সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কী? কীভাবে এটি সম্পন্ন করে ভারতীয় সেনা? জেনে নিন
বুধবার রাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় সেনার চার ঘণ্টার অপারেশনে মোট ৭টি জঙ্গি ঘাঁটিকে গুড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। পোশাকি ভাষায় এই অপারেশনের নাম 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'। বুধবার মধ্যরাতে সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টে পর্যন্ত অপারেশন চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। [কীভাবে পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালাল ভারতীয় সেনা, জেনে নিন বিস্তারিত]
জঙ্গি ঘাঁটির পাশাপাশি বহু জঙ্গিকেও নিকেশ করা সম্ভব হয়েছে বলে এদিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিজিএমও রণবীর সিং জানিয়েছেন। তবে পাকিস্তান সেনার তরফে এই ধরনের হামলার খবর অস্বীকার করা হয়েছে। তবে তাতে কোনওভাবেই খাটো হচ্ছে না ভারতীয় সেনার কৃতিত্ব। কারণ সন্ত্রাসবাদীদের উপরে হামলার খবর স্বীকার করা মানে পাকিস্তানের মুখ ফের আন্তর্জাতিক আদালতে পুড়তে পারে। [ভারতের হামলা নিয়ে কী বললেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ!]
তবে কী এই সার্জিক্যাল অ্যাটাক বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক? কীভাবেই বা ভারতীয় সেনা রাতের অন্ধকারে জঙ্গি নিকেশ করতে এই ধরনের অপারেশন চালাল, জেনে নেওয়া যাক। [সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে 'সার্জিক্যাল অ্যাটাক' ভারতীয় সেনার]
'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' কী
'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' হল সেনাবাহিনীর লক্ষ্য স্থির করে আক্রমণের একটি ধরন। এর প্রধান লক্ষ্য হল নির্দিষ্ট জায়গায় আঘাত করে জঙ্গি নিকেশ করা। তবে পাশাপাশি যে জায়গায় আঘাত করা হচ্ছে, সেই জায়গা বাদে বাকী কোথাও যাতে তার আঁচ না পড়ে বা ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। [সীমান্ত পেরিয়ে সেনার জঙ্গি দমনের খবর আসতেই সেনসেক্সে ধস, সূচক নামল ৫০০ পয়েন্ট]
'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ক্ষমতা। অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে এই ধরনের অপারেশন চালায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা। বিশেষত জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তান সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশকে ভেস্তে দিতে এই ধরনের অপারেশন বিশেষ কার্যকরী।
ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে তারপর দেশের অন্যান্য জায়গাতেও নাশকতার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। ফলে এই ধরনের প্রত্যাঘাত করা ছাড়া উপায় ছিল না।
কীভাবে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' চালাল ভারতীয় সেনা
আকাশপথে সীমান্তের ওপারে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটিতে নেমে পড়ে সেনাবাহিনীর দল। আকাশপথে উড়ে গিয়ে তারপর একেরপর এক সেনা নেমে পড়ে জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দেয় সেনা।
এক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট বড় ভূমিকা পালন করেছে। এই ধরনের স্পেশাল অপারেশন যারা চালিয়েছেন তারা ইন্টেলিজেন্স বিভাগ, আইবি ও 'র' এর সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখেই করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সীমান্ত এলাকার দুপারেই ভারতীয় সেনা ও পাকিস্তান সেনা মোতায়েন রয়েছে। ফলে স্থলপথে দুর্গম এলাকায় না গিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে গিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে নেমে জঙ্গি ঘাঁটিতে হালা চালিয়ে সর্বোচ্চ আঘাত হেনেছে ভারতীয় সেনা।
এই ধরনের অপারেশন অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। অত্যন্ত নিপুণভাবে এই ধরনের অপারেশনের আগে পরিকল্পনা করতে হয়। শুধু তাতে কাজ শেষ হয় না। যতক্ষণ না কাজ শেষ হয়, ততক্ষণ সবদিক থেকে এবং সর্বস্তরে যোগাযোগ রেখে যেতে হয়।
কারা এই ধরনের অপারেশনে পারদর্শী
ভারতীয় সেনার প্যারাশ্যুট রেজিমেন্টের প্রশিক্ষিত প্যারা-কম্যান্ডোরা এই ধরনের অপারেশনে বিশেষ পারদর্শী। ভারতীয় নৌবাহিনী ও এয়াফোর্সেও এই ধরনের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জওয়ান রয়েছে।
পাকিস্তান সরকার বেশ কয়েকদিন ধরেই পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ভারতকে হুঁশিয়ার করছে। ভারত হামলা চালালে পাকিস্তানও যে তৈরি তা বলেছেন সেদেশের অনেকেই। ফলে হামলার বদলে এই ধরনের অপারেশন চালিয়ে ফের একবার পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে বাজিমাত করল ভারত, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।