রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল সেই কাহিনি ফিল্মি মনে হলেও পুরোপুরি বাস্তব। [উচ্চ শিক্ষিত ইয়াকুব মেমনের অপরাধী হয়ে ওঠার কাহিনি]
দক্ষিণ কাশ্মীরে এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্ম হয় বুরহানের। তার বাবা মুজফফর আহমেদ একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন। তার মা মাইমুনা মুজফফর বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন। তিনি এখন ত্রালের শরিফাবাদ এলাকায় বাচ্চাদের কোরানের পাঠ দেন। [ছোট রাজনের অপরাধ দুনিয়ায় পথ চলার কাহিনি!]
এমন এক পরিবারের সন্তান হলেও বুরহানের দাদারা একে একে জঙ্গিদের দলে ভিড়ে যান। দাদাদের সঙ্গ পেয়ে বুরহানের মনেও উগ্রপন্থার বীজ বুনতে শুরু হয়। পুলিশ ও সেনাদের হাতে বুরহানের তুতো দাদাদের বেশ কয়েকজন নিহত হলে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই পুলিশি অত্যাচারের বদলা নিতে সন্ত্রাসের রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে বুরহান ওয়ানি।
বুরহান ছোট থেকেই ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসত। হাসিখুশি স্বভাবের বুরহানের একমাত্র নেশা বলতে এটাই ছিল। তবে ধীরে ধীরে সেসব তুচ্ছ হয়ে গেল উগ্রপন্থার কাছে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে জঙ্গি দলে যোগ দেয় সে।
হিজবুল মুজাহিদিনে যোগ দিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সকলের নজরে পড়ে যায় সে। শিক্ষিত পরিবারের হওয়ায় স্যোশাল মিডিয়াকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা বুরহান জানত। ফেসবুক সহ বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে সে কাশ্মীরের যুবসমাজকে উগ্রপন্থার পথে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করে।
বুরহানের বয়স যখন ১৭, তখন প্রথমবার স্যোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে জঙ্গি বেশে হাতে রাইফেল নিজের ধরা ছবি পোস্ট করে সে। শুরু হয় কাশ্মীরি যুবকদের উগ্রপন্থায় যোগ দেওয়ানোর কাজ। পরে একটি ভিডিও পোস্ট করে বুরহান, সেখানে সরাসরি কাশ্মীরি যুবকদের জঙ্গি দলে যোগ দিতে আহ্বান জানায় সে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুরহান ওয়ানি স্যোশাল নেটওয়ার্কিংকে দারুণভাবে ব্যবহার করতে জানত। নবীন প্রজন্মের হওয়ায় সে জানত কীভাবে যুবকদের বিপথে নামিয়ে আনা যায়। বুরহান দারুণ বক্তাও ছিল। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্তত একশোর বেশি যুবক উগ্রপন্থায় নাম লিখিয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। আর সেজন্যই বুরহানের মাথার দাম দশ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল প্রশাসন। শেষপর্যন্ত পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হল এই হিজবুল জঙ্গির।